— প্রতীকী চিত্র।
শহরে ফের ‘হিট অ্যান্ড রান’-এর অভিযোগ উঠল। বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে এক ভ্যানচালককে ধাক্কা মেরে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল কাশীপুর থানার পুলিশ। ধৃতের নাম দেবজিৎ বিশ্বাস। তিনি আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক বলে জানা গিয়েছে। গাড়ির ধাক্কায় আহত ভ্যানচালকের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার বিকেলে বি টি রোডে মারবাগানের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে। শ্যামবাজার থেকে সিঁথির মোড়ের দিকে যাওয়ার সময়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়িটি একটি ভ্যানে ধাক্কা মারে। গাড়ির ধাক্কায় ভ্যান উল্টে রাস্তায় পড়ে যান সেটির চালক। যদিও গাড়ির চালক না থেমে দ্রুত গতিতেই এগিয়ে যেতে থাকেন বলে অভিযোগ। পরে সামনে গিয়ে তিনি আরও একটি গাড়িতে ধাক্কা মারেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। এর পরে ঘটনাস্থলে গাড়ি ফেলে চম্পট দেন চালক।
এ দিকে, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কাশীপুর থানার পুলিশ এসে আহতকে উদ্ধার করে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় জগদীশ নামে ওই ভ্যানচালকের। তাঁর বাড়ি উত্তরপ্রদেশে। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘ভ্যানচালক বি টি রোডে উঠছিলেন। সেই সময়ে বেপরোয়া গতিতে এসে গাড়িটি ধাক্কা মারে। এর পরে না থেমে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়িতেও ধাক্কা মারে সেটি। গাড়িটি ফুটপাতে উঠে গেলে বড় বিপদ ঘটত।’’
এ দিকে, ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং গাড়ির নম্বর খতিয়ে দেখে তথ্য অনুসন্ধান করে রাতেই চালক দেবজিৎকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দেবজিৎ পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি চিকিৎসক। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দেবজিৎ এ-ও দাবি করেছেন, চোখ লেগে যাওয়ার ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ইতিমধ্যেই গাড়িটি আটক করে থানায় নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। দুর্ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে লালবাজারের ফেটাল স্কোয়াড। চালক মত্ত অবস্থায় ছিলেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে খবর। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘বেপরোয়া গতি, না কি এই দুর্ঘটনার পিছনে অন্য কারণ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে গাড়িটি পরীক্ষা করা হবে।’’
রবিবার দেবজিৎকে শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে তিনি জামিন পান। তাঁর বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছিল। যা জামিন-যোগ্য অপরাধ। অভিযুক্তের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে আইনজীবীরা বলেন, এক টানা ৪৮ ঘণ্টা কাজ করেছিলেন দেবজিৎ। ক্লান্তিতে অনিচ্ছাকৃত ভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাই তাঁকে জামিন দেওয়া হোক।
প্রসঙ্গত, বছর দেড়েক আগে উত্তর বন্দর থানা এলাকায় একই ভাবে ‘হিট অ্যান্ড রান’-এর অভিযোগ উঠেছিল। এক কিশোরকে ধাক্কা দিয়ে প্রায় ২০ মিটার টেনে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ। সেই ঘটনাতেও মৃত্যু হয়েছিল কিশোরের। পরে গ্রেফতার হয়েছিল গাড়িচালক। দেশ জুড়ে এমন ‘হিট অ্যান্ড রান’ আটকাতে কড়া আইনের পথে হেঁটেছে কেন্দ্র। কিন্তু এমন ঘটনায় যে লাগাম পড়েনি, শনিবারের ঘটনায় কার্যত তা-ই প্রমাণ হল বলে মনে করছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।