মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পরাক্রম দিবস নাকি দেশনায়ক? নেতাজির সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিবস নিয়ে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে। মঙ্গলবার সকালেই বিজ্ঞাপ্তি জারি করে কেন্দ্র ঘোষণা করে নেতাজির জন্মদিবসকে প্রতি বছর ‘পরাক্রম দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে। কিন্তু রাজ্য যে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে খুশি নয়, মঙ্গলবার পুরুলিয়া থেকে সে বার্তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুরুলিয়ার হাটমুড়ায় গিয়ে নেতাজির জন্মদিবস নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেন মমতা। তাঁর মতে, রাজ্য মনে করে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এক জন দেশপ্রেমী, দেশনায়ক। তাই তাঁর জন্মদিবসকে ‘দেশনায়ক’ হিসেবে ঘোষণা করা উচিত ছিল কেন্দ্রের। মমতা বলেছেন, ‘‘কেন্দ্র কী ঘোষণা করেছে, না করেছে, সেটা তাদের এক্তিয়ার। কেন্দ্র দিনটি পালন করতে যে শব্দ ঘোষণা করেছে, আমরা খুশি নই। পরিবারের (নেতাজির) সদস্যদের অনেকেও খুশি নন বলে জেনেছি। আমি এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না, এ নিয়ে রাজনীতিও করতে চাই না।” নেতাজির জন্মদিবস নিয়ে মমতার এই প্রতিক্রিয়ায় কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের একটা সঙ্ঘাতের আবহ তৈরি হল বলে মনে করা হচ্ছে।
মমতা আরও বলেন, “নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এক জন মহান মানুষ। তিনি গোটা বিশ্বের কাছে মহান হয়েই থাকবেন। তিনি এক জন দেশপ্রেমিক। তাঁর দেশপ্রেমকে কারও সঙ্গেই তুলনা করা চলে না।” তবে ‘পরাক্রম শব্দটা যে ঠিক নয় তা জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে এটাও বলেছেন, “আমার মনে হয় দেশপ্রেম বা দেশনায়ক শব্দটাই বরং ভাল।’
মমতার মতে, প্রত্যেক রাজ্যেরই তাদের নিজস্ব ভাষা আছে। বাংলাতেও অনেক ‘মধুর’ শব্দ আছে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে বাদ দিয়ে বাংলা চলতে পারে না বলেও জানিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, “নেতাজির জন্ম কটকে হলেও তাঁর গোটা কর্মজীবন কিন্তু বাংলাকে ঘিরেই।” নেতাজির জন্মদিবসকে যে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করা উচিত বলেও এ দিন মন্তব্য করেছেন তিনি।
মমতা জানিয়েছেন, ২৩ জানুয়ারি ‘দেশনায়ক দিবস’ হিসেবেই পালন করা হবে। ওই দিন বেলা ১২টায় শঙ্খ বাজানো হবে। সওয়া ১২টায় সাইরেন বাজবে। যে যেমন ভাবে পারবে, দিনটিকে উদযাপন করবেন বলেও আবেদন করেছেন মমতা। ওই দিন শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে জমায়েত করে সেখান থেকে মিছিল করে নেতাজির মূর্তির কাছে যাওয়া হবেও বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবার কেন্দ্র বিজ্ঞপ্তি জারি করে নেতাজির জন্মদিবসকে ‘পরাক্রম দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। এর পরই বিজেপি-র আইটি সেলের প্রধান তথা রাজ্য বিজেপি-র সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য টুইট করে জানান, নেতাজির জন্মদিবসকে পরাক্রম দিবস হিসেবে পালন করা হবে। কেন্দ্রের এই ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয় বিতর্ক। বিরোধীরা বলছে, বাঙালির মন জয় করতেই মণীষীদের নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে বিজেপি।