—ফাইল চিত্র।
ঝাড়গ্রাম শহর ও শহর লাগোয়া এলাাকায় সরকারি খাস জমি দখল করে চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক সভামঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এমনই অভিযোগ জানিয়েছেন হোলি ট্রিনিটি চার্চের ফাদার কুরিয়াকোশ টি জর্জ। যা নিয়ে শুরু হয়েছে শোরগোল।
গত কয়েক বছরে ঝাড়গ্রাম শহরের পুরাতন ঝাড়গ্রাম এলাকায় বহু খাস জমি দখল করে বিক্রি করা হয়েছে। বেআইনি ভাবে বিক্রির তালিকায় রয়েছে পাট্টার জমিও। যদিও পাট্টার জমি হস্তান্তর যোগ্য নয়। বিক্রিও করা যায় না। এই ঘটনায় তৃণমূলের একাংশও জড়িত রয়েছে। বহু খাস জমিতে বেআইনি ভাবে ঘর-বাড়িও তৈরি হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ এমনই। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সভামঞ্চে উঠে ফাদার কুরিয়াকোশ টি জর্জের কিছুক্ষণ কথা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই মুখ্যমন্ত্রীকে জমি নিয়ে নালিশ জানান ফাদার কুরিয়াকোশ টি জর্জ। পরে তিনি বলেন, ‘‘দিনে-দুপুরে বহু সরকারি জমি দখল করে বিক্রি করে দিচ্ছে জমি মাফিয়ারা। আগে ঝাড়গ্রাম শহরে এরকম জমি মাফিয়াদের দাপট ছিল না। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি। পাশাপাশি শহরের নিকাশি সমস্যার কথাও জানিয়েছি।’’
সূত্রের খবর, গত কয়েক বছরে ঝাড়গ্রাম শহরের পুরাতন ঝাড়গ্রাম এলাকায় বহু খাস জমি ও পাট্টার জমি দখল করে বিক্রি করা হয়েছে। ঝাড়গ্রাম শহর ও শহর লাগোয়া এলাকাতেও এমন অভিযোগ রয়েছে। সেখানে বাড়ি-ঘরও তৈরি হচ্ছে। এ ভাবে চললে সরকারি জমি আর অবশিষ্ট থাকবে কি না তা নিয়েই চিন্তিত ভূমি দফতর। এই নিয়ে কী ভাবছেন? জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল বলেন, ‘‘লিখিত অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’
ঝাড়গ্রাম জেলা হওয়ার পরেই অরণ্য শহরে জমি মাফিয়াদের সক্রিয়তা বেড়েছে। কয়েকগুণ বেড়েছে জমির দাম। দূর-দূরান্ত থেকে রুজির খোঁজে আসা লোকজনকে টাকার বিনিময়ে সরকারি জমিতে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অরণ্য শহরের একলব্য স্কুল ও রামকৃষ্ণ মিশন লাগোয়া রাস্তাটির ধারে সরকারি ও রায়তি দু’ধরনের জমিই রয়েছে। সেখানেও সরকারি জমি দখল হচ্ছে। বেশ কিছু সরকারি জমি তো একাধিক বার বিক্রি হয়েছে। টাকার বিনিময়ে বিনা কাগজেই ওই কাজ হয়েছে বলে অভিযোগ। যা পুরোপুরি অবৈধ। বাদ যাচ্ছে না পুকুরও। জমির বেআইনি কারবারের সঙ্গেই প্রোমোটারদের রমরমাও বেড়েছে। শহরের বিভিন্ন জায়গা কিনে তৈরি হচ্ছে আবাসন (ফ্ল্যাট)। সেখানেও বেআইনি লেনদেন রয়েছে বলে অভিযোগ।
কেউ যদি রায়তি জমি কিনে বাড়ি করতে যান, তাহলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্থানীয় পুরপ্রতিনিধিদের (কাউন্সিলর) একাংশ নানা অছিলায় বিভিন্ন ভাবে টাকা নিচ্ছেন। এমন অভিযোগও আছে জঙ্গলমহলের এই জেলায়। পুরো বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করে জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু বলেন, ‘‘গোটা ঝাড়গ্রাম জেলা জুড়েই জমি মাফিয়াদের বাড়-বাড়ন্ত হয়েছে। প্রশাসন কোনও ভাবেই ব্যবস্থা নেয়নি। চার্চের পিছনের জায়গা দখল হয়ে যাওয়ায় ফাদারের এতদিনে মনে হয়েছে দখল হয়েছে। কারা দখল করছে, কারা বিক্রি করছে তা সকলেই জানেন। তৃণমূলের নেতারা জড়িত না থাকলে বেআইনি জমি কেনাবেচা সম্ভব নয়।’’
লোকসভা ভোটের আগে এই ঘটনায় অস্বস্তি শুরু হয়েছে রাজ্যের শাসক দলের অন্দরে। জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি প্রসূন ষড়ঙ্গী বলেন, ‘‘দলের তরফ থেকে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে জায়গা-জমির কেনাবাচার ব্যাপারে কেউ যাতে জড়িত না থাকে। যদি কেউ যুক্ত থাকেন, তাঁদের সতর্ক করা হবে।’’