Kalighater Kaku

জেলে গিয়ে কেন গ্রেফতার করছেন না? চাইলে আজই ধরতে পারেন: ‘কাকু’ প্রশ্নে সিবিআইকে বিচার ভবন

চাইলে ‘কাকু’কে জেলে গিয়ে সোমবারই গ্রেফতার করতে পারবে সিবিআই। এমনটাই মন্তব্য করেছে বিচার ভবন। ‘কাকু’ প্রসঙ্গে সোমবার অনুরূপ মন্তব্য করেছে কলকাতা হাই কোর্টও।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:০০
সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’কে হেফাজতে নিতে পারবে সিবিআই।

সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’কে হেফাজতে নিতে পারবে সিবিআই। —ফাইল চিত্র।

সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’কে জেলে গিয়ে গ্রেফতার করতে পারবে সিবিআই, এমনটাই মন্তব্য করল বিচারভবন। সোমবার তাঁকে নিম্ন আদালতে হাজির করানোর কথা ছিল। কিন্তু সূত্রের খবর, ‘কাকু’ অসুস্থ। জেলের হাসপাতালেই এখনও চিকিৎসাধীন। কেন জেলে গিয়ে ‘কাকু’কে গ্রেফতার করা হচ্ছে না, সিবিআইকে প্রশ্ন করে আদালত। বিচারক জানান, জেলে গিয়ে চাইলে সোমবারই তাঁকে গ্রেফতার করতে পারবে কেন্দ্রীয় সংস্থা।

Advertisement

‘কাকু’ প্রসঙ্গে সোমবার অনুরূপ মন্তব্য করেছে কলকাতা হাই কোর্টও। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের বেঞ্চ জানিয়েছে, ‘কাকু’ সশরীরে আদালতে হাজির হতে না-পারলে তাঁকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজির করানো যেতে পারে। সে ক্ষেত্রেও আর্জি মঞ্জুর হলে ‘কাকু’কে হেফাজতে নিতে পারবে সিবিআই। উচ্চ আদালত জানিয়েছে, কারও হাজিরার নির্দেশে তারা বাধা দিতে পারে না।

নিম্ন আদালত থেকে এর আগেও ‘কাকু’কে সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পর পর চার বার তিনি হাজিরা এড়িয়েছেন। শুক্রবার নিয়োগকাণ্ডে ইডির মামলা থেকে তিনি জামিনও পেয়ে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সোমবার বিচারভবনে গেলে সিবিআইয়ের উদ্দেশে বিচারক বলেন, ‘‘সুজয়কৃষ্ণকে কেন আপনারা জেলে গিয়ে গ্রেফতার করছেন না? সব কোর্টের কাঁধে চাপিয়ে দিচ্ছেন। আপনারা তদন্ত করছেন। আপনারা চাইলে জেলে গিয়ে গ্রেফতার করতে পারেন। চাইলে আজও জেলে গিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে ওঁকে গ্রেফতার করতে পারেন।’’

নিম্ন আদালতে বার বার ‘কাকু’র হেফাজত চেয়ে আবেদন করছে সিবিআই, সে বিষয়ে সোমবার হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন তাঁর আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য ছিল, প্রায় প্রতি দিন ‘কাকু’কে আদালতে হাজির করানোর জন্য আবেদন করছে সিবিআই। এটা করা যায় কি না, তদন্তকারী আধিকারিকের থেকে সে বিষয়ে হলফনামা চাওয়া হোক। সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, নিম্ন আদালত থেকে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ‘প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট’ (সশরীরে হাজির করানোর নির্দেশ) জারি করা হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তকে আদালতে নিয়ে আসা যাচ্ছে না, কারণ তিনি অসুস্থ।

এর প্রেক্ষিতে ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘কেন তদন্তকারী সংস্থা অভিযুক্তকে ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে হাজির করাচ্ছে না? আমরা অভিযুক্তের প্রোডাকশনে বাধা দিতে পারি না। ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ওঁর হাজিরার পর সিবিআইয়ের আর্জি মঞ্জুর হলে তাঁকে হেফাজতে নিতে পারবে কেন্দ্রীয় সংস্থা।’’ ‘কাকু’র আইনজীবী এ বিষয়ে শুনানির জন্য আদালতের কাছে কিছুটা সময় চেয়ে নিয়েছেন। মঙ্গলবার এই সংক্রান্ত শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।

বিচারভবনে এই সংক্রান্ত মামলায় সিবিআইয়ের আইনজীবী এবং বিচারকের কথোপকথন তুলে দেওয়া হল—

বিচারক: এই নিয়ে কত বার আপনারা সুজয়কৃষ্ণের হাজিরার নির্দেশ চাইলেন?

সিবিআইয়ের আইনজীবী: পাঁচ বার।

বিচারক: জেলে গিয়ে গ্রেফতারিতে বাধা কোথায়? তদন্তকারী আধিকারিক জেলে গিয়ে ওঁকে গ্রেফতারও করতে পারেন, আবার হাজিরার নির্দেশও চাইতে পারেন। দিনের পর দিন আপনারা প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট চাইছেন। এত দরকার হলে জেলে যাচ্ছেন না কেন?

সিবিআই: অভিযুক্ত অন্য মামলায় জেল হেফাজতে রয়েছেন। যত ক্ষণ না আনুষ্ঠানিক ভাবে ওঁর বেল বন্ড হচ্ছে বা আনুষ্ঠানিক ভাবে জেলমুক্তি হচ্ছে, তত ক্ষণ উনি জেল হেফাজতেই রয়েছেন।

বিচারক: আবার হাজিরার নির্দেশ দিলে উনি আসবেন? সে বিষয়ে আপনারা নিশ্চিত হচ্ছেন কী করে?

তদন্তকারী আধিকারিক: পরের দিন হাজিরা না দিলে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হাজিরার আবেদন জানাব।

বিচারক: তাতে কি আপনাদের কাজ হবে?

তদন্তকারী আধিকারিক: কিছুটা হবে। অভিযুক্তকে ‘শোন অ্যারেস্ট’ (গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে নতুন করে হেফাজতে নেওয়া) করা যেতে পারে।

বিচারক: জেলে গিয়ে গ্রেফতার করলেই যে উনি হাজিরা দেবেন, এমন নয়। কারণ উনি অসুস্থ। কিন্তু আপনারা ওঁকে গ্রেফতার করতে পারবেন।

এর পর সিবিআইয়ের আইনজীবী হাই কোর্টের সকালের মন্তব্য নিম্ন আদালতে উল্লেখ করেন।

সিবিআই: হাই কোর্টে অভিযুক্ত আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছেন। সেই মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

বিচারক: আপনারা তো সবই আদালতের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছেন। আপনাদের ক্ষমতা আছে, কিন্তু সেটা কাজে লাগাচ্ছেন না। কোর্ট তো কাউকে গ্রেফতার করে না। তদন্ত আপনাদের ব্যাপার। গ্রেফতারির ক্ষমতা আপনাদের দেওয়া আছে। গত কয়েক দিনে অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে। আমাকে সেগুলি দেখতে হবে। আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি এটা ভেবে যে, আপনারা জেলে যাচ্ছেন না!

সিবিআই: অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর হয়েছে। কিন্তু এখনও জামিনে তিনি মুক্ত হননি। সোমবারই ভার্চুয়াল মাধ্যমে ওঁকে হাজির করানোর আবেদন জানাচ্ছি।

বিচারক: অভিযুক্ত জামিন পেয়ে গিয়েছেন। এখন কি নতুন করে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট দেওয়া সম্ভব?

সিবিআই: এখনও অভিযুক্তের বেল বন্ড হয়নি।

বিচারক: সেটা আমার কাছে বিচারাধীন নয়।

শুনানি শেষে এই সংক্রান্ত রায় স্থগিত রেখেছেন বিচারভবনের বিচারক।

Advertisement
আরও পড়ুন