Transport Department

রাতের শহরে বাস বাড়ন্ত, খাঁড়ার ঘা বাতিলের সময়সীমাও

কলকাতা শহরে প্রতিদিন কম-বেশি ৩৫০০ বাস চলাচল করে। নিয়মের ফাঁসে আটকে আগামী মার্চের মধ্যে প্রায় ১৫০০ বাস বাতিল হয়ে যাবে।

Advertisement
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:২২
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

রাতের শহরে গণ পরিবহণের দশা বেহাল। একটু রাত হলেই আর দেখা মেলে না বাসের। এলাকা অনুযায়ী অটোর ভাড়াও চড়িয়ে হাঁকা হয় বলে অভিযোগ। কলকাতা শহরে গণ পরিবহণের এমন দশা এখন নিত্যদিনের ঘটনা। এ বার সেই পরিস্থিতি আরও করুণ হওয়ার আশঙ্কা যাত্রীদের। কারণ, কয়েক মাসের মধ্যেই পনেরো বছর পেরিয়ে যাওয়ায় বাতিল হবে প্রচুর বাস। তার জের রাতের কলকাতায় ভাল ভাবেই পড়বে বলেই আশঙ্কা।

Advertisement

কলকাতা শহরে প্রতিদিন কম-বেশি ৩৫০০ বাস চলাচল করে। নিয়মের ফাঁসে আটকে আগামী মার্চের মধ্যে প্রায় ১৫০০ বাস বাতিল হয়ে যাবে। ফলত তার ধাক্কা গণ পরিবহণের অন্যতম মাধ্যম বাস পরিষেবার উপরে পড়বে বলেই বাসমালিকদের একটি বড় অংশের ধারণা। তাঁরা জানান, ধীরে ধীরে বাস বাতিল হওয়া শুরু হয়েছে। পরিবর্তে নতুন বাস অনেক কম নামছে বলেই জানিয়েছে সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিস। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা রাতের শহরে বাস কমার জন্য বেশ কিছু কারণকে দায়ী করলেও পনেরো বছরের নিয়মকেই বেশি দায়ী করেছেন। টিটু বলেন, ‘‘পনেরো বছরের পুরনো বাস বাতিল হচ্ছে। সেই তুলনায় নতুন গাড়ি রুটে নামার আনুপাতিক হার অনেক কম। বেশ কিছু জ্বলন্ত সমস্যা রয়েছে, যে কারণে বহু মালিক নতুন করে রুটে গাড়ি নামাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাতে শহরের রাস্তায় বাস কমে যাচ্ছে।’’ উল্লেখ্য, এই পনেরো বছরের সময়সীমা বাড়ানোর পক্ষপাতী রাজ্য সরকারও। বাসমালিকেরা ঠিক করেছেন, বাস বাতিলের সময়সীমা বাড়াতে আদালতের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা।

তবে কারণ যা-ই থাকুক না কেন, রাতের শহরে বাস না পেয়ে ভুক্তভোগী হচ্ছেন যাত্রীরা। অভিজিৎ দাস নামে মধ্যমগ্রামের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘পেশাগত কারণে আমার বাড়ি ফিরতে রাত হয়। ধর্মতলা মোড়ে অনেক দিনই দেখি বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে। অথচ চালক-কন্ডাক্টর বলছেন গাড়ি যাবে না। অথবা যেতে অনেক দেরি হবে। বিলম্বের কোনও ব্যখ্যাও তাঁরা দেন না।’’ এ হেন নানা কারণে অনেক ক্ষেত্রেই যাত্রীরা বাধ্য হন ট্যাক্সি, অ্যাপ-ক্যাব কিংবা অ্যাপ-বাইকের মতো পরিষেবা নিতে। তবে সেখানেও তাঁরা বিভিন্ন সময়ে চড়া দরের সমস্যার মুখোমুখি হন। তার বাইরেও এমন বহু যাত্রীই রয়েছেন, যাঁরা বাধ্য হন বাসের মতো গণ পরিবহণের উপরেই নির্ভর করতে। রাতের শহরের বাস কম মেলায় ওই যাত্রীরা চরম হেনস্থার মুখোমুখি হচ্ছেন কার্যত রোজই।

রাতের শহরে বাসের অভাবের কথা মানছেন মালিকেরাও। তাঁদের দাবি, করোনা অতিমারির পর থেকে বাস চালানোর পেশায় আসা নিয়ে মানুষের মধ্যে অনীহা তৈরি হয়েছে। নানা কারণে বাসচালক, কন্ডাক্টরের কাজ ছেড়ে লোকজন অটো-টোটো চালাতেও চলে যাচ্ছেন। কর্মীর অভাবে অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত সংখ্যার ট্রিপও প্রতি রুটের বাসে প্রতিদিন করানো সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে আরও একটি সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন কোনও কোনও বাসমালিক। তাঁরা জানান, ইস্টার্ন বাইপাস-সহ বিভিন্ন রুটে অনেক বাস পারমিট ছাড়া চলাচল করছে। রুটের নির্ধারিত বাসগুলি বাধ্য হচ্ছে ওই সব বাসের সঙ্গে অকারণ প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে। এক বাসমালিকের কথায়, ‘‘অবৈধ রুটের বাস বৈধ রুটের যাত্রী টেনে নেওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। যে কারণে সব সময়ে নির্ধারিত সংখ্যায় বাস রাস্তায় নামানো সম্ভব হয় না। আর ওই সব বাস বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রুটে ঢুকে পড়ে। ফলে ভুগতে হয় যাত্রীদের।’’ এমনকি, ওই সব বাস শ্রমিকদের ভাঙিয়ে নেওয়ায় নির্ধারিত রুটে বাস চালানোয় সমস্যা হচ্ছে বলেও দাবি বাসমালিকদের।

আরও পড়ুন
Advertisement