স্কুলছুটদের বাড়িতে গিয়ে বোঝাচ্ছেন শিক্ষকেরা। নিজস্ব চিত্র
স্কুলের ক্লাসঘর ছেড়ে গ্রামে ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে ঘুরছেন শিক্ষকেরা। উদ্দেশ্য— মোবাইলে গেম খেলার আসক্তিতে স্কুল বিমুখ পড়ুয়াদের শ্রেণিকক্ষে ফেরানো। তবে শিক্ষকদের আসার আগাম খবর পেয়েই কোথাও বাড়ি থেকে বেপাত্তা হচ্ছে পড়ুয়ারা। আবার কেন তাদের বাড়িতে যাওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্নে ভুয়ো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে শিক্ষকদের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
এগরা কেউটগেড়িয়া বিদ্যাসাগর হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৪৮০ জন। স্কুল সূত্রের খবর, দুর্গা পুজোর ছুটির পর থেকেই স্কুলের একাংশ ছাত্রছাত্রী উপস্থিতি অনিয়মিত হয়ে পড়ে। অনেক ছাত্র গত একমাসে একবারও স্কুলমুখো হয়নি। অষ্টম থেকে একাদশ শ্রেণির ছাত্রদের উপস্থিত উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা নবম শ্রেণির। এই স্কুলে নবম শ্রেণিতে ৬০ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করে। দুর্গাপুজোর ছুটির পরে ১২ থেকে ১৩ জন ছাত্র উপস্থিতি অনিয়মিত হয়েছে। এদের মধ্যে আবার জনাপাঁচেক ছাত্র সম্পূর্ণ স্কুলছুট হয়েছে।
কেন পড়ুয়ারা স্কুলে আসছে না, তা খুঁজতে গিয়ে শিক্ষকেরা দেখেন, অধিকাংশ অনুপস্থিত ছাত্ররা মোবাইলে আসক্ত হয়েছে। গেম খেলার নেশায় স্কুল বিমুখ হয়েছে তারা। এই সব ছাত্রদের পারিবারিক আর্থিক অবস্থা খুব ভাল নয়। তবুও অনেকে অন্যের কাছে টাকা ধার নিয়ে স্মার্ট ফোন কিনেছে। কেউ দিনমজুরি করে পুরনো স্মার্ট ফোন কিনেছে। স্কুলে ফোন আনা নিষিদ্ধ থাকায় তারা স্কুলে না গিয়ে দোকানে, মাঠে বা কোনও বন্ধুর বাড়িতে বসে অনলাইনে গেম খেলে বলে অভিযোগ।
এই সব ছাত্রদের স্কুলে ফেরাতে কেউটগেড়িয়া বিদ্যাসাগর হাই স্কুলের শিক্ষকেরা পরিকল্পনা করেন। তাঁদের পরিকল্পনা মতো, শিক্ষকদেরা একাধিক দল ভাগ হয়ে ওই সব ছাত্রদের বাড়ি যাচ্ছে। অভিভাবকদের বোঝানোর চেষ্টা করছে। যদিও শিক্ষকদের আসার আগাম খবর পেয়েই অনেক ছাত্র পালিয়ে যাচ্ছে বাড়ি থেকে। স্কুলের একাংশ শিক্ষক জানাচ্ছেন, তাঁরা কেন বাড়িতে আসবেন, সেই প্রশ্নে ছাত্ররা রেগে যাচ্ছে। অভিযোগ, একাংশ শিক্ষক ভুয়ো ফেসবুক অ্যাকাউন্ড থেকে এ নিয়ে হুমকিও পেয়েছেন। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জয়দেব মাইতি বলছেন, ‘‘পুজোর পরে স্কুলে বেশ কয়েকজন ছাত্রের উপস্থিত অনিয়মিত হয়ে পড়ে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মোবাইলে গেমে আসক্তি থেকে স্কুলে আসছে না। এই ছাত্ররা অভিভাবকদের কথাও শুনেছে না। স্কুলছুট ছাত্রদের ফেরাতে বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদের বোঝানো হচ্ছে। এই কর্মসূচি লাগাতার চলবে।’’
শিক্ষকদের ভূমিকায় খুশি অভিভাবকেরা। এক অভিভাবক বলছেন, ‘‘মোবাইলে গেম খেলার জন্য বাড়িতে টাকা চুরি করে। দুষ্টু ছেলেদের সঙ্গে মেলামেশা করছে। কিছু বললে ছেলে কথা শোনে না। শিক্ষকেরা বাড়ি আসায় আমরা খুশি হয়েছি। ছেলেরা আবার যাতে পড়াশুনা করে সেই আশা করছি।’’