Footpath Encroachment

চুরি যায় ফুটপাত, পথ খোঁজে পুরসভা

পুর এলাকায় বেআইনি কাজকর্মে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। কী ভাবে, কার মদতে অনিয়ম?

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৪ ০৮:১৬
বেদখল ফুটপাত। মেদিনীপুর শহরের বটতলাচকে।

বেদখল ফুটপাত। মেদিনীপুর শহরের বটতলাচকে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

কোটি কোটি টাকা খরচ করে ফুটপাত হল। তৈরি হতে না হতেই তা দখলও হল। এখন আবার লোকলস্কর লাগিয়ে শুরু হবে ফুটপাত দখলমুক্তি অভিযান। কয়েকমাস না হয় ফুটপাত দিয়ে হাঁটবেন পথচারীরা। কিন্তু তারপর? পুর্নমুষিক ভব হবে না তো! ফুটপাত জবরদখল নিয়ে সরকারের কড়া অবস্থান নিয়ে এ ভাবেই ফুট কাটছে বিরোধীরা।

Advertisement

জেলা সদর মেদিনীপুর তো বটেই, রেলশহর খড়্গপুর-সহ অন্য ছোট শহরগুলিতেও চোখে পড়ার মতো ফুটপাত তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল বছর দশেক আগে। মেদিনীপুরের কথাই ধরা যাক। দু’ধাপে প্রায় ৯ কিলোমিটার রাস্তার দু’দিকে ফুটপাত তৈরির অনুমোদন মিলেছিল মেদিনীপুর শহরে। প্রায় ৫ কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েছিল।‌ একাংশ শহরবাসীর অনুযোগ, কোটি টাকা খরচ করে ফুটপাত বানিয়েছে পুরসভা, অথচ মানুষ হাঁটতে পারছে না। কেরানিতলা থেকে নান্নুরচক পর্যন্ত রাস্তার সমতলে দু’পাশে প্রায় পাঁচ ফুট জায়গায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল লাল-হলুদ ইটের টালি। এটিই না কি ফুটপাত। আগে যে ভাবে রাস্তার ধারে লরি বা অন্যান্য গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকত, এখন সে ভাবেই ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকছে। আগে রাস্তার ধারেই ফাস্ট ফুডের দোকান বসত। এখন তারা বসছে ঝাঁ চকচকে ফুটপাত দখল করে। এক পুর-আধিকারিকের সাফাই, "উচ্ছেদ করব কী করে, তা হলে তো প্রতিদিনই নতুন করে ফাঁকা জায়গা বেদখল হবে।" জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাসের কথায়, "ভোটের রাজনীতি করার জন্য যথেচ্ছ ফুটপাত দখল করিয়েছে তৃণমূল নেতারাই। এখন মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিলেও ওই দখল তোলার সম্ভাবনা কমই।" পুরপ্রধান সৌমেন খান অবশ্য বলছেন, ‘‘ফুটপাত দখলমুক্ত করা হবেই।’’

রেলশহরের একটা বড় অংশ জুড়ে রেলের এলাকা। তার চারদিকে রয়েছে পুরসভা এলাকা। রেলের এলাকায় ফুটপাত দখল দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে চলছে। গত কয়েক বছরে পুর এলাকাতেও ফুটপাত দখলের প্রবণতা বেড়েছে। জবরদখল সরিয়ে বছর আটেক আগে শহরের খরিদা ও মালঞ্চ রোডে কয়েকজন পুর প্রতিনিধির উদ্যোগে লক্ষ-লক্ষ টাকা ব্যয়ে সুসজ্জিত ফুটপাত গড়লেও সেখানে এখন চলার উপায় নেই। মালঞ্চ রোডে ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তায় উঠে এসেছে দোকানপাট। জবরদখলের জেরে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের বাইরে আটকে যাচ্ছে অ্যাম্বুল্যান্সও। ওই এলাকার দোকানি বিনোদ সিং বলেন, “নর্দমা ও ফুটপাতের উপর নির্ভর করেই তো দীর্ঘ বছর ধরে আমাদের রুটি-রুজি চলছে।” খড়্গপুরের পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে একমাসের মধ্যে রাস্তা ফাঁকা করব। হকার জোনের জন্যও জায়গা খোঁজা হবে।”

ঘাটাল শহরে এতদিন ফুটপাত বলে কিছু ছিল না। ঘাটাল শহরের মূল রাস্তাটি ছিল সরু এবং সঙ্কীর্ণ। সম্প্রতি ঘাটাল পাঁশকুড়া সড়ক সম্প্রসারণের পর শহরের দু’ধারে তৈরি হয়েছে প্রশস্ত ফুটপাত। তারপর বেশ খুশিতেই ছিলেন শহরের বাসিন্দারা। তা ছাড়া সেই ফুটপাত দিয়ে ছোট গাড়িও চলাচল করছিল। এই পরিস্থিতিতে ভোটের আগে সেই ফুটপাতের একটা বড় অংশই দখল হয়ে গিয়েছে। কোথাও দোকানের মালপত্র ফুটপাতের উপরে রেখে ব্যবসাও চলছে। ঘাটালের কুঠিবাজার, আলমগঞ্জ, নিউমার্কেট প্রভৃতি শহরের জনবহুল বাজারে সরু রাস্তার দু’ধারও দখল করে চলে ব্যবসা। চন্দ্রকোনা ও রামজীবনপুর পুর শহরেও বাসস্ট্যান্ডের রাস্তার ফাঁকা অংশ ও ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়া স্ট্যান্ডে বাস ঢুকতেও সমস্যা হচ্ছে।নীরব পুরসভাগুলি।

ঝাড়গ্রামে ফুটপাত বলতে কিছুই নেই। বাম আমলে ঝাড়গ্রামে ফুটপাত চুরি শুরু হয়েছিল। ২০১৭ সালে ঝাড়গ্রাম জেলা হওয়ার পর জেলা সদরে রাস্তার ধারে ফুটপাতের অস্তিত্ব বলতে কার্যত কিছুই নেই। শহরের পাঁচ মাথা মোড় থেকে রেলস্টেশন চত্বর পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে ফুটপাত ঢেকে গিয়েছে দোকানে। পাঁচমাথা মোড় থেকে সুভাষ পার্ক মোড় হয়ে শিব মন্দির পর্যন্ত এবং সুভাষপার্ক মোড় থেকে স্টেশন পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে তিন ফুট চওড়া করে মোট ১,৫৫৭ ফুট লম্বা ফুটপাত তৈরি হয়েছিল। সেই ফুটপাতে পথচারীদের হাঁটার জায়গা নেই। ঝাড়গ্রামের পুরপ্রধান কবিতা ঘোষ জানিয়েছেন, মানুষের চলার পথে বাধা সৃষ্টি না করার জন্য প্রতিদিনই পথে নেমে ব্যবসায়ী ও হকারদের সচেতন করা হচ্ছে। জেলা পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মৃত্যুঞ্জয় পাল বলছেন, ‘‘জেলা প্রশাসন যেভাবে নির্দেশ দেবে সেই রকম পদক্ষেপ করা হবে।’’

(বরুণ দে, অভিজিৎ চক্রবর্তী, দেবমাল্য বাগচী, কিংশুক গুপ্ত, রঞ্জন পাল)

আরও পড়ুন
Advertisement