Netai Martyr's Rally

ক্ষোভের নেতাইয়ে শহিদ সভার ঠাঁই বদল

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি সিপিএমের শিবির থেকে চালানো গুলিতে চার মহিলা-সহ ৯ গ্রামবাসীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। মৃতের পরিবারের সদস্যদের চাকরি হলেও জখমদের অধিকাংশের চাকরি হয়নি।

Advertisement
কিংশুক গুপ্ত
নেতাই শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫৯
এই প্রথম নেতাই দিবসে সভামঞ্চ হচ্ছে শহিদ বেদির উল্টো দিকে।

এই প্রথম নেতাই দিবসে সভামঞ্চ হচ্ছে শহিদ বেদির উল্টো দিকে। নিজস্ব চিত্র।

‘‘গুলির ক্ষত সেরেছে। কিন্তু মনের ক্ষত সারেনি। বড় মেয়েটার চাকরির ব্যবস্থা তো তেনারা করে দিলেন না।’’

Advertisement

শনিবার পড়ন্ত বিকেলে নেতাই গ্রামের বাগানপাড়ায় বাঁ কাঁধের ক্ষত দেখিয়ে আক্ষেপ করলেন আভারানি মণ্ডল। নেতাইয়ে গুলিতে জখম ২৮ জনের অন্যতম আভারানি। গুলিতে জখম বন্দনা মণ্ডলেরও ক্ষোভ, ‘‘৭ জানুয়ারি এলে আমাদের কথা মনে পড়ে। ছেলেটা গুজরাতে হাড়ভাঙা দিনমজুরি কাজ করে। ছেলেটার চাকরি হলে পরিবারটা বেঁচে যেত।’’ তৃণমূলের নেতা, জনপ্রতিনিধিদের প্রতিই ক্ষোভ তাঁদের।

আর কয়েক মাস পর লোকসভা নির্বাচন। তার আগে এই প্রথম নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটি আয়োজিত স্মরণসভার স্থানও বদলাতে হয়েছে। গত বছর পর্যন্ত শহিদবেদির পাশে স্মরণসভা হত। এ বার উল্টোদিকে মঞ্চ বাঁধা হয়েছে। নেতাই বটতলা চকের চা দোকানে স্থানীয়দের আলোচনায় শোনা গেল, এতদিন যাঁর জায়গায় সভামঞ্চ হত এ বার তিনি অনুমতি দেননি। ওই পরিবারটি এখন বিজেপি করছে। নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির সম্পাদক তথা লালগড় ব্লক তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জয় রায় বলছেন, ‘‘আমরা কোনও অশান্তি চাই না। সুষ্ঠুভাবে সভা করতে মঞ্চের মুখোমুখি সভাটি হচ্ছে। সেখানে অনেক লোক ধরবে।’’

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি সিপিএমের শিবির থেকে চালানো গুলিতে চার মহিলা-সহ ৯ গ্রামবাসীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। মৃতের পরিবারের সদস্যদের চাকরি হলেও জখমদের অধিকাংশের চাকরি হয়নি। এ দিকে, নেতাই-কাণ্ডে অভিযুক্ত জেলবন্দি ২০ জন সিপিএম নেতা-কর্মীর মধ্যে ১৫ জন জামিন পেয়েছেন। অভিযোগ, সাক্ষীদের তৃণমূলের উদ্যোগে মেদিনীপুর আদালতে নিয়মিত সাক্ষ্য দিতে নিয়ে যাওয়া হয়নি। বন্দনা বললেন, ‘‘তেনারা গাড়ি করে মেদিনীপুরে নিয়ে যাবেন বলেছিলেন। এক দু’জনকে নিয়ে গিয়েছিল। আমি নিজের খরচে তিনবার গিয়েছি।’’

তবে তৃণমূলের ১৩ বছরে নেতাই গ্রামে পাকা রাস্তা, গ্রামের ভিতরে একাধিক ঢালাই পথ, কংসাবতীর পাড়ে ভাঙন রোধ, জল প্রকল্পে বাড়ি-বাড়ি পরিস্রুত পানীয় জলের ট্যাপ, কমিউনিটি হল, জুনিয়র হাইস্কুলটির হাইস্কুলে উন্নীত হয়েছে। তাও শহিদবেদি স্থলে সৌর পথবাতির উপরে ঝুলছে পদ্ম পতাকা। স্থানীয় বিজেপি কর্মী সঞ্জয় কোটাল বলছেন, ‘‘নেতাই-কাণ্ডের শহিদ পরিবার ও আহতদের জন্য যতটুকু যা করেছেন তিনি শুভেন্দু অধিকারী। সেই শুভেন্দুদাকে নেতাইয়ে ঢুকতে না দেওয়ার বিষয়টি ভালচোখে নেননি নেতাইবাসী।’’

২০২২ সালে পুলিশের বাধায় নেতাইয়ে ঢুকতে পারেননি বিরোধী দলনেতা। গত বছর নেতাই দিবসের ক’দিন পর এসে শহিদ পরিবার ও আহতদের সাহায্য করেন শুভেন্দু। আজ, রবিবার বিকেল ৫ টা থেকে সন্ধে ৬টার মধ্যে শুভেন্দুকে নেতাই যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। ঝাড়গ্রাম জেলা বিজেপির সভাপতি তুফান মাহাতোর আবেদনের শুনানি করে শুক্রবার হাই কোর্ট জানিয়েছে, শুধু শুভেন্দু, তুফান এবং শুভেন্দুর নিরাপত্তারক্ষীরা নেতাইয়ে যেতে পারবেন। তবে শুভেন্দু সভা করতে পারবেন না। কেবল শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন।

শুভেন্দু আসবেন কি না খোলসা করেনি গেরুয়া শিবির। জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু শুধু বলেন, ‘‘হাই কোর্ট শুভেন্দুদাকে রবিবার বিকেলে নেতাই যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে।’’ মন্ত্রী বিরবাহা বিরবাহা হাঁসদার কটাক্ষ, ‘‘যাঁর কোনও গুরুত্ব নেই, তাঁর সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোড়া থেকেই নেতাইবাসীর পাশে আছেন। যে ক’জন জখম পরিবারের চাকরি বাকি আছে সেটা দেখা হচ্ছে।’’ আজ, নেতাই দিবসে সকাল থেকেই তৃণমূলের সভা শুরু হবে। আসছেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্য তৃণমূলের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার। জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি প্রসূন ষড়ঙ্গী বলছেন, ‘‘মানুষের যতটুকু ব্যথা-বেদনা রয়েছে সেটা নিরসনের জন্য দলের সর্বোচ্চ স্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement