শিশুকে বিক্রি করা হয়েছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। —প্রতীকী চিত্র।
পার্ক স্ট্রিট থানা এলাকার রিপন স্ট্রিটের ফুটপাত থেকে ন’মাসের এক শিশুকে চুরির অভিযোগে এক মহিলা-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। সেই সঙ্গে ন’মাসের শিশুপুত্রটিকেও উদ্ধার করা হয়েছে। পার্ক স্ট্রিট থানার পুলিশ জানিয়েছে, টাকার বিনিময়ে ওই শিশুকে বিক্রি করা হয়েছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই শিশুটির পরিবার থাকে রাজারহাটের ইকো পার্ক থানা এলাকায়। তার এক আত্মীয় বলেন, ‘‘আমার বৌদি বৃহস্পতিবার সকালে রিপন স্ট্রিট এলাকায় কিছু কেনাকাটা করতে এসেছিলেন। সঙ্গে ছিল তাঁর দু’বছরের মেয়ে এবং আট মাসের ছেলে। ফুটপাতের একটি দোকানে ছেলে ও মেয়েকে পাশে রেখে খাচ্ছিলেন বৌদি। সেই সময়ে বৌদির ছেলে কোনও কারণে কান্নাকাটি করছিল। বৌদি আমাদের জানিয়েছেন, তখন পাশে বসা এক মহিলা বৌদির ছেলে-মেয়েকে সামলাতে নিজে থেকেই এগিয়ে আসেন। বৌদির কিছুটা অন্যমনস্কতার সুযোগ নিয়ে আট মাসের ছেলেকে নিয়ে পালান ওই মহিলা। আমরা এর পরেই ইকো পার্ক থানা এবং পার্ক স্ট্রিট থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করি।’’
পুলিশ তদন্তে নেমে ওই এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে। ফুটেজে দেখা যায়, রিপন স্ট্রিটের ওই ফুটপাত থেকে শিশুটিকে নিয়ে এক মহিলা অটোয় উঠছে। ওই শিশুটির এক আত্মীয় বলেন, ‘‘সিসি ক্যামেরার ওই ফুটেজ আমাদেরও দেয় পুলিশ। এর পরেই ওই ফুটেজ আমরাও বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দিই। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারি, নারকেলডাঙা এলাকায় ওই মহিলা থাকে। আমরা ওই তথ্য পুলিশকে দিই।’’
পার্ক স্ট্রিট থানার পুলিশ জানিয়েছে, নারকেলডাঙার খালধারের ঝুপড়ি থেকে অভিযুক্ত ওই মহিলা পরভিন বিবিকে রবিবার গ্রেফতার করা হয়। ধৃত পরভিনকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, নারকেলডাঙা এলাকার মিয়াঁজান লেনের বাসিন্দা এক দম্পতির হাতে সে শিশুটিকে তুলে দিয়েছিল। এর পরে অভিযান চালিয়ে এ দিনই অভিযুক্ত দম্পতি বিউটি সিংহ এবং রাজেশ সিংহকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শিশুটিকে তাদের কাছ থেকেই উদ্ধার করা হয়।
রবিবার রাতে ওই শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে তার মা বসে ছিলেন পার্ক স্ট্রিট থানায়। তিনি বলেন, ‘‘সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশ দিতেই সেখানে ওই মহিলাকে আমি চিনতে পারি। অনেক ক্ষণ ধরেই সে আমাদের পিছু নিয়েছিল। রিপন স্ট্রিটের ওই দোকানে নিজেই সাহায্য করতে আসে মহিলা। পরে জল আনতে যাওয়ার নাম করে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে কখন ছেলেকে নিয়ে চলে গিয়েছে, বুঝতে পারিনি।’’
প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, ধৃত দম্পতি তাদের শিশুটি দেওয়ার বিনিময়ে কোনও আর্থিক লেনদেন না-হওয়ার দাবি করলেও এই নিয়ে দু’পক্ষে কথা চলছিল। এর পিছনে কোনও চক্র কাজ করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।