স্বাস্থ্য ভবনের সামনে মুখ্যমন্ত্রীর সোমবারের বক্তব্যের প্রতিবাদে জুনিয়র চিকিৎসকদের বার্তা। ছবি: রিঙ্কি মজুমদার।
বিকেল ৫টা বাজলেও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক কর্মবিরতি প্রত্যাহার করলেন না জুনিয়র চিকিৎসকেরা। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানে বসে রয়েছেন তাঁরা। দাবি না মানা হলে সেখানেই বসে থাকার ডাক দিয়েছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য ভবনের সামনে এসে পৌঁছেছে ভ্রাম্যমান শৌচাগার। স্বাস্থ্য ভবনের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছিল, চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধি দল ভিতরে এসে কথা বলতে চাইলে তাঁদের স্বাগত জানানো হবে। এই বিষয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, তাঁরা ডেপুুটেশন দিতে আসেননি। তাঁদের দাবি স্পষ্ট। সেগুলি মানা না হলে লাগাতার অবস্থান চলবে।
স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান। —নিজস্ব চিত্র
বিকেল ৫টা অবধি সময় দিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তার পরেও তাঁদের কয়েক জনকে স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে দাবিদাওয়া জানানোর সুযোগ না দেওয়া হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান চালানোর হুঁশিয়ারি দিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
বন্ধ স্বাস্থ্য ভবনের গেট। রাস্তাতেই বসে পড়লেন জুুনিয়র চিকিৎসকেরা। তাঁদের দাবি, যত ক্ষণ না দাবি মানা হচ্ছে, তত ক্ষণ অবস্থান চলবে।
রাস্তায় বসে জুনিয়র চিকিৎসকেরা। —রিঙ্কি মজুমদার।
স্বাস্থ্য ভবনের ভিতরে ঢুকতে না দিলে রাস্তাতেই বসে পড়ার পরিকল্পনা চিকিৎসকদের।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার বলেছিলেন, ‘‘এক মাস তো হয়ে গেল। আমি অনুরোধ করব, পুজোয় ফিরে আসুন, উৎসবে ফিরে আসুন।’’ তার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের বিরোধিতায় সরব হয়েছিল বিরোধী দলগুলি। জুনিয়র ডাক্তারেরাও জানান, বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা কোনও উৎসবে শামিল হবেন না। মঙ্গলবার এই বিষয়ে আরও এক বার নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলেন তাঁরা। জুনিয়র ডাক্তারেরা মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যকে ‘অসংবেদনশীল’ বলে অভিহিত করেছেন।
হাতে পোস্টার নিয়ে এক জুনিয়র ডাক্তার। ছবি: রিঙ্কি মজুমদার।
সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে কাজে যোগ দিতে বলেছে। শীর্ষ আদালত নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাজে কি যোগ দেবেন জুনিয়র ডাক্তারেরা? স্বাস্থ্য ভবন থেকে তাঁরা কী সিদ্ধান্তের কথা শোনান, সে দিকে নজর থাকবে।
জুুনিয়র ডাক্তারেরা যে পাঁচ দফা দাবির কথা তুলেছেন, সেগুলি হল— প্রথমত, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমস্ত দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করা, অপরাধের উদ্দেশ্য সামনে আনা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। দ্বিতীয়ত, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচার। তৃতীয়ত, সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে ‘ব্যর্থ প্রমাণিত’ কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলের ইস্তফা। চতুর্থত, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। পঞ্চমত, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভয়মুক্ত পরিবেশ গড়া এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করা।
জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, তাঁরা স্বাস্থ্য ভবনে ‘সাফাই অভিযানে’ যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য ভবনে ‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙার দাবিও তুলেছেন তাঁরা।স্বা
স্বাস্থ্য ভবনের পথে জুনিয়র ডাক্তারেরা। ছবি: রিঙ্কি মজুমদার।
প্রতীকী মস্তিষ্ক হাতে নিয়ে মিছিলে হাঁটছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে একের পর এক দুর্নীতি হয়ে গেলেও স্বাস্থ্য ভবনের তরফে এত দিন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। চিকিৎসকদের অভিযোগ, তাঁদের আন্দোলনকে দমাতে নানা পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের ‘মস্তিষ্ক উপহার’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। এক জুনিয়র চিকিৎসকের কথায়, “এ বার অন্তত মাথা খাটিয়ে কাজ করুক স্বাস্থ্য ভবন।”
প্রসঙ্গত, এর আগে লালবাজার অভিযানে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে প্রতীকী শিরদাঁড়া উপহার দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
প্রতীকী মস্তিষ্ক হাতে নিয়ে মিছিল জুনিয়র ডাক্তারদের। ছবি: রিঙ্কি মজুমদার।
করুণাময়ী থেকে শুরু হল জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিল। মিছিল থেকে মুহুর্মুহু স্লোগান উঠছে।
করুণাময়ীর সামনে জমায়েত। —নিজস্ব চিত্র
করুণাময়ীতে জমায়েত জুনিয়র ডাক্তারদের। একটু পরেই শুরু হবে মিছিল। করুণাময়ীতে ডাক্তারদের জমায়েতে যোগ দিয়েছেন বেশ কয়েক জন সাধারণ মানুষও। জমায়েত থেকে ‘উই ডিম্যান্ড জাস্টিস’ স্লোগান উঠছে।
করুণাময়ী থেকে মিছিল করে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে স্বাস্থ্য ভবনে যাবেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তার আগে সেখানে আঁটসাঁট নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করল পুলিশ। স্বাস্থ্য ভবনের সব কটি প্রবেশদ্বার বা গেটের সামনে ব্যারিকেড রাখা হয়েছে। মোতায়েন রয়েছেন প্রচুর পুলিশকর্মী। বিধাননগর পুলিশ সূত্রে খবর, স্বাস্থ্য ভবনের অনেক আগেই মিছিল আটকানো হবে।
সোমবার বিকেলে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা তাঁদের নতুন কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছেন। এই দাবিপূরণের জন্য, মঙ্গলবার করুণাময়ী থেকে স্বাস্থ্য ভবন পর্যন্ত অভিযানের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। দুপুর ১২টায় শুরু হবে জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিল। প্রসঙ্গত, গত ৯ অগস্ট আরজি করের মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর থেকেই আন্দোলন শুরু করেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বিচারের দাবিতে পথে নেমেছেন তাঁরা। আরজি করের সামনে চলছে অবস্থানও। রাজ্য সরকারের তরফে বার বার তাঁদের কাজে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানালেও জুনিয়র ডাক্তারেরা কাজে ফেরেননি।
সুপ্রিম কোর্ট চিকিৎসা পরিষেবার কাজে ফেরার নির্দেশে দেওয়ার পরেই আবার আন্দোলন কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছে আরজি-কর কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন। পাঁচ দফা দাবির পাশাপাশি এ বার রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা (ডিএইচএস) এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা (ডিএমই)-র ইস্তফাও চেয়েছে তারা।