মৃত স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমীর পড়িয়া। —ফাইল চিত্র।
রাতে দোকান বন্ধ করে ফেরার পথে প্রায়শই পাশের চায়ের দোকান থেকে এক কাপ চা খেতেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমীর পড়িয়া। সেই সময় অন্যান্য দোকানদারের সঙ্গে খানিক গল্প হত। তার পর জাতীয় সড়ক ধরে বাড়ি ফিরতেন ওই যুবক। সোমবার রাতেও সেই ‘রুটিনের’ অন্যথা হয়নি। কোলাঘাটের জিঞাদা বাজারের সমীরের দোকানের পাশের দোকানের মালিকরা জানাচ্ছেন, সোমবার খোশমেজাজে ছিলেন ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ী। কিন্তু তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই যে সমীরের রক্তাক্ত দেহ দেখতে হবে তাঁদের, তা আর কে ভাবতে পেরেছিলেন! সোমবার রাত ৯টা নাগাদ কোলাঘাটে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে মেলে সমীরের দেহ। অজ্ঞাত পরিচয় দুষ্কৃতীরা তাঁকে মাথায় গুলি করে। তার পর টাকা এবং গহনা নিয়ে চম্পট দেয়। সমীরের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ওঁর উপরে যে এমন প্রাণঘাতি হামলা হতে পারে, তার কোনও আন্দাজই ছিল না কারও কাছে।
সমীরের বন্ধুরা জানান, সোমবার রাত ৮টা নাগাদ জিঞাদা বাজারের চায়ের দোকানে অন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষণ সময় কাটান সমীর। এক কাপ চা-ও খান। খুব হাসিখুশিই ছিলেন ওই ব্যবসায়ী। সমীরের দোকানের ঠিক পাশে পীযূষকান্তি রায়ের দোকান। তাঁর কথায়, ‘‘জিঞাদা বাজারে দু’টি সোনার দোকান। একটি সমীরের এবং অন্যটি ওর এক কাকার। তবে সমীরের দোকানে খরিদ্দার বরাবরই বেশি। ভিড় লেগেই থাকত।’’ কেমন মানুষ ছিলেন ওই ব্যবসায়ী? পীযূষের জবাব, ‘‘বাজারের সবাই সমীরের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় সাহায্য পেয়ে এসেছে। গতকাল রাত ৮টা নাগাদ দোকান বন্ধ করার আগে আমরা পাশের একটি চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়েছি। সেখানে সমীর বেশ খোশ মেজাজেই ছিল। আর পাঁচটা দিনের মতোই ও দোকান বন্ধ করে বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছিল।’’
পড়শি দোকানদার জানান, সমীর বেরিয়ে যাওয়ার খানিক ক্ষণ বাদেই খবর আসে যে, তাঁর উপর হামলা হয়েছে। আগেও এক বার সমীরের দোকান লুট হয়েছে। এক বার তাঁর টাকার ব্যাগ দোকান থেকে তুলে নিয়ে পালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। তবে সেগুলি অনেক দিন আগের কথা। এই বিষয় নিয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বিশেষ কোনও হেলদোল ছিল না। পীযূষ বলেন, ‘‘দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাঁর কাছে চাবির গোছা এবং সামান্য টাকাপয়সা থাকত বলে জানতাম। কিন্তু তার জন্য এ ভাবে ওর উপর প্রাণঘাতী হামলা হতে পারে, তা কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি।’’
সমীরের স্ত্রী কৃষ্ণা পড়িয়াও বলেন, ‘‘প্রতি দিন ও রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টা নাগাদ বাড়ি ফিরত। ওর এমন কোনও শত্রু থাকতে পারে, তা আমরাও ভাবতে পারিনি। এ সব নিয়ে বাড়িতে কোনও দিন আলোচনাও করেনি।’’ কৃষ্ণার সংযোজন, ‘‘অভিযুক্তরা যাতে ধরা পড়ে, সেই দাবি জানিয়েছে পুলিশ এবং প্রশাসনের কাছে।’’
পুলিশ ইতিমধ্যে ওই বাজারের দোকানগুলোর সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা শুরু করেছে। ছিনতাই করতে গিয়ে ব্যবসায়ীকে খুন নাকি, ব্যবসায়িক শত্রুতা ছিল, তার তদন্ত চলছে।