Murder Case

দক্ষিণেশ্বরের ইঞ্জিনিয়ার খুনে ধৃতদের নিয়ে পুনর্নির্মাণ করল পুলিশ

ধৃতেরা জানিয়েছে, ১২ জুন রাতে শেওড়াফুলি থেকে মোটরবাইকে চেপে বালি ব্রিজ হয়ে দক্ষিণেশ্বরে আসে সুদীপ ও সঞ্জীব। বাড়ি থেকেই প্লাস্টিকে মোড়া ভোজালি কোমরে গুঁজে নিয়ে এসেছিল।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২৪ ০৭:১৩

—প্রতীকী চিত্র।

বৈদ্যুতিক চুল্লিতে ভাইয়ের দেহ ঢোকানোর সময়ে ধরে রাখা যাচ্ছিল না দিদিকে। শোকে চিৎকার করে সেই তরুণী বলছিল, ‘ভাইয়ের সঙ্গে আমাকেও যেতে দাও।’ আর পাশে দাঁড়িয়ে তার স্বামীর আক্ষেপ ছিল, নেশার কারণেই খুন হতে হল শ্যালককে।

Advertisement

এমনই বিভিন্ন কৌশলে দক্ষিণেশ্বরের বাসিন্দা, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার অপূর্ব ঘোষের খুনের ঘটনার মোড় অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে চেষ্টা করেছিল তাঁর দিদি অলক্তিকা দাস ও জামাইবাবু সুদীপ দাস। আর খুনের ঘটনায় তাদের শাগরেদ সঞ্জীব পাত্র (সুদীপের মামা) ইতিমধ্যে বড়বাজারে নিজের কাজের জায়গাতেও পৌঁছে গিয়েছিল। যা এখন বিস্মিত করছে তদন্তকারীদের। রবিবার সুদীপ ও সঞ্জীবকে ঘটনাস্থলে নিয়ে এসে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করল দক্ষিণেশ্বর থানার পুলিশ।

ধৃতেরা জানিয়েছে, ১২ জুন রাতে শেওড়াফুলি থেকে মোটরবাইকে চেপে বালি ব্রিজ হয়ে দক্ষিণেশ্বরে আসে সুদীপ ও সঞ্জীব। বাড়ি থেকেই প্লাস্টিকে মোড়া ভোজালি কোমরে গুঁজে নিয়ে এসেছিল। দক্ষিণেশ্বর মোড় থেকে সোজা পথে ডোমেস্টিক এরিয়ার মে দিবস পল্লিতে তারা ঢোকেনি। বরং বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার রাস্তা দিয়ে গিয়ে দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশনের পাশের রাস্তা দিয়ে পৌঁছয় অপূর্বের বাড়ির সামনে। বাইক রেখে বেল বাজাতেই অপূর্ব এসে দরজা খোলেন। কিছু কথা আছে বলে দাবি করে তাঁর সঙ্গে দোতলায় ওঠে সুদীপেরাও। তবে সেই সময়ে সিঁড়িতেই রেখে দেয় ভোজালিটা।

ঘটনার পুনর্নির্মাণে ধৃতেরা তদন্তকারীদের জানিয়েছে, ঘরে গিয়ে প্রথমে তারা অপূর্বকে অলক্তিকার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে নিষেধ করে। তাদের দাবি, তাতে খেপে গিয়ে অপূর্ব ধাক্কা মারেন। এর পরেই সুদীপ সিঁড়ি থেকে ভোজালি নিয়ে এসে অপূর্বের চুলের মুঠি ধরে কপালে কোপ মারে। তাতে তিনি মেঝেতে পড়ে গেলে তাঁর গলা পিছন থেকে ধরে রাখে সুদীপ। আর ভোজালি দিয়ে অপূর্বের বুকে, পেটে, পায়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে সঞ্জীব। ঘরের চার দিকে রক্ত ছিটকে যায়। এর পরে অপূর্বের মোবাইল নিয়ে দু’জনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাইক নিয়ে চম্পট দেয়।

এ দিন ধৃতেরা তদন্তকারীদের দেখায়, বেরোনোর সময়ে কোন বাড়ির সামনে তারা মোবাইল ছুড়ে ফেলেছিল। পুলিশ আগেই সেখান থেকে মোবাইলটি উদ্ধার করেছে। মে দিবস পল্লির একটি অনুষ্ঠান বাড়ির পাশের গলি দিয়ে যাওয়ার সময়ে যে নিকাশি নালায় প্লাস্টিকে মোড়া ভোজালিটা ফেলেছিল, সেটিও দেখায় সঞ্জীব। তার পরে ওই গলির বাঁকে পুকুরে নিজের রক্ত লাগা জামা খুলে ফেলে দিয়েছিল বলেও দেখায় সুদীপ। এর পরে ওই গলি থেকে বেরিয়ে ফের বালি ব্রিজ হয়ে ফিরে যায়।

পুলিশ সূত্রের খবর, খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে একটি বাইকে দু’জন যুবককে যেতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ছবি স্পষ্ট না হওয়ায় সহজে মুখ বোঝা যাচ্ছিল না। ওই ছবি দেখে অলক্তিকা বার বার সেটি তার এক মামাতো ভাইয়ের ছবি বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছিল। অভিযোগ করে, ওই যুবকও নেশা করেন। সেই মতো প্রথমে পুলিশ তাঁকে আটক করে। কিন্তু খুনের দিন তাঁর মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দক্ষিণেশ্বরে ছিল না।

এ দিকে অলক্তিকাদের সঙ্গে গত ১ জুন অপূর্বের ঝামেলার কথা জানতে পারেন তদন্তকারীরা। তাতে সন্দেহ হওয়ায় সুদীপের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায়, খুনের দিন রাত ১১টা ১০ মিনিটে সে মে দিবস পল্লিতেই ছিল। এর পরেই জাল পেতে দু’দিনের মধ্যে তিন খুনিকে ধরে পুলিশ।

আরও পড়ুন
Advertisement