আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি ও রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। —নিজস্ব চিত্র।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি ধরা পড়ে গিয়েছে আদালতে। এ বার সেই দুর্নীতি আাড়াল করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার লাগাতার ‘মিথ্যাচার’ করছে বলে সরব হল বিরোধীরা। তাদের মতে, ‘ন্যূনতম লজ্জা’ থাকলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর পদত্যাগ করা উচিত! বিরোধী দল বিজেপি নানা জায়গায় প্রতিবাদে নেমেছে। চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যাচারে’র অভিযোগ আনছেন, তার পরে সব অংশের মানুষকে প্রতিবাদে নেমে আসার ডাক দিয়েছে সিপিএম। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য এখনও দাবি করছে, মুখ্যমন্ত্রী সমাধানের চেষ্টা করছেন কিন্তু বিরোধীরাই জলঘোলা করছে!
নিয়োগ-দুর্নীতির প্রতিবাদে ও ‘হিন্দুদের উপরে অত্যাচারে’র অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে মঙ্গলবার হুগলির জেলাশাসক দফতরে বিজেপির অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। পরে চুঁচুড়ায় দলে জেলা কার্যালয়ে চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের উদ্দেশে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত বলেছেন, ‘‘আমরা আগেই বলেছিলাম আন্দোলন করতে। বারবার এরা (রাজ্য সরকার) আপনাদের বোকা বানাচ্ছে। আপনাদের আন্দোলনের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন আছে। কিন্তু এই নিষ্ঠুর সরকারের সামনে আন্দোলন করে অন্তত পক্ষে নিজেদের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবেন না। আপনারা জীবনকে রেখে আন্দোলন করুন।’’ মুখ্যমন্ত্রী যে ‘পাশে থাকা’র কথা বলছেন, তাকে কটাক্ষ করে সুকান্তের মন্তব্য, ‘‘উনি (মুখ্যমন্ত্রী) পাশে থাকবেন না তো কে থাকবেন! মুখ্যমন্ত্রীই তো অযোগ্যদের কাছ থেকে টাকা কামিয়েছেন! ওঁকেই চাকরিহারাদের পাশে থাকতে হবে।’’ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েও সরকার এবং শিক্ষা দফতর নির্বিকার বলে তোপ দেগেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও।
প্রথমে আর জি কর-কাণ্ড এবং এখন নিয়োগ-দুর্নীতি, তৃণমূলের সরকার বারবার ‘অপরাধী’দের বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে কলকাতায় এসে সরব হয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের দুর্নীতির ফল ভুগতে হচ্ছে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের। তাঁরা যে প্রতিবাদ করছেন, সর্বতো ভাবে আমরা তার পাশে আছি। শিক্ষক, ছাত্র,যুব সংগঠনগুলিকে আবেদন করছি, যে যেমন ভাবে পারেন, নামুন। শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ান।’’ বামফ্রন্টের তরফে চেয়ারম্যান বিমান বসুও রাজ্য সরকারের ‘মিথ্যাচারকে ধিক্কার’ জানিয়ে বিধাননগরের গণতান্ত্রিক মানুষের কাছে আবেদন করেছেন বিক্ষোভরত শিক্ষকদের প্রতি সহয়াতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন মেদিনীপুরে মন্তব্য করেছেন, কলকাতায় থাকলে তিনি ‘এক সেকেন্ডে’ সমাধান করতেন। এখনও সমাধানের চেষ্টাই করছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। এই সূত্রে সেলিমের মন্তব্য, ‘‘সমাধান করবেন কি, উনিই তো সমস্যা! এই গোলমাল ২০১৬ সাল থেকে চলছে, এত দিন কী করছিলেন? ন্যূনতম লজ্জা থাকলে এর পরে পদ ছাড়তেন মুখ্যমন্ত্রী। তা না-করে এখনও পুলিশ লেলিয়ে দিচ্ছেন। এখন আন্দোলনকারীরাই বলছেন যে মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যাবাদী!’’ এখন ‘অযোগ্য’দের তালিকা দিলেই বার হবে কাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছিল এবং তাতে শাসক দলের বিপদ বাড়বে, এই দাবিও সমস্বরে করছে বিরোধীরা।
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘বাংলার দুর্ভাগ্য যে চিকিৎসক ও শিক্ষক, এই দুই মহৎ পেশার মানুষ আজ রাস্তায়। সরকার তাঁদের সংখ্যায় দুর্বল মনে করছে, তাই এই অত্যাচার টা করছে। এসএসসি হোক বা শিক্ষা পর্ষদ, সরকারের সব সংস্থা মুখ্যমন্ত্রীর ইশারায় চলে। তিনি চাকরিহারা শিক্ষকদের আবার ধোঁকা দিচ্ছেন।’’ রাতে বিধাননগরে অবস্থানরত শিক্ষকদের কাছে গিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার, সিপিএম নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের নিয়ে বিরোধীরা শুধু রাজনৈতিক লাভের চেষ্টা করছেন। তাই তাঁদের সমস্যা সমাধানের বদলে বিষয়টিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীই তো একমাত্র চাকরিহারাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই তাঁকেই নিশানা করা হচ্ছে। শিক্ষা দফতর-সহ গোটা সরকার আইনি পরামর্শ নিয়ে এগোচ্ছে। এখানে বিরোধীরা জলঘোলা করে হাজার হাজার ছেলেমেয়ের দুর্ভোগ যেন না বাড়ান।’’