Jakir Hossain

জাকিরের বিরুদ্ধে আয়কর বিভাগের তদন্ত কোন স্তরে? ইডির হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাই বা কতটা?

সাধারণ ভাবে তল্লাশি অভিযানের পর আয়কর বিভাগ ‘ব্লক অ্যাসেসমেন্ট’ করে থাকে। এই স্তরে অভিযুক্তের ব্যবসার ছ’বছরের লেনদেন এবং কর সংক্রান্ত নথিপত্র পরীক্ষা করা হয়।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:১৪
তৃণমূল বিধায়ক জাকিরের বাড়ি এবং একাধিক ঠিকানা থেকে কয়েক কোটি টাকা উদ্ধার করেছে আয়কর বিভাগ।

তৃণমূল বিধায়ক জাকিরের বাড়ি এবং একাধিক ঠিকানা থেকে কয়েক কোটি টাকা উদ্ধার করেছে আয়কর বিভাগ। ফাইল চিত্র।

রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক জাকির হোসেনের বাড়ি এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালিয়ে ১১ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে আয়কর বিভাগ। তা নিয়ে তাঁর কাছে নথিও তলব করা হয়েছে। যদিও জাকির নিজে দাবি করেছেন, সমস্ত নগদ টাকাই বৈধ। অত টাকা নয়। তাঁর বাড়ি থেকে মিলেছে মাত্র ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। এখন প্রশ্ন, অতঃপর জাকিরের ভবিষ্যৎ কী। এই তদন্তই বা কোন পথে এগোবে।

ঘটনাচক্রে, আয়কর বিভাগ এবং ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) দু’টি সংস্থাই কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অধীন। রাজ্যে সাম্প্রতিক কালে বেশ কয়েকটি ঘটনায় ইডি তদন্ত করছে। ফলে জাকিরের ক্ষেত্রেও তা হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে। কিন্তু সরকারি বিধি বলছে, সিবিআই বা পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিক এফআইআর দায়ের না হওয়া পর্যন্ত ইডি তদন্ত শুরুর জন্য ইসিআইআর (এনফোর্সমেন্ট কেস ইনফর্মেশন রিপোর্ট) দায়ের করতে পারে না।

Advertisement

আয়কর দফতর বুধবার জাকিরের বাড়ি, দফতর, বিড়ির কারখানা এবং চালকলে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল সম্পত্তি এবং নথি। আয়কর বিভাগ সূত্রের খবর, সাধারণ ভাবে অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া মেনে বেশ কিছু দিন নজরদারির পরেই এমন অভিযান করে আয়কর বিভাগের ‘ইনভেস্টিগেশন উইং’। যাকে বিভাগীয় পরিভাষায় বলা হয় ‘সার্ভে, সার্চ অ্যান্ড সিজার’। অর্থাৎ নজরদারি, তল্লাশি এবং বাজেয়াপ্ত।

সাধারণ ভাবে ‘সার্ভে, সার্চ অ্যান্ড সিজার’-এর পরে হয় ‘ব্লক অ্যাসেসমেন্ট’। এই স্তরে অভিযুক্তের ব্যবসার ছ’বছরের লেনদেন এবং কর সংক্রান্ত নথিপত্র পরীক্ষা করেন তদন্তকারী আয়কর আধিকারিকেরা। পাশাপাশি, বাজেয়াপ্ত করা নথি এবং হার্ডডিস্ক পরীক্ষা করা হয়। তদন্তের প্রয়োজনে ছ’বছরের বেশি আগেকার করসংক্রান্ত নথি পরীক্ষা করতে চাইলে দিল্লি থেকে তার জন্য বিশেষ অনুমতি আনাতে হয়। ইতিমধ্যেই জাকিরের কাছে তাঁর ব্যবসা এবং মজুত অর্থ সংক্রান্ত নথি চেয়েছে আয়কর বিভাগ।

‘ব্লক অ্যাসেসমেন্ট’ পর্যায়ের তদন্ত চলাকালীন প্রয়োজন বুঝলে কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেন সাময়িক ভাবে বন্ধ করতে পারে আয়কর বিভাগ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যাতে তদন্ত পর্বের সময় ‘সন্দেহজনক’ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরাতে না পারেন, সে জন্যই এই ব্যবস্থা। গোটা প্রক্রিয়া শেষ হতে বেশ কিছু দিন সময় লাগতে পারে।

প্রসঙ্গত, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী জাকিরের বিড়ি এবং চালকলের পাশাপাশি সর্ষের তেল, চাল, ময়দা, পাট, ডালের কারখানা এমনকি, একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ব্যবসার প্রয়োজনেই বিপুল অঙ্কের নগদ অর্থ বাড়ি এবং অন্য ঠিকানায় রাখা ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। যদিও সেই ব্যাখ্যায় ‘সন্তুষ্ট’ নয় আয়কর বিভাগ। জাকিরের দল তৃণমূল এই ক্ষেত্রে তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছে। দলের তরফে পুরো বিষয়টিকেই ‘ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করা হয়েছে। দলীয় মুখপত্রেও শনিবার সেই বিষয়টি বলে দেওয়া হয়েছে। তবে জাকিরের গ্রেফতার হওয়া বা ওই ধরনের কোনও আশঙ্কা নেই বলেই সূত্রের খবর। কারণ, এই তদন্তের আনুষ্ঠানিকতা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ।

আরও পড়ুন
Advertisement