দুরাশা: পোড়া ঘরের ছাই হাতড়াচ্ছেন দুর্গাপুর সেতুর ঝুপড়ির এক বাসিন্দা। রবিবার, নিউ আলিপুরে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
আগুনে পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছেনিউ আলিপুরের দুর্গাপুর সেতুর নীচটা। রবিবার সেখানেই পোড়া বস্তির মধ্যে শেষ সম্বল হাতড়ে চলেছিলেন সব হারানো বাসিন্দারা। শনিবার সন্ধ্যার আগুনে ওই বস্তির সব ঝুপড়ি ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। কিছুই পাওয়ার আশা নেই। তবু আশা, যদি কিছু বেঁচে থাকে। সেই টানেই বাসিন্দা মুনমুন সরকারের মতো আরও অনেকে ছাই সরিয়ে সরিয়ে দেখে চলছিলেন।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বস্তির আশ্রয়হীনদের স্থানীয় স্কুল ও কলেজে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল প্রশাসন। তবু অনেক বাসিন্দাপোড়া বস্তিতেই রাত কাটিয়ে দেন। যাঁরা আশ্রয় শিবিরে থাকতে গিয়েছিলেন, রবিবার সকাল হতে না হতেই ছুটে আসেন তাঁরা। মোহিনী দাসের মতো অনেকেই জানালেন, দুশ্চিন্তায় চোখের পাতা এক করতে পারেননি। এ দিন পোড়া বাসন-আসবাব এক জায়গায় করছিলেন কাকলি দাস। জিনিস খুঁজতে তাঁকে সাহায্য করছিলেন স্বামী শ্রীকান্ত। কাকলির পাশেই খাঁচায় রয়েছে তাঁদের পোষা মুরগি আর পাখি। কাকলি বলেন, ‘‘অন্য কোথাও শুতে যাইনি। এখানেই ছিলাম। আমার স্বামী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওদের সমেত খাঁচাটা বার করে নিয়ে আসতে পেরেছিল।’’
তবে কাকলির মুরগি আর পাখি বাঁচলেও মারা গিয়েছে বিট্টু শেখের পোষা মুরগি। পেশায় গাড়িচালকবিট্টু বলেন, ‘‘কাজে গিয়েছিলাম।বাড়ি ফাঁকা ছিল। রাত সাড়ে ৯টায় ফিরে দেখি, সব পুড়ে গিয়েছে।মুরগিও খাঁচায় পুড়ে মরেছে।’’ দ্রুত সরিয়ে দেওয়ায় বেঁচে গিয়েছে বৃদ্ধা তরু হালদারের পোষা চারটি ছাগল। আগুন লাগতেই তরুছাগলগুলিকে ট্রেন লাইন পেরিয়ে নিরাপদ জায়গায় বেঁধে দিয়ে আসেন। যদিও নিজের বাড়ি-সহ সব কিছু হারিয়েছেন তিনি। বৃদ্ধা বলছেন,‘‘জল খাওয়ার একটা গ্লাসও অবশিষ্ট নেই।’’
স্থানীয়দের দাবি, আগুন লাগার পরে তেতে উঠেছিল দুর্গাপুরসেতুও। সেতুর মাঝখান দিয়ে ধোঁয়া উঠছিল। সেতুর লোহাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনার পর পরই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সেখানে গিয়েবলেছিলেন, ‘‘এটা রেলের জমি। সব ঝুপড়ি অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে।’’ এই মন্তব্য প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেন, তাঁদের ভোটার-আধার কার্ড রয়েছে। প্রীতি দাস নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘ভোটার-আধার কার্ড থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে বলা হচ্ছে অবৈধ ভাবে ছিলাম? তবে সেই সব কার্ড পুড়ে গিয়েছে। এখন অবৈধ তো বলবেই।’’
ঘটনাস্থলে গিয়ে আশ্রয়হীনদের শুকনো খাবার, জল, বাচ্চাদের দুধ বিতরণ করেন সিপিএম এবং কংগ্রেসের প্রতিনিধিদল। রাজ্য কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় বলেন,‘‘রাজ্য সরকারের কাছে দাবি, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কারণ, এই মানুষগুলি বহু দিন ধরে বাস করছেন। তাঁদের পরিচয়পত্র রয়েছে। ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রেলকেও।’’ তাঁর দাবি, আগুনে দুর্গাপুর সেতুরও ক্ষতি হয়েছে। সেফটি অডিট না হওয়া পর্যন্ত সেতু বন্ধ রাখা উচিত। স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি জুঁই বিশ্বাস পাল্টা বলেন, ‘‘আশ্রয়হীনদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা–সহ যা করার, সবই রাজ্য সরকার করেছে। তবে পুনর্বাসন রেলকেই দিতে হবে। কারণ, ওটা রেলের জমি।’’
যদিও ক্ষতিপূরণের দাবি উড়িয়ে রেল জানিয়েছে, ওখানে সকলেই দখলদার। তাঁদের হটানোর জন্য মাঝেমধ্যেই অভিযান চালানো হয়। পরে তাঁরা ফের এসে বসে পড়েন। দখলদারির ফলে যাত্রী সুরক্ষা এবং রেলের কাজেও সমস্যা হয়।