ঘটনার পর তৃণমূল কার্যালয়ের সামনে জনতার ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।
সালিশিসভায় স্বামীর উপর ‘প্রাণঘাতী আক্রমণ’ স্ত্রীর। তা নিয়ে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে। রবিবার এ নিয়ে শোরগোল পূর্ব বর্ধমানের দেওয়ানদিঘি থানা এলাকায়। ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। প্রশ্ন উঠেছে, তৃণমূল কার্যালয়ে সালিশিসভা করা নিয়েও। যদিও শাসকদলের তরফে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, দেওয়ানদিঘির এক দম্পতির পারিবারিক কলহ মেটাতে সালিশিসভা ডাকেন শাসকদলের কয়েক জন। সালিশিসভাটি হয় দেওয়ানদিঘি থানার তালিত গ্রামের দিঘিরপাড়ে তৃণমূল কার্যালয়ে। বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিচার চলাকালীন হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে স্বামীর উপর চড়াও হন স্ত্রী। লুকিয়ে রাখা ছুরি বার করে এলোপাথাড়ি কোপ মারেন স্বামীকে। ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন মাতব্বরেরা। পরে কোনও ক্রমে যুবককে স্ত্রীর হাত থেকে উদ্ধার করেন তাঁরা। রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ওই যুবককে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন এলাকাবাসী।
তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, একটি নার্সিংহোমের কর্মী রকি শেখের সঙ্গে বীরভূমের লাভপুরের বাসিন্দা জোনাকি খাতুনের বিয়ে হয় মাস ছয় আগে। ভালবেসে বিয়ে করেন তাঁরা। কিন্তু বিয়ের কিছু দিনের মধ্যে শুরু হয় অশান্তি। বর্তমানে আলাদা থাকতেন দম্পতি। সম্পর্ক জোড়া লাগাতে রকির পরিবারের লোকজন চেষ্টা করেন। আগেও বেশ কয়েক বার সালিশিসভা হয়। রবিবার সকালে এলাকার মুরুব্বিদের ডেকে আবার সালিশিসভা বসে তৃণমূল কার্যালয়ে। রকি, রকির পরিবারের কয়েক জন সদস্য, জোনাকি এবং জোনাকির বাড়ির কয়েক জন সালিশিতে ছিলেন। সেখানেই হঠাৎ রক্তারক্তি কাণ্ড হয়।
রকির বাবা সেখ দুজা বলেন, ‘‘বিয়ের ১৫ দিনের মাথায় আমাকে ঘর থেকে বার করে দেয় বৌমা। সেটাই আমি মেনে নিলাম। ওরা ভাল থাকুক, চেয়েছিলাম। তবুও ছেলে-বৌমা নিত্যদিন অশান্তি করত।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আজ (রবিবার) পার্টি অফিসে ঠিক হয়, আমরা ৭ লক্ষ টাকা দেব। তখনই ব্যাগ থেকে ছুরি বার করে আমার ছেলের পেটে ঢুকিয়ে দেয় বৌমা।’’
পরিস্থিতি সামলাতে রকিকে উদ্ধার করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর স্ত্রী এবং শাশুড়িকে একটি ঘরে আটকে রেখে দেওয়া হয়। কারণ, উত্তেজিত জনতা লাঠিসোটা নিয়ে তাঁদের মারধর করবে বলে চড়াও হয় পার্টি অফিসে। খবর দেওয়া হয় থানায়। শেষ পর্যন্ত পুলিশ গিয়ে দুই মহিলাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। অন্য দিকে, সালিশিসভায় দাম্পত্যকলহ মেটানো কতটা আইনসঙ্গত সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার কিছু মানুষ থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা। স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ নাসিরউদ্দিন অবশ্য দাবি করেছেন, পার্টি অফিসে কোনও সালিশিসভা হয়নি। তবে অশান্তির সময়ে দুই মহিলাকে উদ্ধার করে পার্টি অফিসে আটকে রেখে পুলিশকে জানানো হয়।