—প্রতীকী চিত্র।
মানিকপাড়া পঞ্চায়েতে স্বজনপোষণ ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিডিও-র কাছে নালিশ জানালেন বিরোধী সদস্যরা। অভিযোগ, বিরোধীরা যে এলাকা থেকে নির্বাচিত সেখানে সে ভাবে কোনও উন্নয়নমূলক প্রকল্প করা হচ্ছে না। নিয়ম মতো টেন্ডার ছাড়াই কেনা হচ্ছে কম্পিউটার, প্রিন্টারের মতো নানা সামগ্রী। প্রধান অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও।
২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষের যে কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তাতে বিরোধী সদস্যদের এলাকায় সে ভাবে উন্নয়নের শিকে ছেঁড়েনি বলে অভিযোগ। গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট সদস্য ১৯ জন। এর মধ্যে তৃণমূলের ১২ জন এবং বিজেপি ও নির্দল মিলিয়ে ৭ জন। অভিযোগ, কর্মপরিকল্পনায় শাসকদলের এলাকাগুলিতে একাধিক কাজের উল্লেখ থাকলেও বিরোধী সদস্যদের এলাকায় কার্যত তেমন কাজের উল্লেখই নেই। জয়পুর বুথ থেকে বিজেপি জিতেছে। ওই এলাকায় হয়ে যাওয়া একটি পুরনো কাজকে ফের কর্মপরিকল্পনায় নতুন ভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ। আবার নির্দল পঞ্চায়েত সদস্যের ঠাকুরথান এলাকায় নতুন কোনও প্রকল্প রূপায়ণের উল্লেখই নেই। গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য তথা বিরোধী দলনেতা চন্দন পাত্র বলছেন, ‘‘শাসকদলের সদস্যদের বুথে চার থেকে ছ’টি কাজের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিরোধী সদস্যের বুথে একটি অথবা কোথাও পুরনো কাজকে নতুন কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, নতুবা কাজই দেওয়া হয়নি।’’
বেছে বেছে বিরোধীদের এলাকায় উন্নয়ন না করাকে স্বজনপোষণ বলে উল্লেখ করে সুরাহা চেয়েছেন চন্দন। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, নিয়ম ভেঙে টেন্ডার না করেই পঞ্চায়েতে ব্যবহৃত নানা সামগ্রী কেনা হচ্ছে। নিয়ম হল, এক লাখ টাকার কমে কোনও কাজ করাতে হলে কিংবা কিছু কিনতে হলে ‘বক্স টেন্ডার’ করতেই হবে। কিন্তু চন্দনদের অভিযোগ, নিয়মের তোয়াক্কা না করে কখনও ৮৩,৬৪৫ টাকা দিয়ে প্রধানের ব্যবহারের জন্য ল্যাপটপ কেনা হয়েছে। আবার কখনও কেনা হয়েছে প্রিন্টার। চন্দনের অভিযোগ, বক্স টেন্ডার তো করা হয়নি বরং একজনের কাছ থেকে বারবার সংগ্রহ করা হচ্ছে বিভিন্ন সামগ্রী। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে অনিয়মের পাশাপাশি স্বজনপোষণও হয়েছে বলে অভিযোগ। বিরোধী দলনেতা চন্দনের কথায়, ‘‘পঞ্চায়েতের জরুরি সামগ্রী ক্রয় ও উন্নয়নের নামে টাকা নয়ছয় ও আত্মসাৎ হচ্ছে। আমরা স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় আমাদের গ্রাম সংসদ এলাকায় উন্নয়ন করা হচ্ছে না। প্রশাসনিক মহলে অভিযোগ করেছি।’’
মানিকপাড়ার প্রধান শত্রুঘ্ন মাহাতো বিরোধীদের অভিযোগ নস্যাৎ করে জানিয়েছেন, স্বচ্ছভাবেই কাজ হচ্ছে। কোথাও কোনও অনিয়ম হয়নি। অন্যদিকে পঞ্চায়েতের নির্বাহী সহায়ক কবির মুন্সি বলছেন, ‘‘প্রধানের কাজের জন্য ল্যাপটপ কেনা হয়েছিল। এ বিষয়ে জেলাশাসকের দফতর থেকে অডিটও করানো হয়। অডিটে কোনও গরমিল ধরা পড়েনি। তারপর থেকে ই-টেন্ডার হয়নি এমন নজির নেই।’’ কবির জানাচ্ছেন, মানিকপাড়া এলাকায় ১৯টি গ্রাম সংসদ। ফলে বরাদ্দ অনুযায়ী পরিকল্পনা হয়েছে। তাই ইচ্ছে থাকলেও অনেক কাজই পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। ঝাড়গ্রামের বিডিও জয় আমেদ বলছেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।’’
গত বছর তৃণমূলের ক্ষমতাসীন নতুন পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনের পর বার বার বিতর্কে জড়িয়েছেন মানিকপাড়া পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। কখনও হাতে লেখা জন্মের শংসাপত্র দিয়ে পরে ভুল স্বীকার করেছেন প্রধান। আবার রাস্তার কাজ করিয়ে বরাতপ্রাপ্ত সংস্থাকে বাউন্স চেক দেওয়ার পর ভুল স্বীকার করার মত নানা ঘটনায় পঞ্চায়েতের কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রাম পঞ্চায়েতে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠী। তবে প্রধান শত্রুঘ্ন মাহাতোর গোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ।
শক্তিশালী বিরোধীই গণতন্ত্রের ভিত্তি। পঞ্চায়েত স্তরে এমন লাগাতার বিরোধিতা বিজেপি অন্য কোথাও পারছে না কেন? প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরে। অনেকের মতে, প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে চন্দন সুবাসিত হচ্ছেন। মানিকপাড়ার আসল হীরামানিকরা রয়েছেন শ্রাবণ-মেঘের আড়ালে।