আরজি করের সামনে অপর্ণা সেন। ছবি: সংগৃহীত।
আরজি করে আন্দেলনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে গেটের বাইরে বিক্ষোভের মুখে পড়লেন অভিনেত্রী অপর্ণা সেন। বিক্ষোভকারীরা নিজেদের সিপিএম কর্মী বলে পরিচয় দিয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকালে শ্যামবাজার মোড় থেকে আরজি কর পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন বিদ্বজ্জনেদের একাংশ। অপর্ণা সেই মিছিলের ডাকে অন্যতম স্বাক্ষরকারী। ‘শারীরিক অসুস্থতার কারণে’ তিনি মিছিলে না হেঁটে সরাসরি পৌঁছে যান আরজি করে। পৌঁছনো মাত্রই হাসপাতালের বাইরে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি তাঁকে লক্ষ্য করে ‘চটিচাটা বুদ্ধিজীবীরা দূর হটো’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। মুহূর্তেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অপর্ণা অবশ্য তাৎক্ষণিক ভাবে এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়াই ব্যক্ত করেননি। তিনি ভিতরে ঢুকে যান আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে। বিক্ষোভকারীদের গেটে আটকে দেয় পুলিশ। আন্দোলনকারীরাও সতর্ক ছিলেন, যাতে বিক্ষোভকারীদের কেউ আরজি কর চত্বরে ঢুকে পড়তে না পারেন।
বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য ছিল অপর্ণা কেন দেরি করে এসেছেন, প্রথমেই কেন মুখ খোলেননি, কেন সব বিষয়ে প্রতিবাদ করেন না তিনি, আজকে কেন এসেছেন ইত্যাদি। অপর্ণা গাড়ি থেকে নামা মাত্রই তাঁরা একযোগে তাঁকে উদ্দেশ্য করে ‘চটিচাটা’ বলে আক্রমণাত্মক স্লোগান দিতে থাকেন। প্রশ্ন করতে থাকেন, ‘‘এতদিন কোথায় ছিলেন উনি?’’
মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলার পর অপর্ণা বলেছেন, ‘‘আমি কলকাতার এক জন নাগরিক হিসাবে এখানে এসেছি। আন্দোলনের যে দাবি, তার একশো শতাংশের সঙ্গে আমি একমত।’’ পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অভিনেত্রী। দাবি করেন, আরজি করে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় পুলিশি ভূমিকা নিয়েও অবিলম্বে তদন্ত হওয়া দরকার। অপর্ণাদের দাবি, রাজ্য সরকার যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নিক।
উপস্থিত আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে অপর্ণা বলেন, ‘‘আমার কণ্ঠ তোমাদের কণ্ঠস্বরের সঙ্গে মেলাতে এলাম। তোমাদের দাবির সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘অপরাধীদের ধরতে পারলে তাদের কঠোর, কঠিন শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। পুলিশের জবাবদিহি করার প্রয়োজন আছে। কেন প্রথমে আত্মহত্যা বলা হল? কার নির্দেশে? পুলিশ কেন তক্ষুনি ময়নাতদন্তের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠল? যে হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটেছে, সেখানেই কেন ময়নাতদন্ত করা হয়েছে? এই সব প্রশ্নের জবাব চাই। আমাদের দাবি, পুলিশের ভূমিকা নিয়েও তদন্ত হোক।’’
প্রসঙ্গত, আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে সরব হয়েছেন বিভিন্ন দেশে থাকা বাঙালি চিকিৎসকেরাও। ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ মঞ্চ ‘চেঞ্জ.ওআরজি’র মাধ্যমে শুরু হয়েছে বিশ্বব্যাপী স্বাক্ষর সংগ্রহ। সেখানে ব্রিটেন, আমেরিকা এবং কানাডায় বসবাসকারী বাঙালি চিকিৎসকদের পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে একটি স্মারকলিপি পোস্ট করেছেন ওই ওয়েবসাইটে। মহিলা চিকিৎসকদের নিরাপত্তার বিষয়টি যাতে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় সেখানে সেই আর্জি জানানো হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের নিরাপত্তা-সহ সব রকমের সুযোগসুবিধা দেওয়ার আবেদনও জানানো হয়েছে।