Subrata Bakshi

Subrata Bakshi: দলের কর্মীদের একাংশের কারণেই নন্দীগ্রামে হেরেছেন মমতা, ভাইরাল শীর্ষনেতার অডিয়ো

নীলবাড়ির লড়াইয়ে সেখান থেকে যে তিনি দলের প্রার্থী হবেন, সে কথা নন্দীগ্রামের এক সভা থেকে ঘোষণা করেন মমতা। সেই মঞ্চে মমতার পাশে ছিলেন বক্সী।

Advertisement
অমিত রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২১ ১১:০৮
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুব্রত বক্সী

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুব্রত বক্সী

নন্দীগ্রামে ভোটগণনায় কারচুপির অভিযোগ তুলে বিধানসভা নির্বাচন পর্ব মিটতেই আদালতে গিয়েছে শাসকদল তৃণমূল। সে মামলার এখনও কোনও নিষ্পত্তি হয়নি হাই কোর্টে। তার মধ্যেই সোমবার একটি অডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে। সেখানে এক পুরুষ কণ্ঠকে বলতে শোনা যাচ্ছে, কিছু কর্মীর অসহযোগিতার কারণেই নন্দীগ্রামে বিধায়ক হতে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দাবি, অডিয়ো ক্লিপের ওই কণ্ঠস্বর তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর। যদিও ওই অডিয়ো ক্লিপের সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি।

স্থানীয় সূত্রেও জানা গিয়েছে, ২৮ নভেম্বর রাতে ভবানীপুর বিধানসভার অন্তর্গত ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে এক কর্মিসভায় ওই মন্তব্য করেছেন সুব্রত। সেখানে করা তাঁর ওই মন্তব্যই অডিয়ো ক্লিপ হিসাবে ভাইরাল হয়েছে। ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে আগামী পুরনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী কাজরী। তাঁর সমর্থনে আয়োজিত কর্মিসভাতেই হাজির হয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি। স্থানীয়দের একংশের দাবি, সেখানেই এমন মন্তব্য করেছেন মমতার দীর্ঘ দিনের সঙ্গী সুব্রত। ওই অডিও ক্লিপে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমাদের দলের কিছু সহকর্মীর অসহযোগিতার কারণেই মমতা নন্দীগ্রামের প্রতিনিধি হতে পারলেন না। কিন্তু আমরা গর্বিত যে, তিনি ভবানীপুরের মাটি থেকে জিতেই তৃতীয় বারের জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন।’’ তৃণমূলকর্মীদের একাংশের দাবি, এমন কথা বলে ভবানীপুরের আটটি ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীদের জয় ছিনিয়ে আনতে বলেছেন সুব্রত। তবে সুব্রত কোন কর্মীদের অসহযোগিতার কথা বলতে চেয়েছেন, তা তিনি খোলসা করেননি। অন্তত ভাইরাল হওয়া অডিয়ো ক্লিপে তার কোনও উল্লেখ নেই।

Advertisement

নীল বাড়ির লড়াইয়ে সেখান থেকে যে তিনিই দলের প্রার্থী হবেন, সে কথা নন্দীগ্রামেরই এক সভা থেকে গত ১৮ জানুয়ারি ঘোষণা করেছিলেন মমতা। সেই মঞ্চে মমতার পাশেই ছিলেন বক্সী। পরে ওই কেন্দ্র থেকে মমতার বিরুদ্ধে বিজেপি-র প্রার্থী হন তৃণমূল ছেড়ে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারী। ভোটগণনা শেষে নির্বাচন কমিশন জানায়, মমতা ১৯৫৬ ভোটে শুভেন্দুর কাছে হেরে গিয়েছেন। যদিও গোটা রাজ্যে তৃণমূল ভাল ফল করে। এবং ২ মে ভোটের ফলপ্রকাশের পর ৫ মে মমতা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। পরে ৩০ নভেম্বর ভবানীপুর থেকে উপনির্বাচনে জিতে আসেন মমতা। এর মধ্যেই নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে গণনায় কারচুপির অভিযোগ তুলে গত ১৭ জুন হাই কোর্টে আবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তাঁর নিশানায় ছিলেন নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু। সেই মামলার যদিও এখনও কোনও নিষ্পত্তি হয়নি।

তবে আদালতে মামলা চললেও মমতা কখনও দলের নন্দীগ্রামের কোনও কর্মীর বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তোলেননি। ফলপ্রকাশের দিনই মমতা বলেছিলেন, ‘‘আমরা দু’শোর বেশি আসনে জিতেছি। একটা আসনে হারা জেতা বড় ব্যাপার নয়। ওরা এক বার ঘোষণা করে দিয়েছিল যে আমি জিতে গিয়েছি। এখন বলছে হেরে গিয়েছি। এটা কী করে হয় জানি না। ওখানকার মানুষ যে রায় দিয়েছেন তা মেনে নিচ্ছি। ওখানে ভোটগণনা যাতে রিভিউ করা হয়, সেই দাবি জানাব। দরকার হলে আদালতে যাব।’’ এর কয়েক দিন পরে মমতা নন্দীগ্রামের ভোটগণনার প্রসঙ্গ তুলে বলেছিলেন, ‘‘বন্দুকের নলের মুখে কাজ করতে হচ্ছে রিটার্নিং অফিসারকে। তিনি যদি পুনর্গণনার নির্দেশ দেন, তা হলে তাঁর প্রাণ সংশয় হতে পারে।’’ নন্দীগ্রামে ইভিএম পাল্টানোর অভিযোগ সেই সময় তুলে তিনি বলেছিলেন, ‘‘এক জনের কাছ থেকে এসএমএস পেয়েছি। নন্দীগ্রামের এক রিটার্নিং অফিসার জানিয়েছেন, বন্দুকের নলের মুখে কাজ করতে হচ্ছে। তিনি যদি পুনর্গণনার নির্দেশ দেন, তাহলে তাঁর প্রাণ সংশয় হতে পারে। নন্দীগ্রামে মেশিন পাল্টে দেওয়া হয়েছে।’’

তবে সুব্রত বক্সীর এমন মন্তব্য ভাইরাল হওয়ার পর তৃণমূল নেতৃত্ব এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে বক্সীর মন্তব্য থেকে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, এর থেকে এটা স্পষ্ট, নন্দীগ্রামের ফল নিয়ে এখনও দলের অভ্যন্তরীণ ময়নাতদন্ত বন্ধ করেনি। , ভাইরাল এই অডিওটি প্রকাশ্যে আসার পর তা আবারও প্রমাণিত। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার পর দলেরই একঝাঁক প্রথমসারির রাজ্য নেতাকে সেখানকার ভোট সামলানোর দায়িত্ব দিয়েছিল তৃণমূলের শীর্ষ নেতারাই। তবে কাদের অসহযোগিতার কারণে মুখ্যমন্ত্রীকে পরাজিত হতে হয়েছিল, তার খোলাসা করেননি সুব্রত।

তবে অডিয়ো ক্লিপের কণ্ঠ যে তাঁরই তা স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূলের বক্সীদা (তৃণমূল নেতা কর্মীরা এই নামেই ডাকেন তাঁকে)। তিনি বলেন, ‘‘আমি অনেক সভাতেই এ কথা বলে থাকি। মুখ্যমন্ত্রীকে হারাতে নন্দীগ্রামে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত যেমন হয়েছিল। তেমনই হয়েছিল কিছু কর্মীদের অসহযোগিতা। তাই তো রাজ্যের তৃতীয়বারের মুখ্যমন্ত্রী হলেও, তিনি নন্দীগ্রামের বিধায়ক হতে পারেননি। তবে তিনি সব সময় নন্দীগ্রামকে সম্মান দিয়েছেন। আগামী দিনেও নন্দীগ্রামের পাশেই থাকবেন।’’

আরও পড়ুন
Advertisement