ধর্মতলার অনশনমঞ্চে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা। — ফাইল চিত্র।
পুলস্ত্যের চিকিৎসার জন্য পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করা হয়েছে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে।
রবিবার রাতে অনশনমঞ্চ থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে (এনআরএস) নিয়ে আসা হয় পুলস্ত্যকে। তিনি ওই হাসপাতালেরই অ্যানাসথেশিয়া বিভাগের প্রথম বর্ষের পিজিট। সেখানে ভর্তি করানো হয়েছে তাঁকে। পুলস্ত্যকে গ্রিন করিডর করে নিয়ে আসা হয়েছে।
অনশনকারী পুলস্ত্য আচার্য অসুস্থ হয়ে পড়লেন। গত শনিবার থেকে ধর্মতলায় অনশন করছেন তিনি। রবিবার সন্ধ্যা থেকেই শরীর খারাপ হতে থাকে তাঁর। পেটে ব্যথা শুরু হয় তাঁর। অনশনমঞ্চেই পুলস্ত্যর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করেন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’-এর চিকিৎসকেরা। তার পরই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।
দেবাশিস বলেন, ‘‘যে বিশিষ্টজনেরা আমাদের অনশনকারীদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তাঁদের আবেগকে সম্মান জানাই। কিন্তু তাঁরা বলেছেন, নাগরিকসমাজের সক্রিয়তার প্রতি ভরসা রেখে অনশন প্রত্যাহার করতে। আন্দোলনকারীদের স্পিরিট কিন্তু এই জায়গায় নেই যে, কেউ মধ্যস্থতা করবেন বা তার ডাক দেবেন এবং তাঁরা অনশন থেকে উঠে যাবেন। এই জায়গায় তাঁরা নেই। আমাদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হলে বলব, আমাদের ১০ দফা দাবি তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিন। আমরা এ-ও মনে করি, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের এই দাবি নিয়ে আলোচনার জন্য মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন নেই।’’
আন্দোলনকারীদের তরফে দেবাশিস বলেন, ‘‘কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি বা কার্যকর্তা হিসাবে কেউ আসতে চাইলে তাঁরা এখানে স্বাগত নন। এটা ডাক্তারদের আন্দোলন যেমন নয়, এটা নাগরিক আন্দোলন। তাই নাগরিক হিসাবে দলীয় পতাকা বাদ দিয়ে, দলীয় স্বার্থ বাদ দিয়ে যাঁরা যাঁরা আন্দোলনের সংহতিতে পাশে আসতে চাইবেন, প্রত্যেককে স্বাগত জানাই। আজ নাগরিকেরা ভলান্টিয়ার হয়ে এগিয়ে এসেছেন। হাতে নো হর্ন ব্যানার নিয়ে ধর্মতলার মোড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, যাতে অনশনকারীরা শান্তিতে ঘুমাতে পারেন। দয়া করে কেউ দলীয় পতাকা নিয়ে আসবেন না।’’
আন্দোলনকারী দেবাশিস বললেন, ‘‘আমরা এত দিন অনশন করছি। বহু বিশিষ্ট জন এসেছেন। সিনিয়র ডাক্তারেরা এসেছেন। তাঁদের সংগঠন সোমবার কিছু কর্মসূচি নিয়েছেন। তাঁরা পেনডাউন করবেন বলে জানিয়েছেন। এই আন্দোলনকে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল। বলা হচ্ছিল, সরকারি হাসপাতালগুলিকে বন্ধ করার চেষ্টা হচ্ছিল। সেই সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালের মুনাফা বৃদ্ধির চেষ্টা হচ্ছে। যে সিনিয়র ডাক্তারেরা বেসরকারি হাসপাতালে কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমাদের সংহতিতে, তাঁদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।’’
আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে আদালতে চার্জশিট পেশ করা হয়েছিল। এই চার্জশিট অত্যন্ত দুর্বল। আমরা এই নিয়ে হতাশ। কলকাতা পুলিশ যাঁকে গ্রেফতার করেছিলেন, চার্জশিট তাঁর নাম রয়েছে। তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে আর দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের নাম নেই চার্জশিটে। এর থেকে আমাদের অনাস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে। এর আগে সিজিও কমপ্লেক্স অভিযান করেছি।’’ তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যপালের কাছে সিবিআইয়ের প্রতি ‘অনাস্থা’-র কথা জানাতে চান। সে কারণেই সোমবার দুপুরে সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপালের কাছে যাওয়ার জন্য রাজভবন অভিযানের ডাক দেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার প্রতিমা নিরঞ্জন উপলক্ষে রাজ্য সরকার আয়োজিত কার্নিভাল রয়েছে কলকাতার রেড রোডে। জেলাতেও রয়েছে কার্নিভাল। হাই কোর্ট জানিয়েছে, এই অনুষ্ঠানে বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, ওই কার্নিভালে বিঘ্ন না ঘটিয়েই মানববন্ধন করবেন তাঁরা। জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিসের কথায়, ‘‘মঙ্গলবার নাকি কার্নিভাল হবে। হাই কোর্টের রায়কে মান্যতা দিয়েই বলছি, আমাদের বিচারহীনতার ৬৫ দিন হয়েছে। আমাদের সহযোদ্ধারা এক দানাও না খেয়ে এখানে রয়েছেন। সেখানে কার্নিভালে মেতে উঠব সেই মানসিক অবস্থা নেই। বিঘ্নিতও করব না। পুলিশকে সুযোগ দিতে চাই না। কোনও প্ররোচনায় পা দেব না। যে দিন কার্নিভাল রয়েছে, সেদিন প্রত্যেক রাস্তার ধারে মানববন্ধন গড়ে তুলব। যাতে গাড়ি না আটকায়, বিশৃঙ্খলা না হয়, তা করব। জেলাতেও কার্নিভালের দিন পদযাত্রা, সভা, সমাবেশ করুন।’’
সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন তুললেন আন্দোলনকারীরা। সোমবার এই নিয়ে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হতে চলেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁরা রাজভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন।
রবিবার সন্ধ্যায় ধর্মতলায় অনশনমঞ্চে দাঁড়িয়ে আন্দোলনকারীরা বললেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কেন চুপ? আমরা তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাই।’’ আন্দোলনকারী দেবাশিসের কথায়, ‘‘ভাবতে কষ্ট হচ্ছে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এতটা অমানবিক হতে পারেন, সরকার এতটা অমানবিক হতে পারে যে, এত দিন হয়ে গেল, মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে কোনও কথা শুনতে পাচ্ছি না। আমরা শুনতে পাচ্ছি মুখ্যসচিবের থেকে একটা মেল, কোনও একটা কুণাল ঘোষ, কোনও ছুটকো-ছাটকার বিরূপ প্রতিক্রিয়া।’’
সিনিয়র ডাক্তারেরাও জুনিয়রদের পাশে আছেন। পাশে থাকার বার্তা দিতে গত কয়েক দিন ধরে তাঁরা প্রতীকী অনশন চালাচ্ছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা তাঁরা না খেয়ে বসে আছেন ধর্মতলার অনশনমঞ্চে।
এই মুহূর্তে ধর্মতলায় অনশন চালাচ্ছেন তনয়া পাঁজা, স্নিগ্ধা হাজরা, অর্ণব মুখোপাধ্যায়, পুলস্ত্য আচার্য এবং সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা। গত শনিবার রাত থেকে তাঁরা অনশনে। তাঁদের সঙ্গে দু’দিন আগে যোগ দিয়েছেন আলোলিকা ঘোড়ুই এবং পরিচয় পাণ্ডা। এ ছাড়া, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেও এক জন জুনিয়র ডাক্তার অনশনে বসেছেন।
রবিবার ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন নবম দিনে পড়ল। গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ধর্মতলায় টানা অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।