সন্দীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পদত্যাগী অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে এ বার আন্দোলনে নামলেন কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পডুয়াদের একাংশ। সোমবার সন্ধ্যা থেকেই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তাঁরা। তালা ঝোলানো হয়েছে অধ্যক্ষের জন্য নির্ধারিত ঘরে। আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের দাবি, কোনও অবস্থাতেই তাঁরা কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের নতুন অধ্যক্ষ হিসাবে সন্দীপকে মেনে নেবেন না।
জুনিয়র চিকিৎসকদের লাগাতার আন্দোলনের চাপে সোমবার সকালে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেছিলেন আরজি করের অধ্যক্ষ সন্দীপ। সেই সঙ্গে জানান, কারও চাপে নয়, স্বেচ্ছায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিকেল গড়াতে না গড়াতেই শহরের অন্য একটি মেডিক্যাল কলেজ, ন্যাশনালের অধ্যক্ষের পদে তাঁকে বহাল করে স্বাস্থ্যভবন। আর এত দিন কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যালে যিনি অধ্যক্ষ ছিলেন, সেই অজয়কুমার রায়কে বদলি করা হল স্বাস্থ্য ভবনে। সেখানে তিনি ওএসডি হিসাবে কাজ করবেন। সেই পদ অধ্যক্ষের পদমর্যাদারই। আর আরজি করের অধ্যক্ষ করা হল সুহৃতা পালকে। ঘটনাচক্রে, তিনি এত দিন স্বাস্থ্যভবনের ওএসডি পদে ছিলেন।
স্বাস্থ্যভবনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই নির্দেশ এখন থেকেই কার্যকর করা হচ্ছে। ওই বিজ্ঞপ্তি জারির পরেই ক্ষোভের আঁচ ছড়ায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। আরজি করের প্রাক্তন ছাত্র সন্দীপের বিরুদ্ধে হাসপাতালেরই একটি সূত্রের বক্তব্য, স্বাস্থ্যভবনে নিজস্ব ‘প্রভাব’ বিস্তার করেছিলেন সন্দীপ। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে তাঁকে একাধিক বার বদলি করা হলেও অল্প সময়েই তিনি ফিরে এসেছিলেন আরজি করের অধ্যক্ষের পদে। এক বার সন্দীপের পরিবর্তে উলুবেড়িয়ার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সনৎ ঘোষকে আরজি করে আনা হয়েছিল। কিন্তু কোনও এক ‘অজ্ঞাত’ কারণে অল্প সময়ের মধ্যে ফের সন্দীপ ফিরে আসেন।
দ্বিতীয় বার, গত সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পেন-দুবাই সফরের আগেই সন্দীপকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের অস্থি বিভাগে বদলি করা হয়েছিল। ২১ দিনের মাথায় আবার তিনি আরজি করে আসীন হন। আরজি কর হাসপাতালে নারকীয় কাণ্ড ঘটে যাওয়ার পর থেকেই আন্দোলনকারীদের নিশানায় সন্দীপ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ (যার সব ক’টিই অবশ্য তদন্ত এবং প্রমাণসাপেক্ষ) বিস্তর। অভিযোগ, ওই হাসপাতালে বিভিন্ন ‘দুষ্কর্মের’ সঙ্গে জড়িত থাকার।
ইস্তফা ঘোষণা করে সোমবার সাংবাদিকদের সামনে সন্দীপ বলেন, ‘‘আমার ইস্তফাই ছাত্র-ছাত্রীদের কাম্য ছিল। সারা রাজ্যের এটাই কাম্য ছিল বলে আমার মনে হয়েছে। আশা করব, এ বার ছাত্র-ছাত্রী এবং জুনিয়র চিকিৎসকেরা কাজে ফিরবেন। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন মাধ্যমে আমি যে কটূক্তি সহ্য করেছি, আমার পরিবার, সন্তানেরা যা সহ্য করেছে, তাতে বাবা হিসাবে আমি লজ্জিত। তাই আমি পদত্যাগ করলাম। আশা করি আপনারা ভাল থাকবেন।’’ এ বার সন্দীপকে আটকে ভাল থাকতে চাইছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ!