হুগলিতে চলতি বছরে এ পর্যন্ত আক্রান্ত ২৭৮
Dengue Situation Howrah

ডেঙ্গি: পরিদর্শন, অভিযানে জোর

স্বাস্থ্য দফতরের খবর, মূলত শহরাঞ্চলে নির্মীয়মাণ আবাসন, বাড়িতেও জল জমার সমস্যা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট পুরসভাগুলিকে তা দেখতে বলা হয়েছে।

Advertisement
গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়  , প্রকাশ পাল
শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪ ০৯:১৯
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

গত বছরের মতো এ বারেও হুগলির গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। কিছু পুর এলাকা থেকেও ডেঙ্গির খবর আসছে। মশাবাহিত এই রোগ প্রতিরোধে কোমর বেঁধে অভিযান চালাতে চাইছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। তাদের চিন্তায় রেখেছে বিভিন্ন মজা খাল, নির্মীয়মাণ আবাসন বা বাড়ি ইত্যাদি।

Advertisement

বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর এ পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন ২৭৮ জন। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে মশা জন্মানোর সম্ভাব্য স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই কাজে পতঙ্গবিদও নামানো হয়। বন্ধ নার্সারিকে আতশ কাচের তলায় রাখছে স্বাস্থ্য দফতর।

জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২) দেবযানী বসু মল্লিক জানান, একাধিক বন্ধ নার্সারিতে পরিত্যক্ত টব, বালতি ইত্যাদিতে জমা জলে মশার লার্ভা জন্মানোর বিষয়টি নজরে এসেছে। হুগলিতে বলাগড় ব্লকে নার্সারি বেশি। দিন কয়েক আগে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ডেঙ্গি সংক্রান্ত বৈঠক করা হয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতর, হাসপাতাল, নার্সিংহোম, ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে নিয়ে। সেখানেই বন্ধ নার্সারির দিকে নজর রাখতে বলা হয় উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিকদের।

স্বাস্থ্য দফতরের খবর, মূলত শহরাঞ্চলে নির্মীয়মাণ আবাসন, বাড়িতেও জল জমার সমস্যা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট পুরসভাগুলিকে তা দেখতে বলা হয়েছে। চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিকে ডেঙ্গি চিকিৎসার প্রোটোকল সম্পর্কে অবহিত করা হয়। ডেঙ্গি সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রতিদিন সরকারি পোর্টালে ‘আপলোড’ করার নির্দেশ দেওয়া হয় ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলিকে। দেবযানী জানান, এই মুহূর্তে ডেঙ্গির তালিকায় রাজ্যে হুগলি উপরের সারিতে থাকলেও আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কম এবং পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয়।

ডানকুনি পুর এলাকায় বেশ কয়েক জন আক্রান্ত হয়েছেন ডেঙ্গিতে। এখানে নিকাশি ব্যবস্থা থেকে পরিবেশের দফারফা করেছে গোবরে-ঠাসা ডানকুনি খাল। ডেঙ্গি নিয়েও ওই খাল কপালে ভাঁজ ফেলেছে প্রশাসন তথা স্বাস্থ্য দফতরের। পরিবেশকর্মীদের বিস্তর আন্দোলনের পরে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ওই খাল সংস্কার করা হলেও খাটালের রাশি রাশি গোবর ফেলা বন্ধ হয়নি। ফলে ফের ‘গোবর নদী’তে পরিণত হয়েছে ওই খাল। স্বাস্থ্য দফতরের পরিদর্শন বলছে, মশা জন্মানোর আদর্শ জায়গা সেটি।

বিচ্ছিন্ন ভাবে হলেও রিষড়া পুরএলাকায় কিছু ডেঙ্গি রোগীর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। পুরসভার আধিকারিক অসিতাভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, রোগীদের মধ্যে অনেকেই কলকাতার বড়বাজার এলাকায় কর্মসূত্রে নিয়মিত যাতায়াত করেন। মশা জন্মানোর সম্ভাব্য স্থান হিসাবে রিষড়া শহরের বিভিন্ন বন্ধ কারখানা চিহ্নিত হয় স্বাস্থ্য দফতরের পরিদর্শনে।

চাঁপদানিতে ডিভিসি খাল, আবর্জনায় ভরা রেলের নালা, শ্রীরামপুরে জিটি রোডের ধারের অভিজাত আবাসনে স্ক্র্যাপ রাখা চত্বর, ইএসআই হাসপাতালের পরিত্যক্ত আবাসন, উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভায় মজা হিন্দমোটর খাল ও চাষ খাল ইত্যাদি চিহ্নিত হয়। এ ভাবে সব শহরেই এমন জায়গার কথা উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট পুরসভাকে সতর্ক করা হয়। বিভিন্ন শহরে রেলের নালা বা আবাসন নিয়েও চিন্তা রয়েছে। এ ব্যাপারে রেলকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। পুরসভা এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে জ্বরের খবর নিচ্ছেন পুর-স্বাস্থ্যকর্মীরা। বাড়িতে বা আশপাশে জল জমে আছে কি না, তাও দেখছেন।

গ্রামীণ এলাকার মধ্যে বলাগড়, পান্ডুয়া, পোলবা-দাদপুর ব্লকে ডেঙ্গির প্রভাব রয়েছে। তবে সেই প্রবণতা গত বছরের মতো নয়। চণ্ডীতলা ২ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তনুজ দাস জানান, সেখানে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে। এখনও পর্যন্ত পাঁচ জনের ডেঙ্গি পজ়িটিভ হয়েছে।

তথ্য: সুদীপ দাস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement