এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার। —ফাইল চিত্র।
সিদ্ধার্থ বলেন, “কয়েক দিন ধরে বলা হচ্ছে, ফোন আসছে যে, এসএসসির তরফ থেকে নাকি অযোগ্যদের কোনও তথ্য কোর্টে দেওয়া হয়নি। কিন্তু এটা ভুল। ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর হলফনামা দিয়ে বলি নবম ও দশম মিলিয়ে ৭৭৫ জনের অনুমোদন আমরা প্রত্যাহার করি রুল ১৭ প্রয়োগ করে। বাকি ৩৩ জনের ক্ষেত্রে প্রত্যাহার করা হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “একাদশ এবং দ্বাদশের র্যাঙ্ক জাম্প হয়েছে ৩৯ জন এবং ৭৭১ জনের। ১৮৩ জনের ওএমআর সংক্রান্ত বিষয় ছিল। গ্রুপ ডি-তে ১৯১১ জনের ওএমআর ইস্যু । ১০ মার্চ সুপারিশ বাতিল করা হয় আদালতের তরফে। ২০২৪-এর ৫ জানুয়ারি একটি হলফনামা দেওয়া হয়, যেখানে নবম-দশমে ১৮৩ জনের র্যাঙ্ক জাম্প হয়েছে বলে জানাই । একাদশ ও দ্বাদশে ৩৯ জনের র্যাঙ্ক জাম্প হয়েছে জানাই। গ্রুপ সি ও ডি-তে ৫৭৩ ও ৩৭১ জনের চাকরি বাতিল হয়েছে। তিনটি হলফনামার মাধ্যমে যাবতীয় চাকরি বাতিলের তথ্য দিয়েছি আদালতে। ২০২০-তে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জানাই যে, ১৬ সালের প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়েছে। আদালতের নির্দেশে নবম ও দশম মিলিয়ে ১৩০ জনকে দেখে ইন্টারভিউ করিয়ে চাকরি দিয়েছি। সব মিলিয়ে ৫৩০০ অযোগ্যদের তথ্য ও তালিকা আদালতে দেওয়া হয়েছে।”
এসএসসির চেয়ারম্যান বলেন, “২০১৬ সালে ওএমআর সিটে পরীক্ষা চালু হয় এবং সেই সময় নিয়ম ছিল বা আইন ছিল যে, এক বছর পর্যন্ত এসএসসি নিজের কাছে ওএমআর সিট সুরক্ষিত রাখতে পারবে তার বেশি নয়।”
বৃহস্পতিবার এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন, “যেহেতু ৫৩০০ জন অযোগ্যকে আমরা চিহ্নিত করে আদালতে জানিয়ে দিয়েছিলাম, তা হলে আমরা ধরে নিতে পারি বাকি ১৯০০০ জন যোগ্য।”
এসএসসির চেয়ারম্যান বলেন, “এই মুহূর্তে বাকি ১৯০০০ চাকরিপ্রাপক (৫২৪৩ জন অবৈধ চাকরিপ্রাপককে বাদ দিয়ে) যোগ্য না অযোগ্য সেটা খুঁজে বের করা একটু মুশকিল। আদালত বললে আমরা চেক করে দেখব। আদালত যেটা বলেছে, সোমবারের রায়ে তাতে আমার ও আমার আইনজীবীদের মনে হয়েছে সেটা পুরোনো প্যানেল থেকে নয়, একেবারে নতুন বা ফ্রেশ করে প্যানেল করে নিয়োগ হবে। সেক্ষেত্রে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি হবে। নতুন নিয়ম তৈরি হবে।”
এসএসসির চেয়ারম্যান বৃহস্পতিবার বলেন, “আদালত বলেছে সহযোগিতার অভাব ছিল। আমি সেটা মেনে নিচ্ছি, কিছুটা হয়তো ছিল। কিন্তু কোনও তথ্য আদালতে দেওয়া হয়নি সেটা মেনে নিতে পারলাম না।”
সোমবার এসএসসি মামলার রায় দিতে গিয়ে ২০১৬-র শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়াকেই বাতিল করে দেয় হাই কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ। কেন অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি বাতিল করে যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি বহাল রাখা হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই।
রায়ে যদিও বলা হয় যে, ফাঁকা উত্তরপত্র (ওএমআর) জমা দিয়েও বহু পরীক্ষার্থী অনেক বেশি নম্বর পেয়েছেন। যদিও ঠিক কত জন বেআইনি ভাবে চাকরি পেয়েছেন তা এসএসসি-র অসহযোগিতার জন্যই চিহ্নিত করা যায়নি। তার পরেও যা তথ্য এসেছে, তাতে শুধু গ্রুপ-ডি পদেই ৪৮ শতাংশ ব্যক্তি অবৈধ ভাবে নিযুক্ত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েই ২০১৬ সালের সব নিয়োগ বাতিল করে নতুন ভাবে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করতে বলেছে কোর্ট। ওএমআর শিট তৈরি, মূল্যায়ন এবং স্ক্যান করার জন্য খোলা দরপত্র ডেকে নতুন সংস্থাকে নিয়োগও করতে বলেছে আদালত।
আদালতের তরফে এসএসসি-র বিরুদ্ধে অসহযোগিতার যে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে তা খণ্ডন করার চেষ্টা করেন এসএসসির চেয়ারম্যান।
যোগ্য এবং অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের তালিকা দিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে হলফনামা জমা দিয়েছিল এসএসসি। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে এমনই দাবি করলেন এসএসসির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, “১৩ ডিসেম্বর হলফনামা জমা দিয়েছিলাম। হলফনামায় আদালত সন্তুষ্ট হয়নি। ১৮ ডিসেম্বর ফের হলফনামা জমা দেওয়া হয়। ২০ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছিল।” এর আগেও এসএসসির তরফে দাবি করা হয়েছিল, তারা যোগ্য এবং অযোগ্যদের তালিকা আদালতে জমা দিয়েছিলেন।
হাই কোর্টের চাকরি বাতিলের নির্দেশের বিরুদ্ধে বুধবারই সুপ্রিম কোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন (এসএলপি) দাখিল করেছে এসএসসি। উচ্চ আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে গিয়েছে রাজ্য সরকারও। শীর্ষ আদালতে পৃথক ভাবে মামলা করেছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর, এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
সোমবার স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর অধীনে ২৫,৭৫৩টি চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। ওই দিনই এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার জানিয়েছিলেন, হাই কোর্টের এই রায়ে তিনি খুশি নন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘পাঁচ হাজার জনের বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তার জন্য ২৬ হাজার জনের কেন চাকরি বাতিল হবে?’’ আরও জানিয়েছিলেন, আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।