Agitation at Nandigram

আন্দোলনে রেল প্রকল্পের জমিদাতারা

গত কয়েক দিন ধরে নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের বড়াচিরা, রুক্মিণীপুর এলাকায় প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়েন দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:১১
বাজকুলে জাতীয় সড়ক অবরোধ জমিদাতাদের।

বাজকুলে জাতীয় সড়ক অবরোধ জমিদাতাদের। নিজস্ব চিত্র।

এক সময় জমি আন্দোলনের সাক্ষী থাকা নন্দীগ্রামে এবার রেল প্রকল্পের কাজ ঘিরে বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু হল। দেশপ্রাণ থেকে নন্দীগ্রাম পর্যন্ত দীর্ঘদিন ধরে থমকে থাকা রেল প্রকল্পের কাজ দেখতে গিয়ে বৃহস্পতিবার জমিদাতা পরিবারের সদস্যদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের একটি প্রতিনিধি দল। তবে সেই বিক্ষোভের জেরে খানিকটা সুরাহার দিকেও এগিয়েছে রেল প্রকল্প।

Advertisement

গত কয়েক দিন ধরে নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের বড়াচিরা, রুক্মিণীপুর এলাকায় প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়েন দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার। জমি দেওয়ার পরেও চাকরি এবং ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি বলে কাজ করতে বাধা দেন অনেকে। সর্বশেষ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এ দিন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার অনিল কুমার মিশ্রের নেতৃত্বে এক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল নন্দীগ্রামে যায়। স্টেশনে রেলের আধিকারিকদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান জমিদাতা পরিবার এবং স্থানীয়দের একাংশ। শেখ সহিদুজ্জামান নামে এক জমিদাতা বলেন, ‘‘কয়েকজন শরিক মিলে আমরা এক একরের বেশি জমি দিয়েছিলাম নন্দীগ্রাম রেল প্রকল্পের জন্য। এখনও ক্ষতিপূরণের টাকার ২০ শতাংশও পাইনি পাইনি। পরিবার-পিছু এক জনের চাকরির শর্তও পূরণ করা হয়নি।’’

এর আগে রেলের আধিকারিকদের ঘিরে নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের বড়াচিরা এবং বাজকুলে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় জমিদাতারা। বিক্ষোভের জেরে দিঘা এবং কলকাতাগামী যান চলাচল বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে রেল পুলিশের পাশাপাশি নন্দীগ্রাম থানা থেকেও প্রচুর পুলিশ পৌঁছোয়। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের তরফে জমিদাতাদেরকে বোঝানো হয়, ২০১২ সালের পর কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে রেল প্রকল্পে পরিবার-পিছু চাকরি দেওয়ার নিয়ম তুলে দেওয়া হয়েছে। আর ক্ষতিপূরণ রাজ্য সরকারের মাধ্যমে জমিদাতাদের দিয়ে দেওয়া হবে।

যদিও, জমিদাতাদের অভিযোগ, ২০১০ সালে বাজকুল থেকে নন্দীগ্রাম পর্যন্ত রেল প্রকল্প চালু হওয়ার সময় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছিল যে, পরিবার-কিছু এক জনকে চাকরি দেওয়া হবে। অনেকেই চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। একই প্রকল্পে জমিদাতাদের বাকিরা তা হলে বঞ্চিত হবে কেন? এরপর গোটা বিষয়টির রেল মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করার আশ্বাস দেন রেলের আধিকারিকেরা।

উল্লেখ্য তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশপ্রাণ- নন্দীগ্রাম রেল প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রকল্পের সূচনা হয়। ১৮.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল প্রকল্পের জন্য ১২১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। গত বছর অগস্টে প্রকল্পের কাজ ঘুরে দেখেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার। তিনি বৈঠক করেন তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। এর পরেই থমকে থাকা প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে পারে বলে আশা করেছিল স্থানীয় মানুষ।

জমিদাতাদের দাবি, গ্রুপ ডি পদে নিয়োগ করার জন্য পরিবার পিছু এক জনকে ডেকেছিল স্ক্রিনিং কমিটি। শারীরিক পরীক্ষার জন্য যোগ্য ২৫১ জন জমিদাতার নাম চূড়ান্ত করা হয়েছিল। ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাঁরা পরীক্ষার জন্য হাজির হলেও দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষের তরফে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তবে এ বছর ৬ সেপ্টেম্বর তারিখে বেশ কিছু জমিদাতাকে পরীক্ষার চিঠি পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে রেল-আধিকারিক অনিল কুমার মিশ্র বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার চাকরি প্রথা তুলে দিয়েছে। তবুও বিষয়টি বিবেচনার জন্য বিভাগীয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’’ তমলুক সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের নেতা শেখ সুফিয়ানের কথায়, ‘‘রেলের আধিকারিকেরা লোক দেখানোর জন্য আসছেন। ওরা আসলে কাউকে চাকরিও দেবে না। লাইন হবে না। লোকসভা ভোটের আগে এটা নির্বাচনী চমক।"

যদিও এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘জমিদাতাদের দাবির সঙ্গে সহমত। তাঁদের দাবি পূরণের জন্য রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুত সেই সমস্যা মিটিয়ে কাজ শুরু হবে বলে আশাবাদী।"

আরও পড়ুন
Advertisement