জোরকদমে: বেলগাছিয়ার একটি পুজো মণ্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
কেউ মণ্ডপে আলোর কাজ এখনও শুরুই করতে পারেননি, কারও আবার এখনও তৈরি হয়নি থিম সঙ্গীত। বহু জায়গাতেই বাঁশের ভারা বাঁধা রয়েছে। খোলা হয়নি মণ্ডপ ঢেকে কাজ করার জন্য লাগানো প্লাস্টিক, ত্রিপলও! চক্ষুদান তো হয়ইনি, প্রতিমার সাজসজ্জাও চূড়ান্ত হয়নি, এমন পুজোর সংখ্যাই বেশি। অথচ, আজ, বুধবার থেকেই ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের কলকাতার একাধিক মণ্ডপ ঘুরে দেখার কথা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ইউনেস্কোর গন্তব্যের তালিকায় থাকা পুজো কমিটিগুলির প্রায় ৯৫ শতাংশেরই কাজ এখনও শেষ হয়নি। মঙ্গলবার সারা রাত জেগে অনেকেই কাজ উতরে দেওয়ার কথা বললেও বাস্তব চিত্র অন্য রকম।
২০২১ সালে ইউনেস্কোর আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের (ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ) তালিকায় দুর্গাপুজো স্থান পাওয়ার পর থেকেই বিদেশি প্রতিনিধিরা কলকাতায় পুজোর আবহ প্রত্যক্ষ করতে আসেন। সেই মতো আজ থেকে আগামী রবিবার পর্যন্ত কলকাতার বেশ কয়েকটি পুজো মণ্ডপ ঘুরে দেখবেন তাঁরা। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাতভর চলবে এই মণ্ডপ-সফর। ইউনেস্কোর তরফে এই বিশেষ প্রাক্-প্রদর্শনীর খুঁটিনাটি প্রকাশ করে দুর্গাপুজো তথা বিশ্বের বৃহত্তম শিল্প উৎসবকে বিশ্বের সামনে মেলে ধরার একটি জুতসই পরিসর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘মাস আর্ট’ বলে একটি মঞ্চের ওয়েবসাইটে প্রাক্-প্রদর্শনীটি দেখার খবরাখবর মিলবে। দুর্গাপুজোর প্রাক্-প্রদর্শনীর জন্য ২২টি বারোয়ারি থিম পুজো, দু’টি সাবেক পুজো এবং দু’টি বনেদি পুজো-বাড়িকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কলকাতার সেরা শিল্পীদের পুজো, নামী ও জনপ্রিয় থিম পুজো, জনপ্রিয় সাবেক পুজো এবং বনেদি বাড়ির পুজো— এই ক’টি ভাগে ভাগ করে নিয়ে পুজোগুলি বাছা হয়েছে বলে খবর।
‘মাস আর্ট’-এর তরফে শৈবাল দত্ত বললেন, ‘‘জার্মানি, বেলজিয়াম, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, মঙ্গোলিয়া, সাইপ্রাস, অস্ট্রেলিয়া, ফিজি এবং নেপালের রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে অনেকেই এসে গিয়েছেন। জার্মানির নদী আর কলকাতার গঙ্গা নিয়ে ‘জল কথা বলে’ শিরোনামে একটি বিশেষ শব্দ প্রদর্শনীও রয়েছে। রাষ্ট্রদূতেরা ছাড়াও আমেরিকার একটি কলেজের প্রতিনিধিরা আসছেন, থাকছে ইন্টারন্যাশনাল ডেলফিক কাউন্সিলের ৭০ জনের এক প্রতিনিধিদল। প্রথমে টাউন হলে উদ্বোধনের পরে দুর্গাপুজো প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে টালা প্রত্যয়ের মণ্ডপে। সেখান থেকে মনোনীত পুজো কমিটিগুলিতে প্রতিনিধিদের যাওয়ার কথা।’’
কিন্তু এই প্রদর্শনী ঘিরে শহরে উৎসবের বোধন হয়ে গেলেও সব গুছিয়ে উঠতে কার্যত নাজেহাল মনোনীত পুজো কমিটিগুলি। তালিকায় থাকা অন্যতম পুজো চোরবাগান সর্বজনীনের উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, এখনও মণ্ডপের কাজ শেষ হয়নি। শুরু করা যায়নি আলোর কাজও। বালিগঞ্জ কালচারালের পুজোকর্তা অঞ্জন উকিল বললেন, ‘‘বৃষ্টি যা ভোগাল! বেশ কিছু কাজ বাকি। তবে মনে হচ্ছে, এক দিনের মধ্যে শেষ করে ফেলতে পারব। থিম সঙ্গীতটা বাকি থাকবে, সেই জায়গায় অন্য গান বাজানো হবে।’’
সুরুচি সঙ্ঘের কর্তা কিংশুক মৈত্রের দাবি, ‘‘ডেডলাইন মিস হয়েই গিয়েছে। কিছু করার নেই। তবু যতটা হয়েছে, সেটাই অতিথিদের দেখানো হবে।’’ ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সাধারণ সম্পাদক তথা হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজোকর্তা শাশ্বত বসু বলেন, ‘‘রাত জেগে কাজ করেও কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। ৯৫ শতাংশ মণ্ডপ তৈরি নয়। তবে, এটা তো পুরস্কারের ব্যাপার নয়। বিচারকেরা যখন আসবেন, তখন সব ঠিক আছে কি না, দেখাতে পারলেই হল।’’
এই পরিস্থিতিতেও আশা দেখাচ্ছে মহিলা পরিচালিত গড়িয়াহাট হিন্দুস্থান ক্লাব। সেখানকার উদ্যোক্তা বীথি বসু বললেন, ‘‘আমাদের পুজো ৯৮ শতাংশ তৈরি। চাইলে কালই বিদেশি প্রতিনিধিদের দেখিয়ে দিতে পারি।’’ আর যেখান থেকে প্রদর্শনীর উদ্বোধন হবে, সেই টালা প্রত্যয়? প্রাক্-প্রদর্শনীর অন্যতম উদ্যোক্তা সায়ন্তন মৈত্র বললেন, ‘‘যেখান থেকে উদ্বোধন, সেখানে কাজ বাকি থাকলে হয়? সব তৈরি। শুধু সকাল হওয়ার অপেক্ষা।’’