(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নওশাদ সিদ্দিকি (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।
কয়েক দিন আগেই নবান্নে ডেকে ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, সোমবার ফুরফুরা শরিফে মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচিতে আমন্ত্রিত পিরজাদাদের তালিকাতেও রয়েছেন নওসাদ। তিনি ফুরফুরাই বাসিন্দা। এ সব দেখে পিরজাদা ত্বহা সিদ্দিকীর দাবি, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আইএসএফ-তৃণমূল গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে। তৃণমূল বা আইএসএফ কোনও দলই এ কথা মানেনি।
বস্তুত, সংখ্যালঘুদের এই তীর্থক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর সফর রাজনৈতিক মহলে চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ত্বহা বলেন, ‘‘শুনছি, নওসাদ সিদ্দিকী নাকি তৃণমূলে যোগ দেবেন! আমি মনে করি, নওসাদ গেলে তৃণমূলের ক্ষতি হবে। উনি তৃণমূলে যাবেন না। বিধানসভা ভোটে তৃণমূল-আইএসএফ সমঝোতা করবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চমকে-ধমকে কিছু আসন নেবেন নওসাদ।’’
মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচিতে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি মনস্থির করে উঠতে পারেননি জানিয়ে তাঁর তৃণমূলে যাওয়ার জল্পনাকে নস্যাৎ করেছেন নওসাদ। তিনি বলেন, ‘‘ভাঙড়ে তৃণমূল আমার দলের কর্মীদের মারধর করছে, মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। মানুষের ভরসা, মর্যাদা কোনও ভাবেই শূন্য হতে দেব না। মুখ্যমন্ত্রী আগেও ফুরফুরায় এসেছেন। এই প্রথম সব পিরজাদাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ বার হয়তো তাঁদের কথা শুনবেন!’’ জাঙ্গিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক তথা পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী একটি পবিত্র দিনে আসছেন। সব পিরজাদাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে পিরজাদা হিসাবে নওসাদ সিদ্দিকীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।’’
ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পেশ করার জন্য পিরজাদাদের মহল্লায় নানা দাবি উঠেছে। প্রশাসনের খবর, ধনপোতার মুসাফিরখানায় ইফতারে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করবেন পিরজাদাদের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচি নিয়ে সোমবার চণ্ডীতলা ১ ব্লক অফিসে প্রশাসনিক বৈঠক করেন হুগলির জেলাশাসক মুক্তা আর্য। ধনপোতায় যান হুগলি গ্রামীণের এসপি কামনাশিস সেন-সহ পুলিশকর্তারা।
দিঘায় রাজ্য সরকারের উদ্যোগে তৈরি জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন সামনেই। সেই প্রসঙ্গ টেনে রবিবার ত্বহা বলেন, ‘‘মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষও দিঘায় যান। সে জন্য সেখানে একটি মসজিদও স্থাপন করা হোক।’’ ফুরফুরায় সরকারি হাসপাতাল একশো শয্যায় উন্নীত হচ্ছে। ত্বহার দাবি, ওই হাসপাতাল এবং আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রয়াত পির আবু বক্কর সিদ্দিকীর নামে করা হোক। ১৭ মার্চ আবু বক্করের মৃত্যু দিবসকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণার দাবিও তুলেছেন ত্বহা।
এ দিন সন্ধ্যায় পিরজাদা মেহরাব সিদ্দিকীর বাড়িতে পিরজাদাদের একাংশ সাংবাদিক সম্মেলন করেন। মেহরাব বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে ইফতার করবেন। আমরা সকলে যাব। ওঁর কাছে দাবিও রয়েছে। তবে এই সময়টা দাবি জানানোর পক্ষে সঠিক সময় নয়। সঠিক সময় দাবিদাওয়া জানানো হবে।’’ ফুরফুরার উন্নয়নে স্থানীয় বিধায়ক স্নেহাশিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ত্বহা। সেই অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন মেহরাব।
আবু বক্কর সিদ্দিকীর মৃত্যুদিবস উপলক্ষে আজ সকালে কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক তথা দলের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য গুলাম আহমেদ মীর, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার এবং নেতা প্রীতম ঘোষেরও ফুরফুরায় আসার কথা।