—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
তৃণমূল কংগ্রেসের হাতেই কলকাতার ফুটবলে দলীয় রাজনীতির রং লেগে যাওয়ার অভিযোগ উঠল। ময়দানের ইতিহাসে ‘নজির’ গড়ে বিধানসভা উপনির্বাচনে এক তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নেমে পড়লেন ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান এবং মহামেডানের তিন কর্তা। একই ধরনের বার্তা দিয়েছেন রাজ্যে ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা আইএফএ-র সচিব অনির্বাণ দত্তও। খেলার ময়দানে রাজনীতির এই ‘সংক্রমণ’ নিয়ে বিতর্কও শুরু হয়ে গিয়েছে।
আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান এবং মহামেডানের জার্সি পরে সমর্থকেরা স্লোগান তুলেছিলেন, ‘তিন প্রধানের একই স্বর, জাস্টিস ফর আর জি কর’। কিন্তু এ বার ক্লাবগুলির তিন কর্তা দলীয় রাজনীতির অংশীদার হয়ে নৈহাটির তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে’র প্রশংসা করেছেন।
১৩ নভেম্বর রাজ্যে নৈহাটি-সহ ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে। ওই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী সনৎ স্থানীয় স্তরে ক্রীড়াপ্রেমী হিসাবে পরিচিত। সেই সূত্রে সোমবার তৃণমূলের এক্স হ্যান্ডলে প্রচারিত এক ভিডিয়োয় ইস্টবেঙ্গল-কর্তা দেবব্রত সরকার বলেছেন, ‘সনৎ ভাল সংগঠক। যখনই মাঠ ইত্যাদির ব্যাপারে প্রয়োজন হয়েছে, তিনি সহযোগিতা করেছেন।’ মোহনবাগানের দেবাশিস দত্ত বলেছেন, ‘যখনই মোহনবাগান নৈহাটিতে খেলতে গিয়েছে, তখনই ওঁর সাহায্য পেয়েছি।’ মহামেডানের এম কামরুদ্দিন, আইএফএ-র সচিব অনির্বাণও একই বার্তা দেন।
ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘যে কেউ ব্যক্তিগত মতামত দিতে পারেন। মনে হয় না, এঁরা ক্লাবের হয়ে বক্তব্য রেখেছেন। এটা ক্লাবের বক্তব্য হলে আমার আপত্তি আছে। ক্লাবে রাজনীতি ঢোকানো উচিত নয়।’’ আর সুব্রত ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘ফুটবল খেলাটা মাঠে হবে। সেখানে রাজনীতি ঢোকানো উচিত নয়। ধীরেন দে, জ্যোতিষ গুহের আমলে কখনও তা দেখা যায়নি।”
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী চিঠি লিখে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী মনসুখ মান্ডবিয়ার হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। এই ঘটনায় তদন্ত দাবি করে শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘ক্লাব ও ক্রীড়া প্রশাসনের সঙ্গে যুক্তদের এই ভূমিকা নির্বাচনী বিধিভঙ্গের শামিল।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী মনে করিয়েছেন, ‘‘প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি এআইএফএফ-এর সভাপতি ছিলেন। কিন্তু তিনি যখন কংগ্রেসের হয়ে ভোটে লড়তেন, সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থার কেউ তাঁর পক্ষে বিবৃতি দেননি।’’ সিপিএমের নেতা সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘তিন প্রধানের সমর্থকেরা আর জি কর-কাণ্ডে বিচারের দাবি তুলেছিলেন। ক্লাবের কর্তারা সমর্থকদের বিরুদ্ধেই কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করলেন।’’
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের অবশ্য মন্তব্য, ‘‘সনৎ দে ক্রীড়াপ্রেমী। এত হইচই করার কী আছে?’’ তিন প্রধানের সমর্থকদের আন্দোলনের দিকে ইঙ্গিত করে তাঁর বক্তব্য, ‘‘যাঁরা তিন ক্লাবের জার্সি পরিয়ে সমর্থকদের দিয়ে যা খুশি করিয়েছেন, তখন তো তাঁদের রাজনীতি করা হচ্ছে বলে মনে হয়নি!’’ যদিও বিরোধীদের পাল্টা প্রশ্ন, সমর্থকদের প্রতিবাদ ও ভোটপ্রার্থীর সমর্থনে ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের মুখ খোলা কি এক?