Kurumi Community

জাতিসত্তার দাবিতে কুড়মিরা এ বার হাই কোর্টে

জাতিসত্তার দাবিতে কুড়মিদের দীর্ঘ অবরোধ-আন্দোলন চলেছে। এই দাবি সামনে রেখে তাঁরা ভোটেও লড়েছেন।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪ ০৮:৪৫
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কুড়মিদের জাতিসত্তার দাবি এ বার গড়াল আদালতে। কুড়মি সম্প্রদায়কে জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবিতে মামলা হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে। আদিবাসী নেগাচারী কুড়মি সমাজের মহামোড়ল অনুপ মাহাতোর আবেদনের (রিট পিটিশন) শুনানি করে বুধবার বিচারপতি শম্পা সরকার রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে ছ’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। আর আবেদনকারী অনুপকে দু’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা পেশ করতে বলেছে আদালত।

Advertisement

জাতিসত্তার দাবিতে কুড়মিদের দীর্ঘ অবরোধ-আন্দোলন চলেছে। এই দাবি সামনে রেখে তাঁরা ভোটেও লড়েছেন। অনুপ বলেন, ‘‘জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবিতে বহু আন্দোলন করেছি। ভোটেও প্রার্থী দিয়েছিলাম। পরাধীন ভারতে কুড়মিরা জনজাতি ছিল, সেই তথ্যপ্রমাণ দাখিল করে এ বার হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি। গণ আন্দোলনও চলবে।’’

অনুপের দুই আইনজীবী অখিলেশ শ্রীবাস্তব এবং আকাশ শর্মা কুড়মিদের জনজাতি হওয়ার নানা তথ্য প্রমাণ উল্লেখ করে বুধবার আদালতে জানান, ১৮৬৫ সালে পরাধীন ভারতে ইংরেজদের প্রবর্তিত ভারতীয় উত্তরাধিকার আইনের বিরোধিতা করেছিলেন ছোটনাগপুরের সব জনজাতিরা। ১৯১৩ সালের ৩মে (নোটিফিকেশন নং ৫৫০) ভারতীয় উত্তরাধিকার আইনের আওতা থেকে জনজাতিদের বাদ দেওয়া হয়। তার মধ্যে কুড়মিরাও ছিলেন। ১৯২৫ সালে নতুন করে সংশোধিত ভারতীয় উত্তরাধিকার আইন প্রবর্তন করা হয়। ১৯৩১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ফের বিজ্ঞপ্তি জারি করে (নোটিফিকেশন: ৩৫৬৩-জে) জনজাতিরা ওই আইনের আওতায় নেই বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়।

সওয়ালে আরও জানানো হয়, ভারতীয় সংবিধানের ৩৪২ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপালের সঙ্গে পরামর্শ করে কোনও সম্প্রদায়কে নোটিফিকেশন দ্বারা জনজাতি ঘোষণা করতে পারেন। তবে রাষ্ট্রপতি কোনও সম্প্রদায়কে জনজাতি তালিকা থেকে বাদ দিতে পারেন না। একমাত্র সংসদে আইন করে কোনও সম্প্রদায়কে জনজাতি তালিকায় ঢোকানো বা বাদ দেওয়া যায়। স্বাধীন দেশে ১৯৫০ সালের ১০ অগস্ট প্রকাশিত জনজাতি তালিকায় অবশ্য কুড়মিদের রাখা হয়নি। কুড়মিদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে সংসদে আইনও পাশ করানো হয়নি বলে অভিযোগ করেন আইনজীবীরা। অখিলেশ বলেন, ‘‘কুড়মিরা ৭০ বছর ধরে সরকারের কাছে জানতে চাইছেন, কেন তাঁদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ সরকার নীরব। এই সংক্রান্ত এক চিকিৎসকের রিট পিটিশন গ্রহণ করেছে ঝাড়খণ্ড হাই কোর্টও। তবে দু’টি পিটিশনের মধ্যে তফাত হল, ঝাড়খণ্ড সরকার এর বিরোধিতা করছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার করছে না।’’

প্রিয়া প্রমোদ গজবে বনাম মহারাষ্ট্র সরকারের একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় উল্লেখ করে বাদীপক্ষের আইনজীবীরা কলকাতা হাই কোর্টকে জানান, সুপ্রিম কোর্টের আদেশে রয়েছে, যদি সংবিধান তৈরির আগে কোনও জাতি সনদ থাকে তবে তার প্রমাণমূল্য রয়েছে। অখিলেশ বলেন, ‘‘এ সম্পর্কিত ইংরেজ সরকারের দু’টি নোটিফিকেশন আমাদের কাছে রয়েছে। হাই কোর্টের কাছে আবেদন করেছি, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালের কোন পরামর্শে কুড়মিদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল সেই নথি প্রকাশ করা হোক। ভুল শুধরে কুড়মিদের জনজাতি তালিকায় অন্তর্ভুক্তির আবেদনও করা হয়েছে।’’ ছ'সপ্তাহ পরে ফের শুনানি হবে।

আরও পড়ুন
Advertisement