Tant Factory

উৎসবের মুখে স্তব্ধ তাঁত

ক্লাস্টার সূত্রের খবর, এখানে থান কাপড় তৈরি হচ্ছিল। তন্তুজ এবং খাদি বোর্ড বরাত দিচ্ছিল। এর মধ্যে খাদি বোর্ডের বরাতই বেশি থাকত।

Advertisement
নুরুল আবসার
উদয়নারায়ণপুর শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:২২
তাঁত যন্ত্রে ধুলো জমেছে।

তাঁত যন্ত্রে ধুলো জমেছে। —নিজস্ব চিত্র।

আগামী মাস থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে উৎসবের মরসুম। রাজ্যের অন্যত্র তাঁতিদের দম ফেলার ফুরসত নেই। কিন্তু উদয়নারায়ণপুরের তাঁতের ক্লাস্টার এ বারেও কার্যত স্তব্ধ। কাজ নেই। কারণ, খাদি বোর্ডের বরাত মিলছে না সেই ২০২১ সালের মার্চ মাস থেকে। তার আগে বরাত দেওয়া ১ কোটি ২২ লক্ষ টাকার থান কাপড়ও ক্লাস্টারে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। তন্তুবায় এবং ক্লাস্টারের কর্মীদের না মিলেছে বেতন, না মজুরি।

Advertisement

এই আবহে নিজেদের ভবিষ্যৎ ভেবে দিশাহারা ওই ক্লাস্টারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে জড়িত শ’দুয়েক তাঁতি ও কর্মী। পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ অবশ্য দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের উদ্যোগে এবং গজা তন্তুবায় সমবায় সমিতির তত্ত্বাবধানে ওই ক্লাস্টার তৈরি হয়। ২০১৯ সালে উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারখানা ও গুদাম করে দেয় রাজ্য বস্ত্র ও তাঁত শিল্প দফতর। তারা তাঁত শিল্পের যন্ত্রপাতিও দেয়। সব মিলিয়ে সরকার কয়েক কোটি টাকা খরচ করে।

ক্লাস্টার সূত্রের খবর, এখানে থান কাপড় তৈরি হচ্ছিল। তন্তুজ এবং খাদি বোর্ড বরাত দিচ্ছিল। এর মধ্যে খাদি বোর্ডের বরাতই বেশি থাকত। সমিতির অধীনে যে সব তন্তুবায় আছেন, তাঁদের এখানে কাজ দেওয়া হয়। তুলো দিত তন্তুজ এবং খাদি বোর্ড। সেই তুলো থেকে সুতো তৈরি করে তা থেকে থান কাপড় তৈরি করে তা জোগান দেওয়া হত খাদি বোর্ডকে। মজুরি বাবদ টাকা খাদি বোর্ড দিয়ে দিত সমিতিকে।

কিন্তু ২০২১ সালের মার্চ মাস থেকে বরাত দেওয়া বন্ধ করে দেয় খাদি বোর্ড। একই সঙ্গে তৈরি হয়ে যাওয়া থান কাপড়ও তারা নেয়নি। তন্তুজের বরাত অবশ্য বজায় আছে। কিন্তু তা নামমাত্র বলে সমিতি সূত্রের খবর। ফলে, অধিকাংশ তাঁতিই কাজপাচ্ছেন না।

সমিতির এক কর্তা জানান, জমে থাকা থান কাপড় খাদি বোর্ড নিলে তারা বাজারে বিক্রি করে ১ কোটি ২২ লক্ষ টাকা পেত। সেই টাকা পেলে সমিতির মজুরি বাবদ পাওনাও তারা মিটিয়ে দিতে পারত। তন্তুজের বরাত খুব কম। তারা যে মজুরি দেয়, তাতে অল্প কিছু তাঁতিকে কাজ দেওয়া সম্ভব হলেও ক্লাস্টার চালানো সম্ভব নয়।

উদয়নারায়ণপুরের হরালি, গজা, সিংটি, কুর্চির মতো বেশ কিছু গ্রামে একসময়ে ঘরে ঘরে হস্তচালিত তাঁত চলত। ধীরে ধীরে যন্ত্রচালিত তাঁতের আধিপত্য বাড়ায় হস্তচালিত তাঁত পিছু হটে। তার প্রভাব পড়ে উদয়নারায়ণপুরেও। এই এলাকার অধিকাংশ হস্তচালিত তাঁত কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। একইসঙ্গে সুতোর দাম এবং কারখানা গড়ার যন্ত্রপাতির দামও অনেকটা বেড়ে যায়। সেই কারণেও অনেক কারখানায় ঝাঁপ পড়ে।

এই পরিস্থিতিতে এলাকার হস্তচালিত তাঁত শিল্পকে বাঁচাতে গজায় ক্লাস্টার গড়া হয়। কয়েক বছর ভাল চললেও খাদি বোর্ড বরাত দেওয়া বন্ধ করা এবং মজুরি আটকে দেওয়ায় সঙ্কট তীব্র হয়েছে বলে সমিতির অভিযোগ।

ক্লাস্টারে রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। তুলো থেকে সুতো তৈরি এবং তা থেকে থান কাপড় বানানোর সব যন্ত্রপাতি এখানে মজুত। থান কাপড় তৈরি হওয়ার পরে তা রং করার ব্যবস্থাও আছে। ক্লাস্টারে বসে যেমন তাঁতিরা কাজ করতে পারতেন, তেমনই এখান থেকে বরাত নিয়ে গিয়ে বাড়িতেও অনেকে কাজ করতেন। তাঁদেরও নিখরচায় সরকারি উদ্যোগে তাঁতযন্ত্র দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু খাদি বোর্ড কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় ওই সব তাঁত কারখানাগুলিরও ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যন্ত্রপাতিতেও ধুলো জমছে।

আরও পড়ুন
Advertisement