—প্রতীকী চিত্র।
১০-২০ কোটি নয়, পড়ে রয়েছে ১০০ কোটিরও বেশি টাকা। এই টাকা বরাদ্দ হয়েছিল পঞ্চদশ অর্থ কমিশনে।
পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বিপুল বরাদ্দ পেয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরও। তবে বরাদ্দের অনেকটাই পড়ে রয়েছে। জানা গিয়েছে, জেলায় পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরে পড়ে থাকা টাকার পরিমাণ সব মিলিয়ে প্রায় ১২৪ কোটি ৩৮ লক্ষ! বরাদ্দের প্রায় ৭৫ শতাংশ খরচ হয়েছে। বাকি প্রায় ২৫ শতাংশ পড়ে রয়েছে। ত্রিস্তরের মধ্যে টাকা খরচে সবচেয়ে পিছিয়ে জেলা পরিষদই। জেলা পরিষদস্তরে বরাদ্দের প্রায় ৬০ শতাংশই পড়ে রয়েছে।
বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রের বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে। তা নিয়ে রাজ্যের অভিযোগ বিস্তর। সেখানে অর্থ কমিশনের বরাদ্দের একটা বড় অংশ কেন অব্যবহৃত থাকছে, প্রশ্ন উঠছে। জেলা প্রশাসনের আশ্বাস, পড়ে থাকা টাকা আগামী মার্চের মধ্যেই খরচের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জেলা সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি বলেন, ‘‘টেন্ডার কমিটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। কেন টাকা পড়ে থাকছিল, খতিয়ে দেখা হয়েছে। এ বার কাজে গতি আসবে। নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।’’ অবশ্য মার্চের মধ্যে সব টাকা খরচের সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছে একাধিক মহল। জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তথা বিজেপি নেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পড়ে রয়েছে। উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।’’
পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের জেলার জন্য মোট বরাদ্দের ৭০ শতাংশ পায় গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি। বাকিটা ১৫ শতাংশ করে ভাগ হয় পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের মধ্যে। নিয়মানুযায়ী, বরাদ্দের ৬০ শতাংশ টাকায় (টায়েড ফান্ড) স্বাস্থ্যবিধান প্রকল্প, শৌচাগার নির্মাণ, পানীয় জল প্রকল্প, বৃষ্টির জল ধরে রাখার মতো নির্দিষ্ট কিছু প্রকল্প করা যেতে পারে। বাকি ৪০ শতাংশ টাকায় (আনটায়েড ফান্ড) স্থানীয় চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী স্থানীয় পরিকাঠামো গড়া যেতে পারে। জেলায় পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরকেই সেই মতো কাজের পরিকল্পনা করার কথা
জানানো হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের টাকা খরচে পুরনো নিয়ম ফিরেছে। এক সময়ে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতই অর্থ কমিশনের টাকা খরচের সুযোগ পেত। চতুর্দশ অর্থ কমিশনে জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতিকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য টাকা বরাদ্দ য়েছিল। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনে অবশ্য ত্রিস্তরের জন্যই টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ২০২০- ’২১, ২০২১- ’২২ এবং ২০২২- ’২৩, এই তিন অর্থবর্ষে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের ৫৪৪ কোটি ৪৭ লক্ষ ৭৬ হাজার ৪৬৪ টাকা এসেছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। এর মধ্যে পড়ে রয়েছে ১২৪ কোটি ৩৮ লক্ষ ৪৭ হাজার ৯৯০ টাকা
(সেপ্টেম্বর পর্যন্ত)। দেখা যাচ্ছে, গ্রাম পঞ্চায়েতস্তরে বরাদ্দের ৮৩.০১ শতাংশ, পঞ্চায়েত সমিতিস্তরে ৭৩.৩০ শতাংশ খরচ হয়েছে আর জেলা পরিষদস্তরে বরাদ্দের মাত্র ৪০.৬৮ শতাংশ খরচ হয়েছে। জেলা পরিষদ ১০০ কোটি ৮ লক্ষ ৭৪ হাজার ৮০৫ টাকা পেয়েছে— টায়েড ফান্ডে ৫৬ কোটি ১৭ লক্ষ ৪৮ হাজার ২৫২ টাকা, আনটায়েড ফান্ডে ৪৩ কোটি ৯১ লক্ষ ২৬ হাজার
৫৫৩ টাকা।
তৃণমূল যখন কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে সরব, তখন তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদ কেন কেন্দ্রীয় বরাদ্দ সময়ে খরচ করতে পারছে না, প্রশ্ন উঠছে। জেলা সভাধিপতি অবশ্য জানাচ্ছেন, সম্প্রতি একদফায় ৮ কোটি, আরেক দফায় ৬ কোটি টাকার কাজ ছাড়া হয়েছে। মাসে ১০- ১২ কোটি টাকা খরচের লক্ষ্যমাত্রা বাঁধা হয়েছে।