ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনমঞ্চের সামনের দৃশ্য। সংহতির বার্তা নিয়ে রয়েছেন সাধারণ মানুষেরাও। — ফাইল চিত্র।
৫ অক্টোবর রাত সাড়ে আটটা থেকে শুরু হয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের আমরণ অনশন কর্মসূচি। প্রথমে ছ’জন জুনিয়র ডাক্তার শুরু করেছিলেন। পরে ধাপে ধাপে আরও জুনিয়র ডাক্তার যোগ দেন অনশনে। তাঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত চার জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
রবিবার রাতেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ‘নীরবতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁরা বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কেন চুপ? আমরা তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাই।” আন্দোলনকারীরা আরও বলেছেন, “এত দিন হয়ে গেল, মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে কোনও কথা শুনতে পাচ্ছি না। আমরা শুনতে পাচ্ছি মুখ্যসচিবের থেকে একটা মেল, কোনও একটা কুণাল ঘোষ, কোনও ছুটকো-ছাটকার বিরূপ প্রতিক্রিয়া।’’
সোমবার সকালে জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনমঞ্চের সামনে থেকে সরাসরি।
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-সহ সব চিকিৎসক সংগঠনগুলিকে সোমবার বৈঠকের জন্য ডেকেছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। দুপুর সাড়ে ১২টার সময় স্বাস্থ্যভবনে ওই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স’ ফ্রন্টকে ওই বৈঠকের জন্য ডাকা হয়নি। কোন কোন চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিনিধিরা সোমবারের বৈঠকে যোগ দেবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে জুনিয়র ডাক্তারদের আশা, চিকিৎসক সংগঠনগুলি যে ভাবে শুরু থেকে আন্দোলনের পাশে থেকেছে, আগামীতেও সেই ভাবেই পাশে থাকবে।
পুলস্ত্যর অসুস্থতা প্রসঙ্গে রবিবার রাতে এনআরএসের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জয়দীপ দেব বলেছেন, “সময় মতো তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও এখনও পরিস্থিতি সঙ্কটমুক্ত নয়। সোডিয়াম, পটাশিয়াম পরীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্টে দেখা গিয়েছে তাঁর শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়াম এবং অ্যাসিড বেসের মাত্রার পরিবর্তন হওয়ার ফলে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। দীর্ঘ সময় না খাওয়ার জন্য মূলত এই সমস্যাগুলি হয়েছে। তাঁর এখন চিকিৎসা চলছে। আরও নানা রকমের পরীক্ষানিরীক্ষা করা হবে। শরীরে জলশূন্যতা রয়েছে। তাঁকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। তাঁর অবস্থা এখন স্থিতিশীল হলেও বিপদ কাটেনি।”
জুনিয়র ডাক্তারদের আমরণ অনশনের সোমবার দশম দিনে পড়েছে। একাধিক জুনিয়র ডাক্তার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রবিবার রাতে অনশনমঞ্চেই অসুস্থ হয়ে পড়েন জুনিয়র ডাক্তার পুলস্ত্য আচার্য। রাতে অনশনমঞ্চ থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে (এনআরএস) নিয়ে যাওয়া হয় পুলস্ত্যকে। আপাতত সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। পুলস্ত্যর চিকিৎসার জন্য পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সোমবার এই নিয়ে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হতে চলেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সোমবার দুপুরে রাজভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। ধর্মতলার অনশনমঞ্চের সামনেই শুরু হবে জমায়েত।
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সোমবার বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা আংশিক কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন। সোমবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে এই কর্মসূচি। চলবে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত। ৪৮ ঘণ্টা আংশিক কর্মবিরতির কারণে বেসরকারি হাসপাতালগুলির জরুরি বিভাগ ছাড়া সব পরিষেবা বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। যদিও রোগী পরিষেবায় কোনও সমস্যা হবে না বলেই আশ্বস্ত করেছিলেন তাঁরা।
বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারেরা এই প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণার সময় বলেছিলেন, “আমরা জনগণের কথা ভেবে জরুরি ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু থাকবে। কোনও রোগীর কোনও অসুবিধা হবে না। সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন, যদি কখনও কোনও জরুরি অবস্থা হয়, তখন যে কোনও সময়ে হাসপাতালে যাবেন, চিকিৎসকেরা সব সময় সাহায্য করবেন।’’