আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে চলছে ‘দ্রোহের গ্যালারি’-র প্রস্তুতি। — নিজস্ব চিত্র।
ধর্মতলার অনশন মঞ্চ থেকে কাজে ফিরলেও রাজ্যের জুনিয়র ডাক্তারদের ফ্রন্ট (জেডিএফ) জানিয়েছিল, নির্যাতিতার জন্য ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত রাজপথ তারা ছাড়ছে না। সেই মতো আরজি কর-কাণ্ডের তিন মাস পার হওয়ার দিনে, শনিবার তিন কর্মসূচি নিয়ে পথে নামছেন ফ্রন্টের সদস্যেরা। পাশে রয়েছে ‘অভয়া মঞ্চ’। পিছিয়ে নেই আর এক সংগঠন জুনিয়র ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশন (জেডিএ), জন্মলগ্নেই যাদের বিরুদ্ধে ‘হুমকি সংস্কৃতি’তে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছিলেন ফ্রন্টের সদস্যেরা। দুই সংগঠনের সংঘাত এ বার রাজপথ এবং মঞ্চে। আরজি কর-কাণ্ডের তিন মাস পূরণের দিনে, শনিবার গণ কনভেনশনের ডাক দিয়েছে জেডিএ। তাদেরও প্রধান দাবি, নির্যাতিতার জন্য ন্যায়বিচার।
ফ্রন্টের সদস্যেরা অনশন প্রত্যাহার করে কাজ, পড়াশোনায় ফিরেছেন। সামনেই তাঁদের পরীক্ষা। বার বার প্রশ্ন উঠেছে, আন্দোলন এ বার কোন পথে? যদিও আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা বার বার জানিয়েছেন, তাঁদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত পথে থাকবেন। শনিবার আরজি কর-কাণ্ডের তিন মাস পার হওয়ার দিনে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে ‘দ্রোহের গ্যালারি’ করার ডাক দিয়েছেন ফ্রন্টের সদস্যেরা। সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের বিভিন্ন ছবি, পোস্টার, ব্যানার, কবিতা, শিল্প, স্থাপত্য প্রদর্শিত হবে রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে। ফ্রন্টের সদস্যেরা জানিয়েছেন, এর মাধ্যমে আন্দোলনের বিভিন্ন মুহূর্ত এবং মূল বিষয়টিকে ধরে রাখা হবে।
নির্যাতিতা চিকিৎসকের জন্য ন্যায়বিচারের দাবিতে শনিবার দুপুর ৩টের সময় কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছেন ফ্রন্টের সদস্যেরা। ওই মিছিলে দ্রুত তদন্তপ্রক্রিয়া শেষ করার দাবিও তোলা হবে। জুনিয়র ডাক্তারদের ফ্রন্টের সদস্যেরা শুধু শহর নয়, জেলার মানুষজনকেও প্রতিবাদে শামিল হয়ে পথে নামার ডাক দিয়েছেন।
শনিবার দুপুরে ধর্মতলায় ‘জনতার চার্জশিট’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ‘অভয়া মঞ্চ’। কয়েক সপ্তাহ আগে আরজি কর-কাণ্ডের বিচারের দাবিতে এক হয়ে ‘অভয়া মঞ্চ’ তৈরি করেছিল ৮০টিরও বেশি সংগঠন । তারাই ‘জনতার চার্জশিট’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে, যেখানে পথনাটক, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বিষয়ের মধ্যে দিয়ে চলবে প্রতিবাদ।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। তাতে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় নাম রয়েছে একমাত্র ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের। শিয়ালদহ আদালতে চার্জ গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা সিবিআইয়ের এই চার্জশিট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এই নিয়ে সাধারণ মানুষ কী ভাবছেন, তা-ই তুলে ধরা হবে ‘জনতার চার্জশিট’-এ। ‘অভয়া মঞ্চ’-এর সদস্যেরা ফ্রন্টের সমর্থনে কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলেও থাকবেন।
একই দিনে গণ কনভেনশনের ডাক দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরা। স্টার থিয়েটারে হবে সেই কনভেনশন। সেখানে নির্যাতিতার জন্য বিচার চাইবেন তাঁরা। এর আগে গণ কনভেনশন করেছেন ফ্রন্টের সদস্যেরাও। বড় জায়গায় সেই কনভেনশন করতে চেয়ে অনুমতি চাইলেও তা পাননি বলে অভিযোগ করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। শেষ পর্যন্ত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সেমিনার হলেই গণ কনভেনশন করেছিলেন তাঁরা। এ বার স্টার থিয়েটারে গণ কনভেনশন করার অনুমতি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরা কী ভাবে পেলেন, সেই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে ফ্রন্টের একাংশ। এ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের দাবি, হাসপাতালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, রোগীদের সমস্যা হতে পারে, সেই সব কারণেই বাইরে গণ কনভেনশনের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, এই কনভেনশন আয়োজন করার জন্য তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই নিয়ে তাঁরা আঙুল তুলেছেন অন্য পক্ষের দিকে।
অন্য দিকে, আরজি কর পর্বে সিপিএম ঘোষণা করেছিল, মহিলা আইনজীবীদের দল গড়বে তারা। সিপিএমের সেই আইনজীবী সেলকে নারী নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ জানালে, তারা আইনি পদক্ষেপে সহায়তা করবে। সে বিষয়েই শনিবার ‘তিলোত্তমা ড্রপ বক্স’ চালু করছে সিপিএম। সিপিএমের বিভিন্ন দফতরে এই ড্রপ বক্স থাকবে। সেখানে নির্যাতিত মহিলারা আইনি সহায়তার আবেদন করতে পারবেন। দলের ছাত্র-যুব সংগঠনকে বলা হয়েছে, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের ‘ড্রপ বক্স’ বসাতে হবে।