Communal Festival

যদি হয় শিংযুক্ত, হৃষ্টপুষ্ট

আফগানিস্তান নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মারপ্যাঁচকে একেবারে পশুখামারে নিয়ে হাজির করেছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলী।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২৪ ০৭:৪০

গত শতকের প্রথমার্ধে ইদুজ্জোহা ঘিরে গ্রামের খানদানি মুসলমান পরিবারের আয়োজনের কথা জানা যায় জাহানারা ইমামের স্মৃতিকথায়। মুর্শিদাবাদে বাড়ির বৌরা আগের রাতে বারোটা-একটায় স্নান সেরে, নতুন শাড়ি পরে, ওজু করে বিসমিল্লা বলে কুরবানির রুটি বানাতে বসতেন। আগের দিনই ঢেঁকিতে চালের আটা কোটা থাকত, রুটি বানানো হত দু’-তিনশো। রসুনের খোসার মতো পাতলা, ধবধবে সাদা, সুগোল রুটি। আত্মীয়স্বজন, পাড়াপড়শি, জ্ঞাতিগোষ্ঠী থেকে অভাবি মানুষ সবাইকেই রুটি দেওয়ার রেওয়াজ, সঙ্গে হালুয়া গোশত।

Advertisement

আবার গ্রামের সঙ্গে শহুরে মধ্যবিত্তের অবস্থার ফারাক বোঝা যায় আনিসুজ্জামানের স্মৃতিকথায়। প্রাক্‌-স্বাধীনতা যুগের পার্ক সার্কাস অঞ্চলে কাটিয়েছেন ছেলেবেলায়, সেই সময়ের ইদুজ্জোহার স্মৃতি: “বকরিদে আমরা প্রতিবছর কুরবানি দিতাম না— মাঝে মাঝে তা বাদ পড়তো— ভক্তির অভাবে অতোটা নয়, যতোটা সামর্থ্যের অভাবে।”

আফগানিস্তান নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মারপ্যাঁচকে একেবারে পশুখামারে নিয়ে হাজির করেছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলী। তাঁর কলমে ইংরেজ দুম্বা যদি কাবুলের তৃণপ্রান্তরের দিকে নজর দেয় তো রুশ বকরি শিং উঁচিয়ে তেড়ে আসে। আর রুশ বকরি তেড়িমেড়ি করলে ইংরেজ দুম্বা ম্যা-ম্যা করে জানিয়ে দেয়, বকরির নজর কাবুলের চাট্টিখানি ঘাস ছাড়িয়ে হিন্দুস্তান, চিন, ইরানের মতো বড় বড় ধানখেতের দিকে।

রাজনীতির দুম্বা আর বকরির মনের মিল না হলেও, ইদুজ্জোহার আগে কলকাতার পশু কেনাবেচার অস্থায়ী হাটগুলিতে অবশ্য দুই প্রজাতিকেই দেখা যায়। অনেকে ভেড়া ও দুম্বা গুলিয়ে ফেলেন। দুম্বা মূলত জনপ্রিয় পশ্চিম এশিয়ায়, আমাদের ময়দানে চরে বেড়ানো ভেড়ার সঙ্গে সাদৃশ্য থাকলেও আকারে বড় সে।

খিদিরপুর সৈয়দ বাবা মাজারের পাশে কুরবানির বকরি কেনার বড় হাট বসে। ক্রেতারা বাছেন শিংযুক্ত, হৃষ্টপুষ্ট, নিখুঁত নীরোগ পশু। নানা দেহলক্ষণ দেখা হয়: পশু সুস্থ স্বাভাবিক হলে লেজ দিয়ে মাছি তাড়াবে, কান নাড়াবে, অবসরে জাবর কাটবে; নাকের নীচের কালো অংশ ভেজা ভেজা থাকবে, চোখ হবে বড়, উজ্জ্বল। দাঁত দেখে বয়স বুঝতে পারেন অভিজ্ঞ ক্রেতারা। তবে অনেক সময় কৃত্রিম ভাবে পশু মোটা করে বিক্রির কথাও শোনা যায়। তাই সতর্ক থাকতে হয়। হাটে বিক্রি হয় বকরির খাবারও, কাঁঠালপাতার গোছা।

খিদিরপুর ছাড়াও জ়াকারিয়া স্ট্রিট, রাজাবাজার, গার্ডেনরিচ, নারকেলডাঙা, মেটিয়াবুরুজ এলাকায় হাট বসে। সব জায়গাতেই স্থানীয় প্রজাতির পাশাপাশি কমবেশি আমদানি করা পশুও বিক্রি হয়। উত্তর ও মধ্য ভারত থেকে আসা উন্নত মানের তোতাপরি বা যমুনাপরি ছাগলের দাম ছাড়িয়ে যায় লক্ষ টাকাও। গত বছর ব্রাইট স্ট্রিটের এক হাটে উটও বিক্রি হতে দেখা গিয়েছিল। বদলে যাওয়া সময়ের দাবি মেনে কুরবানির পশু বিক্রির ক্ষেত্রেও এখন প্রযুক্তির প্রয়োগ ঢুকে পড়েছে। বাছাই করা জাতের পশু কলকাতা-সহ সারা ভারতে অনলাইন বিক্রির জন্য ওয়েবসাইটও চোখে পড়ে এই মরসুমে। ছবিতে খিদিরপুরের হাট, ২০১৭ সালের দৃশ্য।

জন্মদিনে

মেধাবী হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (ছবি) ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ভর্তি হন বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়)। কিন্তু পরে শারীরিক কারণে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছেড়ে, বাবার আপত্তি সত্ত্বেও বেছে নিলেন সাহিত্য ও সঙ্গীতসাধনাকে। বয়স তখন উনিশ। দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হল ছোটগল্প, ১৯৪০-এ রাজকুমারের নির্বাসন ছবিতে শচীন দেব বর্মণের সুরে প্রথম প্লেব্যাক। ১৯৪৩-এ বেরোল তাঁর নিজের সুরারোপিত দু’টি গান, ‘কথা কোয়ো নাকো শুধু শোনো’ এবং ‘আমার বিরহ-আকাশে প্রিয়া’। শুরু হল এক কিংবদন্তির জয়যাত্রা। আগামী কাল ১৬ জুন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ১০৫তম জন্মবার্ষিকীতে বি ই কলেজ এক্স-স্টুডেন্টস ক্লাব, সি-কে ১৪, সেক্টর-২ সল্টলেকে সৃষ্টি পরিষদের নিবেদন সঙ্গীতসন্ধ্যা ‘আষাঢ় মাসের প্রথম সন্ধ্যায়: হেমন্ত এল ফিরে’। তপন সিংহ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে আর একটি অনুষ্ঠান ‘স্মরণের এই বালুকাবেলায়’, আগামী ১৮ জুন সন্ধ্যা ৬টায় গ্যালারি চারুবাসনা-র উপেন্দ্রকিশোর সভাগৃহে।

স্মরণে

অর্থনীতির শিক্ষক, শিক্ষা প্রশাসক ও বিশিষ্ট চিন্তাবিদ অম্লান দত্ত তাঁর সময়ে স্রোতের বিপরীতে হাঁটা এক জন মানুষ। তাঁর প্রবন্ধের সঙ্কলনগুলি— গণযুগ ও গণতন্ত্র, প্রগতির পথ, পল্লী ও নগর, ব্যক্তি যুক্তি ও সমাজ, দ্বন্দ্ব ও উত্তরণ— তাঁর যুক্তিবাদী মন ও মুক্তচিন্তার স্বাক্ষর বহন করছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তনীরা তাঁর স্মরণে প্রতি বছর একটি বক্তৃতার আয়োজন করেন। এ বছর অম্লানবাবুর জন্মশতবর্ষ। এ বারের বক্তৃতাটি দেবেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, ভারতের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এবং পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা সদস্য অশোক লাহিড়ী— আজ ১৫ জুন বিকেল সাড়ে ৫টায়, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্কের শিবানন্দ হল-এ। বিষয়: ‘পশ্চিমবঙ্গের আটপৌরে জীবনে আসুক ধারাবাহিক বিপ্লব’।

হিসাবের খাতা

মহাকাব্যের যুগ অতীত, নিত্যদিনের বাস্তবতায় মানুষের লড়াই করা এখন। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “ভীষ্ম-দ্রোণ-ভীমার্জুন মহাকাব্যের নায়ক, কিন্তু আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কুরুক্ষেত্রের মধ্যে তাঁহাদের আত্মীয়-স্বজাতি আছে, সেই আত্মীয়তা কোন্‌ নবদ্বৈপায়ন আবিষ্কার করিবে!” সেই প্রকাশের উপাদান কি হতে পারে পারিবারিক হিসাবের খাতা? এখন আর ক’জন লেখেন হিসাব? এখনকার ছবিতে কি উঠে আসে হিসাব লেখার মুহূর্তকথা? ছবির ধরতাইয়ে নারী ও পুরুষের হিসাব-খাতার বয়ান তুলে ধরবেন বিশ্বজিৎ রায়, ‘পারিবারিক হিসেবের খাতা: ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কুরুক্ষেত্রের ইতিহাস’ প্রসঙ্গে। ১৭ জুন নন্দন ৩-এ বিকেল সাড়ে ৫টায়। সিনে অ্যাকাডেমি ও ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ় অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস-এর উদ্যোগ, দ্বাদশ কল্যাণ মৈত্র স্মারক বক্তৃতা।

ধর্মের ছায়া

৯/১১-র সন্ত্রাসবাদী হানায় হারানো প্রিয়জনের স্মৃতি বুকে আঁকড়ে পরিজন। একটি স্বর সন্ত্রাসবাদীর স্ত্রীরও, স্বামীর কোন স্মৃতি নিয়ে বাঁচেন তিনি? একই ফ্ল্যাটবাড়িতে পড়শি মুসলিম কিশোর ও ইহুদি প্রৌঢ়, পরভূমে তাঁদের যাপনে ছায়া ফেলে পশ্চিম এশিয়ার ধর্মীয়-রাজনৈতিক অস্থিরতা। রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে, পরে তাঁর কাছে ফিরতে চাওয়া অনুতপ্ত স্বামীর ইচ্ছেয় বাদ সাধে মসজিদের ইমাম। এ ভাবেই কি সম্পর্কের সুতো আলগা হয় ধর্মের ঘনায়মান ছায়ায়? তিনটি সিনেমা— কোপাইলট, কাদিশ ফর এ ফ্রেন্ড, ওরায়— খুঁজবে সেই উত্তর। সিনে সেন্ট্রাল ও গ্যোয়টে ইনস্টিটিউট–ম্যাক্সমুলার ভবন কলকাতার উদ্যোগ, ২০-২১ জুন নন্দন ৩-এ, ‘রিলিজিয়ন ইন সিনেমা’ উৎসবে।

ছক-ভাঙা

মেয়েদের সংগ্রাম, অপ্রাপ্তি, রুদ্ধ কণ্ঠ সামনে এনেছিলেন তিনি। ইসমত চুঘতাই উর্দু ভাষা-সাহিত্যের ছক-ভাঙা মুক্তচিন্তার পরিসরে বহুল আলোচিত। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি (কেসিসি)-তে তাঁরই ছ’টি ছোটগল্পের নাট্য-উপস্থাপনা ‘কাগজ় কে গুব্বারে’। ‘কাগজ়’ শব্দে সমাজে মেয়েদের ছিন্ন অবস্থানের আভাস, ‘গুব্বারে’ অর্থাৎ বেলুনে স্পষ্ট উড়ানের, মুক্তির ইঙ্গিত। নির্দেশক অনুভা ফতেপুরিয়া— মঞ্চে ও বড়পর্দায় কাজ করেছেন হাবিব তনভীর আলেক পদমসি অপর্ণা সেন সুমন মুখোপাধ্যায় প্রমুখের সঙ্গে, ‘পদাতিক’ নাট্যগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। পাঠ অভিনয় গান আবহে মঞ্চে ফুটে উঠবে ‘কুনওয়ারি’, ‘এক শওহর কে খাতির’, ‘ছুইমুই’, ‘ঘরওয়ালি’, ‘পেশা’, ‘ঘুংঘট’, এই ছ’টি আখ্যান।

সুরের ঝর্না

শচীন দেব বর্মণের সুরে রাজকুমারের নির্বাসন ছবির ৭৮ আরপিএম রেকর্ড, সুধীন দাশগুপ্তের সুরে বঙ্গবন্ধু স্মরণে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গানের রেকর্ড, উত্তম-সুচিত্রার গাওয়া গানের রেকর্ড। রাহুল দেব বর্মণের সুরে আশা ভোঁসলের পুজোর গানের প্রচারপত্র, লতা-হেমন্তের প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড, মণিহারা ছবিতে রুমা গুহঠাকুরতার কণ্ঠে ‘বাজে করুণ সুরে’র রেকর্ড। বিশ্ব সঙ্গীত দিবস উপলক্ষে কুড়ি জন বাঙালি সঙ্গীত পরিচালকের কীর্তি ‘সুরের ঝর্না’ প্রদর্শনীতে তুলে ধরেছে সেরাম থ্যালাসেমিয়া প্রিভেনশন ফেডারেশন। যতীন দাস রোডে উইজ়ডম ট্রি-তে শুরু হয়েছে গতকাল, ১৬ জুন পর্যন্ত, দুপুর ৩টে-রাত ৮টা। বাঙালি সুরকারদের সুরারোপিত ছবির পোস্টার থাকছে সুদীপ্ত চন্দের সংগ্রহ থেকে: মুক্তি, কাবুলিওয়ালা, সিস্টার, বাক্স বদল, জীবন সৈকতে, ইন্দ্রাণী, চৈতালি, ফুলেশ্বরী, মায়ামৃগ (ছবি)।

নগরচিত্র

“পৃথিবীর সব বড়ো শহরেরই বোধহয় সবচেয়ে বড়ো প্রেমিক তার কবিরা,” কবিতার কলকাতা বইয়ের সম্পাদক-ভাষে লিখেছিলেন অরুণ সেন। প্রিয় হোক কি অপ্রিয়, নিজের শহরের প্রতি প্রেমে চোখ মেলে থাকেন চিত্রশিল্পী-আলোকচিত্রীরাও, বললে ভুল হবে কি? সেই চিত্রকৃতি নিয়মিত চোখের সামনে আসে না বা থাকে না বলেই হয়তো জনপরিসরে কথা হয় না তত তাঁদের নিয়ে। এঁদের সামনে আনতে ‘ছবি ও ঘর’ আর্ট গ্যালারি আয়োজন করেছে ‘কলকাতা: মাই সিটি’ প্রদর্শনী: প্রায় আড়াইশো জন শিল্পীর পাঁচশোরও বেশি কাজ— আলোকচিত্র (ছবি), চিত্রকলা, বিবিধ মাধ্যমের শিল্পকৃতি। এই সব কিছুই কলকাতা ঘিরে, শিল্পীদের চোখে এ শহরের স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ-প্রতিমা। বিড়লা অ্যাকাডেমি অব আর্ট অ্যান্ড কালচার-এ ১৩ থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত, দুপুর ৩টা-রাত ৮টা।

প্রবাদপ্রতিম

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞানের কিংবদন্তি অধ্যাপক অরুণ কুমার শর্মা, সারা বিশ্বে আমন্ত্রিত হয়েও বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে অন্যত্র যাননি। ইন্দিরা গান্ধীর অনুরোধে ১৯৮১-তে পরিবেশ দফতরের মেম্বার সেক্রেটারি হয়ে দিল্লি যেতে রাজি হননি, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগের চেয়ে প্রিয় জায়গা তাঁর কাছে কিছু ছিল না। তাঁর একক প্রচেষ্টায় ইউজিসি-র সেন্টার অব অ্যাডভান্সড স্টাডি-র মর্যাদা পায় বিভাগ। জাতীয় সায়েন্স অ্যাকাডেমির সভাপতি, ১৯৬৭-তে পেয়েছেন শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার, ১৯৮৩-তে পদ্মভূষণ। প্রয়াত ২০১৭-তে, এ বছর তাঁর জন্মশতবর্ষ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এই উপলক্ষে বিভাগে তাঁর কক্ষটি মিউজ়িয়মে পরিণত করেছে। বিভাগের প্রাক্তনী সংগঠনের উদ্যোগে গত ৩ জুন হয়ে গেল এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন, উদ্ভিদবিজ্ঞানে জিনোম গবেষণার গুরুত্ব নিয়ে। ছাত্র, শিক্ষক, গবেষক ও প্রাক্তনীরা-সহ ছিলেন প্রায় দু’শো জন।

আরও পড়ুন
Advertisement