Protest in Maldaha

গুরুতর জখম মানিকচকের আইসি, আত্মরক্ষার্থেই গুলি চালিয়েছিল পুলিশ, বললেন মালদহের এসপি প্রদীপ

পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, অবরোধকারীদের মধ্যে একটি দল বেশি আগ্রাসী হয়ে ওঠে। এক এএসআইয়ের ঘাড়ে আঘাত করা হয়। তাঁর হেলমেটের ফিতে ছিঁড়ে যায়। আইসি-সহ গুরুতর আহত হয়েছেন তিন জন পুলিশকর্মী।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
মানিকচক শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৪ ২১:০৫
মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব।

মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব। — ফাইল চিত্র।

মালদহের মানিকচকে বৃহস্পতিবার স্থানীয়দের অবরোধ তুলতে গিয়ে আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। সাংবাদিক বৈঠক করে এমন দাবিই করলেন মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, অবরোধকারীদের একাংশ পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়েছে। মানিকচকের আইসি-সহ তিন জন পুলিশকর্মী গুরুতর আহত। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৬ জনকে আটক করা হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। মানিকচকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের অভিযোগ তুলে অবরোধ-বিক্ষোভ চলছিল। সেই অবরোধ সরাতে গিয়ে পুলিশ কেন গুলি চালিয়েছে, ইতিমধ্যে তা নিয়ে রিপোর্ট তলব করেছে নবান্ন।

Advertisement

মানিকচক থানার এনায়েতপুরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, দিনের বহু সময় বিদ্যুৎ থাকে না সেখানে। বিপাকে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। প্রতিবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবার মানিকচকের ১০ জায়গায় অবরোধ করেন স্থানীয়েরা। অবরোধ তুলতে গিয়ে বিক্ষোভকারী এবং পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ বাধে বলে অভিযোগ। সেই বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালায় পুলিশ। তাতে আহত হয়েছেন দু’জন। মালদহ মেডিক্যাল কলেজে তাঁরা চিকিৎসাধীন। পুলিশের দাবি, আত্মরক্ষার জন্যই গুলি চালানো হয়েছে।

পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় মানুষজনকে অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ করে, বোঝানোর চেষ্টা করে। ‘উত্তেজিত’ জনতা সেই অনুরোধে না-শুনে পুলিশের উপর চড়াও হয় এবং পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মানিকচক থানার আইসি ঘটনাস্থলে পৌঁছলে জনতা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি শুরু হয় বলে দাবি করেছেন পুলিশ সুপার। তিনি জানিয়েছেন, এই ঘটনায় মানিকচকের আইসি-সহ তিন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। এর পরেও জনতা পেট্রল বোমা, ইট এবং লাঠি নিয়ে পুলিশকে তাড়া করে। এসপির কথায়, ‘‘আইসি-সহ পুলিশকর্মীরা কাছের একটি বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। ওই বাড়িতে দু’জন মহিলা, একটি শিশু এবং ছ’জন পুরুষ ছিলেন। সেই বাড়ি লক্ষ্য করেও ইট ছোড়া হয়। বাড়ির জানলা- দরজা ভেঙে গিয়েছে। পুলিশ পাল্টা কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ছোড়ে।’’ এসপির দাবি, এ সবের পরেও বিক্ষোভকারীদের দমন করা যায়নি। এসপি বলেন, ‘‘যে বাড়িতে পুলিশ আশ্রয় নিয়েছিল, তার সামনে একটি মোটরসাইকেল ছিল, যা ভাঙচুর করা হয়। তাতে আগুন ধরায় জনতা। তার পর কিছু লোক পেট্রল নিয়ে এসে বাড়িতে ছড়িয়ে আগুন ধরানোর চেষ্টা করে। পুলিশ বাড়ির লোকজনকে রক্ষার চেষ্টা করে। তখন আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়া হয়।’’

পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ঘটনাস্থলে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা পৌঁছে আহত পুলিশকর্মীদের উদ্ধার করেন এবং হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, অবরোধকারীদের মধ্যে একটি দল বেশি আগ্রাসী হয়ে ওঠে। এক এএসআইয়ের ঘাড়ে আঘাত করা হয়। তাঁর হেলমেটের ফিতে ছিঁড়ে যায়। আইসিকে ধাক্কা দেওযা হয়। তিনি মাটিতে পড়ে যান। তাঁরও হেলমেটের ফিতে ছিঁড়ে যায়। তখনও পাথর ছোড়া হচ্ছিল। আঘাতের জেরে এএসআই প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তিন জন গুরুতর আহত হয়েছেন। বাকি কয়েক জন পুলিশকর্মীর চোট-আঘাত লেগেছে। এই ঘটনায় কয়েক জন স্থানীয়ও আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে যাঁরা পুলিশকে আক্রমণ করেছেন এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে ২৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কারা জড়িত, তা ভিডিয়ো দেখে খোঁজ করা হচ্ছে। এনায়েতপুর এলাকায় পিকেট বসানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলেই জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

আরও পড়ুন
Advertisement