Mamata Banerjee Meeting with Minorities

মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে কেউ খুশি, কেউ বা ক্ষুব্ধ

কুড়মিদের মূল দাবি, তাদের জনজাতি তালিকাভুক্তির স্বপক্ষে রাজ্যকে পুনরায় কমেন্টস ও জাস্টিফিকেশন-সহ সিআরআই রিপোর্ট কেন্দ্রে পাঠাতে হবে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:০৪
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। —ফাইল চিত্র।

কথা মতোই বৃহস্পতিবার বিকেলে নবান্নের সভাঘরে জঙ্গলমহলের চার জেলার (পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর) কুড়মি ও জনজাতি সামাজিক সংগঠনগুলির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন মুখ্যসচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকা ও অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি সঞ্জয় বনশল। সরকারি কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদের প্রতিনিধিরাও হাজির ছিলেন।

Advertisement

কুড়মিদের মূল দাবি, তাদের জনজাতি তালিকাভুক্তির স্বপক্ষে রাজ্যকে পুনরায় কমেন্টস ও জাস্টিফিকেশন-সহ সিআরআই রিপোর্ট কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এ বিষয়ে রাজ্য পদক্ষেপ করছে। একই সঙ্গে স্মরণ করিয়েছেন, কুড়মালিকে রাজ্য ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদ হয়েছে, করম পরবে পূর্ণ ছুটি দিয়েছে রাজ্য। কুড়মি উন্নয়ন পর্ষদে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দের কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী।

বৈঠকের পর কুড়মি সমাজের (পশ্চিমবঙ্গ) সভাপতি রাজেশ মাহাতো বলেন, ‘‘আলোচনা ভাল হয়েছে।’’ বৈঠকে যাননি আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা (মুখ্য উপদেষ্টা) অজিতপ্রসাদ মাহাতো। তবে তাঁর সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সুজিত মাহাতো ও রাজ্য সভাপতি যুধিষ্ঠির মাহাতোর নেতৃত্বে পাঁচ প্রতিনিধি গিয়েছিলেন। সুজিত বলেন, ‘‘চিঠি দিয়ে না ডাকার প্রতিবাদ বৈঠকের শুরুতেই জানিয়েছি। আর জাতিসত্তার আন্দোলন প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই দাবির সমর্থনে তিনি আগেই কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করেছেন।’’ জমির পড়চায় অতীতে জাতির উল্লেখ থাকলেও বর্তমানে তা তুলে দেওয়া হয়েছে, এই বিষয়টিও জানানো হয়। এতে ওবিসি শংসাপত্র পেতে সুবিধা হত।

এ দিকে, অজিতপ্রসাদের মন্তব্য, ‘‘ভোটের আগে তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকে মুখ্যমন্ত্রী কি কুড়মিদের মন পাওয়ার চেষ্টা করছেন? এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী অনেক কথা দিয়েছেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।’’৮ ও ৯ মার্চ পুরুলিয়ার হুলহুলি টাঁইড়ে বৈঠকের পর ১০ মার্চ সমাবেশ থেকে অজিতরা সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। সেই কর্মসূচিতে হাজির থাকতে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণও জানানো হয়।

আদিবাসী নেগাচারী কুড়মি সমাজের মহামোড়ল অনুপ মাহাতোও বলেন, ‘‘বৈঠকের সদর্থক দিক নিয়ে এখন কিছু বলছি না। সংগঠনের রাজ্য কমিটির সভা ডেকে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেব।’’ তবে তিনি জানিয়েছেন, দাবি নিয়ে বিরোধী দলনেতার সঙ্গেও তাঁরা বৈঠক করতে প্রস্তুত। চিঠি না পাঠিয়ে জেলা পুলিশ মারফত ডাকায় বৈঠকে যায়নি আদিবাসী জনজাতি কুড়মি সমাজ। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শিবাজী মাহাতো বলেন, ‘‘ঠিক ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর আমাদের কথা মনে পড়ে!’’

বিভিন্ন জনজাতি সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। ছিলেন মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাও। বৈঠকের পর ভারতীয় ভূমিজ সমাজের নেতা নিত্যলাল সিং বলছেন, ‘‘পৃথক ভূমিজ উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের দাবি মুখ্যমন্ত্রী মেনে নিয়েছেন। নতুন ওই পর্ষদকে দু’কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে বলে জানিয়েছেন।’’ লোধা-শবর সংগঠনের তরফে জানানো হয়, ২০২২ সালে পশ্চিমবঙ্গ লোধা-শবর উন্নয়ন পর্ষদ গঠিত হলেও মাত্র এক কোটি টাকা মিলেছে। পর্ষদের স্থায়ী ঠিকানা নেই। গুপ্তমণি মন্দির সংস্কারও হয়নি। ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের (বাদল কিস্কু গোষ্ঠী) ঝাড়গ্রাম জিলা পারগানা ঢাঙ্গা হাঁসদা বলেন, ‘‘সাঁওতালি শিক্ষা পর্ষদ গঠন, জাহের থানগুলির সংস্কারের জন্য বরাদ্দ, জাল জাতিগত শংসাপত্র বাতিল-সহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছি। উনি আশ্বাস দিয়েছেন। আদিবাসী পড়ুয়াদের স্টাইপেন্ড বাড়ানোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’’ তবে ভারত মুন্ডা সমাজের রাজ্য নেতা নবীনচন্দ্র সিং জানান, মুন্ডারি ভাষার স্বীকৃতি, বিরসা মুন্ডা অ্যাকাডেমিতে মুন্ডা প্রতিনিধি রাখা নিয়ে কোনও প্রতিশ্রুতি পাননি।

আরও পড়ুন
Advertisement