স্নেহাশিস রায়। —ফাইল চিত্র।
তার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে— এই সন্দেহে দমকলকর্মীকে খুন করতে ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করেছিল অভিযুক্ত মূল চক্রী সাগর হালদার। এই ঘটনায় ধৃত সাগরকে জেরা করে এমনটাই জানা গিয়েছে বলে দাবি বিধাননগর কমিশনারেটের।
গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ দমদমের অজয়নগরে নিজের আবাসনের একতলায় দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন স্নেহাশিস রায় নামে ওই দমকলকর্মী। দমকল বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী স্নেহাশিস নিউ টাউনের একটি দমকল কেন্দ্রে চাকরি করতেন। ওই খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার ভাড়াটে খুনি আয়ুষ ও আফরোজ, শুক্রবার আকাশ এবং রবিবার দুই প্রধান অভিযুক্ত সাগর ও তন্ময় পালকে গ্রেফতার করে লেক টাউন থানা।
বিধাননগর পুলিশের ডিসি বিসুপ সরকার সোমবার জানান, স্নেহাশিসের উপরে নানা কারণে ক্ষুব্ধ ছিল সাগর। তার মধ্যে একটি প্রধান কারণ ছিল স্নেহাশিসের সঙ্গে সাগরের স্ত্রীর যোগাযোগ। ডিসি বলেন, ‘‘সাগর জেরায় জানিয়েছে, সে তার স্ত্রীকে স্নেহাশিসের সঙ্গে দেখেছিল। এর পরেই তার মনে স্ত্রী ও স্নেহাশিসকে নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধে। সাগর আরও জানিয়েছে, সে এবং স্নেহাশিস ছাড়াও আরও দু’জন মিলে লটারির ব্যবসা চালাত। সেটি বন্ধ হয়ে যায়। সেই ব্যবসা বন্ধের পিছনে স্নেহাশিসের ভূমিকা ছিল বলেও দাবি সাগরের।’’ এই বিষয়ে সাগরের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা হবে বলে জানিয়েছেন ডিসি। পুলিশের দাবি, এই সব সমস্যা ঘিরে গত ছ’-সাত মাস ধরে দু’তরফের মধ্যে শত্রুতা চরমে ওঠে। তখন থেকেই স্নেহাশিসকে খুনের ছক কষতে থাকে সাগর।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, সাগর অতীতেও অপরাধের ঘটনায় জড়িয়েছে। ২০১০ সালে ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকায় একটি খুনের ঘটনায় তার নাম জড়িয়েছিল। তার পরে আট মাস জেলে ছিল সে। এর পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে বাইরে থাকার সময়ে ২০১৭ সালে ফের একটি গুলি চালানোর ঘটনায় সে গ্রেফতার হয়।
পুলিশ জেনেছে, খুনের ঘটনার তিন দিন আগে থেকে স্নেহাশিসের ফ্ল্যাটের আশপাশের এলাকায় রেকি করেছিল দুষ্কৃতীরা। আর এক ধৃত আকাশ দুই ভাড়াটে খুনি আয়ুষ ও আফরোজকে ঘটনার সময়ে স্নেহাশিসকে চিনিয়ে দিয়েছিল বলে ডিসি এ দিন জানিয়েছেন। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার মধ্যে একটি ৯এমএম পিস্তল পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি পুলিশের। তারা জানায়, আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গিয়েছে সাগরের কাছ থেকেই। তাকে জেরা করে জানা গিয়েছে, ঘোলার বাসিন্দা সঞ্জু নামে এক যুবকের থেকে সে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়েছিল। সঞ্জুকেও একটি ওয়ান শটার-সহ গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে আরও দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।
যদিও প্রশ্ন উঠছে, গত ছ’-সাত মাস ধরে সাগরের সঙ্গে শত্রুতা শুরু হলে গত বছর স্নেহাশিসকে গোরাবাজার দমকল কেন্দ্রের বাইরে কে গুলি করেছিল? তার উদ্দেশ্যই বা কী ছিল? সে নিয়ে অবশ্য বিধাননগরের পুলিশ কিছু জানায়নি। ডিসি শুধু জানান, স্নেহাশিসের খুনিদের জেরা করে গোরাবাজারের ঘটনা প্রসঙ্গে কিছু তথ্য মিলেছে। সেই সব তথ্য ব্যারাকপুর কমিশনারেটকে দেওয়া হবে।