Nandigram

শুভেন্দুর সঙ্গে একই মঞ্চে অশোক! প্রাক্তন সিপিএম নেতা কি বিজেপিতে আসছেন? জবাব দিলেন অধিকারী

প্রশ্ন উঠছে, নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের সময়ে শুভেন্দু অধিকারী যাঁদের ‘হার্মাদ নেতা’ বলতেন, তাঁদের জন্য কি দরজা খুলে দিচ্ছে গেরুয়া শিবির? লোকসভা ভোটের আগে নতুন সমীকরণ?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:৪৮
Row over Former CPM Leader Ashok Guria sharing stage with BJP MLA Suvendu Adhikari in Nandigram

পাশাপাশি। এক মঞ্চে শুভেন্দু অধিকারী এবং অশোক গুড়িয়া। —ফাইল চিত্র।

নন্দীগ্রামের প্রাক্তন সিপিএম নেতা অশোক গুড়িয়ার সঙ্গে এক মঞ্চে বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। সিপিএম নেতার সঙ্গে করমর্দনও করলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে বললেন, ‘‘উনি সজ্জন মানুষ।’’ মঙ্গলবার রেয়াপাড়ায় নেতাজি জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে মঞ্চে দুই নেতার এই ‘সৌজন্য বিনিময়’ রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল উস্কে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের সময়ে শুভেন্দু যাঁদের ‘হার্মাদ নেতা’ বলতেন, তাঁদের জন্য কি দরজা খুলে দিচ্ছে গেরুয়া শিবির? ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে কি নতুন ‘সমীকরণ’ দেখবে নন্দীগ্রাম?

Advertisement

তৃণমূলকে হারাতে সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা যেন বিজেপিকে ভোট দেন— এই আহ্বান সেই ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই করছেন শুভেন্দু। এখন ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে সিপিএম নেতা-নেত্রীদের দলে নেওয়ার বার্তা দিচ্ছেন বিজেপি বিধায়ক। সেই ‘দরজা’ দিয়েই কি এ বার অশোকের মতো এক সময়ের ‘গোঁড়া’ সিপিএম নেতাকে বিজেপির দিকে টানছেন শুভেন্দু? সেই প্রশ্নই ঘুরছে নন্দীগ্রামের আনাচকানাচে।

নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ায় নেতাজি জন্মজয়ন্তীর যে আয়োজন হয়েছিল, যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন শুভেন্দু। সেই মঞ্চেই অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে জন্মজয়ন্তী উদ্‌যাপনের তদ্বির করতে দেখা যায় প্রাক্তন সিপিএম নেতা অশোককে। শুভেন্দু তাঁর বক্তব্যের শেষে অশোকের সঙ্গে হাত মেলান। নিচু স্বরে দু’জন বেশ কিছু ক্ষণ কথা বলেন। তার পরেই শুরু হয়েছে জল্পনা। বস্তুত, ২০০৭ সালে জমি আন্দোলনের সময় নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের সিপিএম সম্পাদক অশোকদের প্রায়শই ‘হার্মাদ বাহিনীর নেতা’ বলে কটাক্ষ করতেন তৎকালীন তৃণমূল নেতা শুভেন্দু। সেই ‘বাহিনী’র বিরুদ্ধে লড়াই করেই রাজনৈতিক মঞ্চে উত্থান শুভেন্দুর। বস্তুত, নন্দীগ্রামের চক্রবেড়িয়া, সোনাচূড়া হয়ে যে পিচ রাস্তাটা ভাঙাবেড়া সেতুতে গিয়ে উঠেছে, সেই পথটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হাত ধরে তুলে নিয়ে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর তখ্‌তে। রাতারাতি নোটিস লটকে সাধারণ মানুষের জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল নন্দীগ্রাম। সেই সংগ্রামই কার্যত সিপিএমকে নিশ্চিহ্ন করেছে নন্দীগ্রামে। আর শুভেন্দুকেও নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

অন্য দিকে, ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলন পর্বে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ছয় সমর্থক নিখোঁজ মামলায় প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ, অমিয় সাহুর সঙ্গে অশোকও গ্রেফতার হয়েছিলেন ২০১২ সাল। পরে হাই কোর্টের নির্দেশে শর্তসাপেক্ষে জামিন পান। এক সময়ে দাপুটে নেতা অশোকের সঙ্গে এখন সিপিএমের সম্পর্ক নেই। এখন শুভেন্দু এবং অশোকের একই মঞ্চে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে জমি আন্দোলনের নেতা শেখ সুফিয়ানের কটাক্ষ, “একই মুখে দুই কথা বলেন শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামের কলঙ্কিত অধ্যায়ের সিপিএম নেতা অশোক গুড়িয়ার গায়ে নিরীহ জমি আন্দোলনকারীদের রক্ত লেগে রয়েছে। এই মানুষদের কোনও দিন নন্দীগ্রাম মেনে নেবে না। সেই অশোক গুড়িয়াদের সঙ্গে সখ্য করে শুভেন্দু আদতে নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।” সুফিয়ানের মতে, রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে প্রাক্তন তৃণমূল নেতা (মন্ত্রীও) শুভেন্দু তাঁর প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে যতই বিষোদ্গার করুন, মানুষ তা শুনবে না। তিনি বলেন, ‘‘নন্দীগ্রাম আন্দোলনকে হাতিয়ার করে রাজনীতির মঞ্চে ওর উত্থান। এখন সেই কলঙ্কিত সিপিএম নেতাদের সঙ্গেই এক মঞ্চে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে নন্দীগ্রামবাসীকে চূড়ান্ত অসম্মান করছেন (শুভেন্দু)।’’

শুভেন্দুর নিজের কথায়, ‘‘আজ একটি অরাজনৈতিক মঞ্চে অশোক গুড়িয়ার সঙ্গে দেখা হল। উনি এক জন সজ্জন লোক। আমি সম্মান করি।’’ প্রাক্তন সিপিএম নেতাদের মতো অশোকও কি বিজেপিতে আসছেন? শুভেন্দুর ঘুরিয়ে জবাব, ‘‘উনি এলাকায় ভাল মানুষ হিসাবে পরিচিত। তবে ওঁর বিরুদ্ধে নন্দীগ্রামকাণ্ডে অনেক অভিযোগ রয়েছে।’’ শেষমেশ তিনি বলেন, ‘‘প্রাক্তন সিপিএম নেতা সুরপতি দেবনাথের জন্য আমাদের দরজা খোলা থাকলেও অশোক গুড়িয়াকে কখনও বিজেপিতে নেওয়া হবে না।’’ অন্য দিকে, অশোক এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

আরও পড়ুন
Advertisement