মঙ্গলবার কলকাতার মেছুয়ায় একটি হোটেলে আগুন। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতার বড়বাজারের মেছুয়ার ফলপট্টির এক হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে
হয়েছে ১৪। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন ১১ জন পুরুষ, এক মহিলা এবং দুই শিশু। পুলিশ সূত্রে খবর ১৪ জনের মধ্যে ৮ জনের দেহ শনাক্ত করা হয়েছে। বাকিদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। এই ঘটনায় আহতের সংখ্য়া ১৩। তাঁদের মধ্যে ১২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি এক জন। মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আহতদের ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেওয়া হবে ৫০ হাজার টাকা।
কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মা জানিয়েছেন, কী ভাবে আগুন লাগল তা খতিয়ে দেখার জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়েছে। তদন্তপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বুধবার ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক দলের আসার কথাও রয়েছে। তারা পুরো ঘটনাটি তদন্ত করে দেখবে। কোনও গাফিলতি ছিল কি না, কেন আবাসিকদের বার করা গেল না, সব কিছু তদন্ত করে দেখা হবে বলেও জানিয়েছেন বর্মা।
বুধবার সকালে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও। নিজের এক্স হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘‘বড়বাজারের অগ্নিকাণ্ডে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। হোটেলে দাহ্য পদার্থ মজুত থাকার কারণেই এত জনের মৃত্যু হয়েছে। সারা রাত ধরে আমি উদ্ধারকাজের খোঁজখবর নিয়েছি। এলাকায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় দমকলের ইঞ্জিন মোতায়েন করারও ব্যবস্থা করেছি। ঘটনার তদন্ত করা হবে। নিহতদের পরিবারের প্রতি আমার সহমর্মিতা রইল।’’
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ মধ্য কলকাতার মেছুয়ার ফলপট্টির ওই হোটেলে আগুন লাগে। দমকলের ১০টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায়। প্রায় ৮ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। বুধবারেও চলছে উদ্ধারকাজ। পুলিশ জানিয়েছে, ছ’তলার ওই হোটেলের দোতলায় আগুন লেগেছিল। তার পর সেই আগুন অন্য তলেও ছড়িয়ে পড়ে। হোটেলের ৪২টি ঘরে তখন ৮৮ জন ছিলেন।
সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ এবং বিধান সরণির সংযোগকারী এই রাস্তায় এই হোটেল। রাস্তাটি বেশ ঘিঞ্জি। যে হোটেলে আগুন লেগেছে তার আশপাশে প্রচুর দোকান ও বাড়ি রয়েছে। ফলে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। তার আগেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে দমকল। ঘটনাস্থলে ভোর ৩টে পর্যন্ত ছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম, কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মা এবং রাজ্যের নারী এবং শিশু কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা।
পুলিশ সূত্রে খবর, আনন্দ পাসোয়ান নামে এক ব্যক্তি আগুন থেকে বাঁচতে হোটেলের কার্নিস থেকে নীচে ঝাঁপ দেন। আহত অবস্থায় তাঁকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রবল ধোঁয়ার জেরে হোটেলটি ‘গ্যাসচেম্বার’-এ পরিণত হয়। যার ফলে হোটেলের ভিতরে দমকল কর্মীরা ঢুকতে পারছিলেন না। তাঁরা মই দিয়ে চার ও পাঁচ তলার ঘরের জানলা ভেঙে সেখানে দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন। তার পর একে একে হোটেলের আবাসিকদের উদ্ধার করেন।
আতঙ্কিত হয়ে বেশ কয়েক জন হোটেলের কার্নিসে চলে আসেন। দমকলের মই দিয়ে তাঁদেরকে নামানো হয়। জানা গিয়েছে, হোটেলে ছিলেন এ রাজ্যের এবং ভিন্রাজ্যের বাসিন্দারা।