Kolaghat Murder Case

দু’সপ্তাহে চার জায়গায় লুট, কোলাঘাটের খুনের পর আতঙ্কে পূর্ব মেদিনীপুরের সোনার ব্যবসায়ীরা

একের পর এক লুটপাট এবং খুনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন জেলার ব্যবসায়ী মহল। বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সদস্য প্রভাত নন্দী এই প্রসঙ্গে বলেন, “স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা দুষ্কৃতীদের টার্গেট হয়ে উঠছেন।”

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:৩২
Gold merchants is in fear after many incidents of loot in recent times in East Medinipur

কোলাঘাটের নিহত ব্যবসায়ী সমীর পড়িয়া। —নিজস্ব চিত্র।

কোলাঘাটের ঘটনার পর জেলার ব্যবসায়ী মহলে ক্রমেই বাড়ছে উদ্বেগ। ব্যবসায়ীদের বড় অংশের অভিযোগ, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে লাগাতার দুষ্কৃতীদের ‘সফ্‌ট টার্গেট’ হয়ে উঠছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীরা অধরা। মাত্র দু’সপ্তাহের মধ্যেই জেলায় দু’টি জায়গায় সোনার দোকানে লুটপাট এবং দু’টি জায়গায় দোকানদারের থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে সোমবার রাতে সব থেকে ভয়াবহ পরিণতির শিকার হয়েছেন কোলাঘাটের উত্তর জিয়াদার স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমীর পড়িয়া। প্রকাশ্য রাস্তায় দুষ্কৃতীরা তাঁর মাথায় গুলি চালিয়ে সর্বস্ব নিয়ে পালিয়ে যায়। অথচ অধিকাংশ ঘটনাতেই অভিযুক্তদের পাকড়াও করতে পারেনি পুলিশ। যা নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ী মহল।

Advertisement

প্রথম ঘটনাটি ঘটে গত ৪ নভেম্বর চণ্ডীপুরের দিবাকরপুর বাজারে শ্রীকৃষ্ণ কামিল্যা নামে এক ব্যবসায়ীর দোকানে। বেপরোয়া দুষ্কৃতীরা বাজারে পাহারারত দুই সিভিক ভলান্টিয়ারের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে এবং তাঁদের বেঁধে রেখে সোনার দোকানে ডাকাতি করে। দোকানের শাটার ভেঙে ভিতরে থাকা নগদ টাকা-সহ সোনা ও রুপোর গয়না নিয়ে চম্পট দেয় তারা। তবে ডাকাতদল দোকানের ভিতরে থাকা লকার ভাঙতে না পারায় বড়সড় আর্থিক বিপর্যয় থেকে কোনও মতে রক্ষা পান ওই ব্যবসায়ী।

যদিও এতটা সৌভাগ্য ছিল না নন্দীগ্রামের শ্রীপুর বড়বাঁধ এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিনয় গিরির। গত ১৮ নভেম্বর তাঁর দোকানে ভয়াবহ চুরির ঘটনা ঘটে। গ্রিল কেটে এবং তালা ভেঙে দোকানের ভিতরে থাকা প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা মূল্যের গয়না নিয়ে দুষ্কৃতীরা গা ঢাকা দেয়। এই দোকানে সিসি ক্যামেরা থাকলেও দুষ্কৃতীরা সেটি আগেই পলিথিন দিয়ে মুড়ে দেয়। সেই সঙ্গে যাওয়ার আগে সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্কটিকেও নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনার প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভও দেখান। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও চুরির ঘটনার এখনও কোনও কিনারা হয়নি।

আরও একটি ঘটনা প্রকাশ্যে আসে গত ১২ নভেম্বর কালীপুজোর দিন পাঁশকুড়া থানার যশোড়ায়। সে দিন গয়না ডেলিভারি দিয়ে ফেরার পথে স্বর্ণকার মিলন দণ্ডপাটের ব্যাগে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা ছিল। প্রকাশ্যে দিনের আলোয় ভিড় বাসের মধ্যে থেকেই তাঁর টাকার ব্যাগ ছিনতাই করে পালায় দুষ্কৃতীরা। তবে মিলন তাঁর টাকা উদ্ধারে বাসের জানলা গলে লাফ দিয়ে এক জন দুষ্কৃতীকে হাতেনাতে পাকড়াও করে পাঁশকুড়া থানার পুলিশের হাতে তুলে দেন। পরে ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মেদিনীপুরের কেরাণীটোলার একটি হোটেল থেকে পাঁচ জন দুষ্কৃতীকে পাকড়াও করে পুলিশ। এখনও পর্যন্ত তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে মাত্র ৯০ হাজার টাকা। কিন্তু বাকি টাকার হদিস এখনও মেলেনি বলেই খবর।

সব শেষে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনাটি ঘটল ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে, কোলাঘাট থানার বড়দাবাড় এলাকায়। ডাকাতির ভয়ে দোকান থেকে সমস্ত নগদ-সহ সোনা ও রুপোর গয়না নিয়ে প্রতি দিনের মতোই উত্তর জিয়াদা’র বাড়িতে ফিরছিলেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমীর। দোকান থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব মেরেকেটে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার। মাঝে কিছুটা রাস্তা ৬ নং জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু সেই রাস্তায় যে বিপদ এ ভাবে অপেক্ষায় রয়েছে, তা ওই ব্যবসায়ী ঘুণাক্ষরেও টের পাননি। এই টাকার জন্য নিজের প্রাণটাই খোয়াতে হল সমীরকে।

এমন একের পর এক ঘটনায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ী মহল। বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সদস্য প্রভাত নন্দী এই প্রসঙ্গে বলেন, “একের পর স্বর্ণ ব্যবসায়ী দুষ্কৃতীদের টার্গেট হয়ে উঠছেন। দোকানে হাজারো সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকলেও তা ভেঙে লুটপাট করছে দুষ্কৃতীরা। সিসি ক্যামেরা লাগালেও তা ভেঙে দিচ্ছে। টাকাপয়সা, মালপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরতে গেলেও রাস্তায় বিপদ দাঁড়িয়ে থাকছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা চরম উদ্বেগে রয়েছি।”

আরও পড়ুন
Advertisement