Fraudulence

জাল নথি ও পাঁচ লক্ষ টাকায় এসএসকেএমে চাকরির অভিযোগ, তদন্ত

স্বাভাবিক ভাবেই মনে করা হচ্ছে, স্বাস্থ্য ভবন এবং এসএসকেএমের বেশ কিছু ব্যক্তি ওই প্রতারকের সঙ্গে জড়িত। না হলে এত বড় প্রতারণার পরিকল্পনা ছকা অসম্ভব।

Advertisement
কেশব মান্না
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪ ০৫:৪৯
এসএসকেএম হাসপাতাল।

এসএসকেএম হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।

‘বিধায়ক কোটা’য় এসএসকেএম হাসপাতালে গ্রুপ-সি পদে চাকরি দেওয়ার নাম করে এক যুবকের কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ার এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

Advertisement

এ ক্ষেত্রে যে বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতর ও পুলিশকে চমকে দিয়েছে, তা হল, প্রতারক ওই যুবকের নকল ‘ইন্টারভিউ’-এর ব্যবস্থা করেছিল খোদ কলকাতার স্বাস্থ্য ভবনে! এর পরে সে স্বাস্থ্য দফতর তথা এসএসকেএমের নামে নকল নিয়োগপত্র এবং স্যালারি স্লিপও দিয়েছে!

এখানেই শেষ নয়। গত নভেম্বরে ওই প্রতারক নিজে ওই যুবককে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে এসএসকেএমের ‘ট্রেনি স্টোর কিপার’ পদে ‘নিয়োগ’ করে আসে! এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ততিনি সেখানে নিয়মিত কাজ করেছেন এবং হাজিরা খাতায় সইওকরেছেন! কিন্তু বেতন পেতে কয়েক মাস পেরিয়ে যাওয়ায় ওই যুবকের সন্দেহ হয়। তিনি তখন সব কাগজপত্র এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠান। কর্তৃপক্ষ যাচাই করে দেখেন, সব নথিই জাল!

স্বাভাবিক ভাবেই মনে করা হচ্ছে, স্বাস্থ্য ভবন এবং এসএসকেএমের বেশ কিছু ব্যক্তি ওই প্রতারকের সঙ্গে জড়িত। না হলে এত বড় প্রতারণার পরিকল্পনা ছকা অসম্ভব। হয়তো অন্য আরও হাসপাতালে এর জাল ছড়ানো বা বড় কোনও জালিয়াতি চক্র স্বাস্থ্যক্ষেত্রে তাদের ‘অপারেশন’ চালাচ্ছে।

কাঁথি থানার ইনস্পেক্টর ইন-চার্জ প্রদীপকুমার দাঁ-কে বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলেছেন কলকাতা পুলিশের উপ-নগরপাল (সাউথ ডিভিশন)। এফআইআর করেছে কাঁথি থানা। যদিও তার পরে তিন দিনেও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

প্রতারিত যুবকের নাম রবিশঙ্কর পতি। তিনি কাঁথি-১ ব্লকের বাগডিহা গ্রামের বাসিন্দা। হলদিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বি-টেক পাশ করেছেন। তাঁর দাবি, এক বন্ধুর মাধ্যমে গত বছর শিবপ্রসাদ সাউ নামে এক জনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। শিবপ্রসাদ খাদ্য দফতরে চাকরি করে বলে জানিয়েছিল এবং খাদ্য ও স্বাস্থ্য দফতরে তার খুব ভাল যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি করেছিল। পাঁচ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সে ‘বিধায়ক কোটা’য় স্বাস্থ্য ভবনে রবিশঙ্করের চাকরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

রবিশঙ্করের বাবা সুবিমল পতির কথায়, ‘‘করোনার সময়ে স্বাস্থ্য ভবনে কর্মী নিয়োগের একটি নির্দেশিকা জারি হয়েছিল। সেই নির্দেশিকার ভিত্তিতে গ্রুপ-সি পদে ছেলের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল শিবপ্রসাদ। আমরাও বিশ্বাস করে অনলাইনে ওকে পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। রীতিমতো চিঠি দিয়ে স্বাস্থ্য ভবনে ছেলেকে ইন্টারভিউয়ে ডাকা হয়েছিল। তার পরে নিয়োগপত্রও দেওয়া হল। ফলে আমাদের কোনও সন্দেহই হয়নি।’’

রবিশঙ্কর বলেন, ‘‘প্রথমে বলা হয়েছিল, ছ’মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তার পরে পাকা চাকরি হবে। কিন্তু গত বছরের পয়লা নভেম্বর চাকরিতে ঢোকার পরে বেতন ও স্যালারি স্লিপ হাতে পেলাম এ বছরের ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে। তখনই সন্দেহ হয়। আমাকে এসএসকেএমে কোনও কাজও দেওয়া হত না। শুধু বসিয়ে রাখা হত। তাতে সন্দেহ আরও বাড়ে।’’

এর পরেই তিনি চাকরি সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র ইমেল করেন এসএসকেএম হাসপাতালের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। গত ২ জুলাই এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, সবই ভুয়ো। তার পরে রবিশঙ্কর ভবানীপুর থানায় এফআইআর করেন। ১০ জুলাই এ ব্যাপারে কলকাতা পুলিশের উপ-নগরপাল (সাউথ ডিভিশন) একটি চিঠি পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সৌমদীপ ভট্টাচার্যকে পাঠান। তার পরেই নড়েচড়ে বসে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ।

উল্লেখ্য, দিনকয়েক আগে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভুয়ো শংসাপত্র জমা দিয়ে চাকরি পাওয়ার অভিযোগে কল্যাণ মাইতি নামে এক সহকারী সুপারকে ইতিমধ্যে বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য দফতর। তার পরেই স্বাস্থ্য দফতরে আর একটি জালিয়াতির হদিস মিলল। এসএসকেএম হাসপাতালের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনেক বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তবে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তুভ নায়েক বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে এসএসকেএমের অধিকর্তার কাছে খোঁজখবর নিচ্ছি। তার পরে নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হবে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement