Cyclone Remal Effect

গুঁড়িয়ে গিয়েছে ঘর, অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে রাত কাটল সেফ হাউসে

ঘূর্ণিঝড় রেমালের রোষ থেকে বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দাদের বাঁচাতে পুরসভা এবং পুলিশের তরফে তাঁদের জন্য এলাকা-ভিত্তিক সাময়িক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রবিবার ঝড়ের আগে একাধিক পরিবারকে সেই সমস্ত আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

Advertisement
চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৪ ০৮:২৮
রেমালের জেরে ভেঙেছে বাড়ির একাংশ। স্থানীয় ক্লাবে ঠাঁই মিলেছে বাসিন্দাদের। সোমবার, শোভাবাজার এলাকায়।

রেমালের জেরে ভেঙেছে বাড়ির একাংশ। স্থানীয় ক্লাবে ঠাঁই মিলেছে বাসিন্দাদের। সোমবার, শোভাবাজার এলাকায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

‘‘আমাদের বাড়ি বিপজ্জনক নয় বলে রাতে আর অন্য কোথাও যেতে হবে না ভেবেছিলাম। কিন্তু পাশের বাড়ির উপরে ভেঙে পড়া গাছ যে আমাদের ঘরও ভেঙে দেবে, তা কী করে জানব? রাতে শেষমেশ যখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছি, তখন ঝমঝম করে বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে প্রবল ঝড়। কোনও মতে প্রাণ হাতে করে এক কাপড়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। ঘর মেরামত করে কবে আবার ফিরতে পারব, জানি না।’’ শোভাবাজার এলাকায় হাটখোলা বাজার ডাকঘর সংলগ্ন একটি ক্লাবের দোতলায় বসে কথাগুলি বলছিলেন প্রৌঢ়া কল্পনা সিংহ। গাছ পড়ে বাড়ি ভেঙে যাওয়ার কারণে কল্পনার মতোই আরও কয়েকটি পরিবারকে সেখানে এনে রাখা হয়েছে জোড়াবাগান থানা এবং পুরসভার তরফে। পুটেকালীতলা মন্দির সংলগ্ন ক্লাবে দোতলার সেই ঘরেই আপাতত মিলেছে মাথা গোঁজার একচিলতে ঠাঁই।

Advertisement

নিজেদের ঘর থেকে প্রায় কিছুই বার করে আনতে পারেননি অনেকে। ক্লাবের ঘরে বসে সে কথা বলতে গিয়ে মমতা সাহা নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘আমরা স্বামী-স্ত্রী, দু’জনেই অসুস্থ। এক বেলাও কাজ না করলে খাওয়া, ওষুধ কিছুই জোটে না। ঘর থেকে কিছুই বার করে আনতে পারিনি। সকালে গিয়েছিলাম। ঘরে ঢোকার মতো অবস্থা নেই। সব শেষ হয়ে গেল!’’ পুরপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় থানার তরফে আপাতত এই দুর্গতদের পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থা করা হয়েছে খাওয়াদাওয়ারও। কিন্তু কত দিন? এই প্রশ্নই ঘুরছে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ক্লাবের ঘরে ঠাঁই পাওয়া পরিবারগুলির অন্দরে।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের রোষ থেকে বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দাদের বাঁচাতে পুরসভা এবং পুলিশের তরফে তাঁদের জন্য এলাকা-ভিত্তিক সাময়িক আশ্রয়ের (সেফ হাউস) ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রবিবার ঝড়ের আগে একাধিক পরিবারকে সেই সমস্ত আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বিপদের আশঙ্কায় আলিপুর জেল মিউজ়িয়াম সংলগ্ন পুরসভার আবাসনের বাসিন্দা, ৩০টি পরিবারের প্রায় ১৫০ জনকে পাশের স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল রবিবার বিকেলে। সেখানেই তাঁরা ঝড়ের রাতটা কাটান। পরদিন, অর্থাৎ সোমবার সকালে তাঁদের অধিকাংশই ফিরে যান আবাসনে। এ দিন সকালে ওই স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, ঘর ফাঁকা। রাতে যাঁরা সেখানে ছিলেন, পুরসভার তরফেই তাঁদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ দিন সকালেও খাবার দেওয়া হয় তাঁদের। অধিকাংশ বাসিন্দাই জানালেন, সকালে তাঁরা বাড়ি ফিরেছেন জিনিসপত্র পাহারা দিতে। এমনই এক জন স্থানীয় বাসিন্দা পরমেশ্বর দাস বললেন, ‘‘বিকেল হলে সকলেই আবার স্কুলের ঘরে ফিরে যাব। বাড়ি ভর্তি জিনিসপত্র রয়েছে। চুরি গেলে কে দেখবে? দিনের বেলায় ঝড় হচ্ছে না দেখে আমরা আবাসনে ফিরে এসেছি।’’ গিরিশ পার্কের সরকার লেনের তেতলার
একটি বাড়ির বাসিন্দাদের আবার পাশের কমিউনিটি হলে রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আগে থেকে তাঁরা সেখানেই রয়েছেন।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে একাধিক ‘সেফ হাউস’ তৈরি করা হলেও তিনটি সেফ হাউসে বাসিন্দাদের রাখা হয়েছে। মোট ১৬৮ জন সেখানে রাত কাটান। তবে, এ দিন তাঁদের বড় অংশই নিজেদের বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন বলে খবর। পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দুর্গতদের জন্য পুরসভার তরফে সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু, অনেকেই পরদিন সকালে সেফ হাউস থেকে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। বাকি যাঁরা থাকছেন, তাঁদের জন্য সব রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে পুরসভার তরফে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement