Hooghly News

এক হাতের বিশ্বকর্মা! কব্জির শোক ভুলে মন দিয়ে মণ্ডপ গড়েন হুগলির মহেশ

হুগলির পোলবার মহেশ মাহাত রাজস্থানে কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় একটি হাত হারিয়েছেন। এখন এক হাতই সম্বল তাঁর। তিনি হয়ে উঠেছেন ‘এক হাতের বিশ্বকর্মা’। থার্মোকল কেটে মণ্ডপ গড়ার কাজ করেন মহেশ।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
হুগলি শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:২৯
Hooghly man makes pandals with thermocol with just one hand

এক হাতে মণ্ডপ গড়েন হুগলির মহেশ মাহাত। — নিজস্ব চিত্র।

ভিন্‌রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে একটা হাত হারিয়েছিলেন। ভাগ্যের ফেরে পঙ্গু হয়ে গ্রামে ফিরতে হয়েছে। কিন্তু জীবনের লড়াইয়ে হার মানেননি মহেশ মাহাত। এক হাতেই তিনি জীবনের বাকি গল্পটুকু লিখছেন মন দিয়ে। নিষ্ঠা আর পরিশ্রমে কোনও খামতি রাখছেন না। সেটাই তাঁর সাফল্যের চাবিকাঠি।

Advertisement

হুগলির পোলবার রাজহাট এলাকার তারাবিহারি গ্রামের বাসিন্দা মহেশ। এলাকায় তিনি ‘এক হাতের বিশ্বকর্মা’ রূপে পরিচিত। মহেশ পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক ছিলেন। কাজের সূত্রে গিয়েছিলেন রাজস্থানে। সেখানে সেন্টারিংয়ের কাজ করতেন তিনি। স্বল্প রোজগারে দিন কেটে যেত। কিন্তু বিপদ এল অন্য পথে। কাজ করার সময় উপর থেকে পাটা ভেঙে পড়ে মহেশের হাতের উপর। বছর আটেক আগের সেই দুর্ঘটনার কথা এখনও ভুলতে পারেননি মহেশ।

তিনি বলেন, দুর্ঘটনার কারণে তাঁর ডান হাতে ক্যানসার হয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসকেরা কব্জির উপর থেকে হাতের অংশ কেটে বাদ দিতে বাধ্য হন। এক হাত নিয়ে সেন্টারিংয়ের কাজ করা আর সম্ভব ছিল না। তাই অন্য পথে জীবিকা নির্বাহের উপায় খুঁজছিলেন মহেশ। কিছু দিন সব্জি বিক্রি করেও পেট চালিয়েছেন। অভাবের সেই সংসারে আলো হয়ে আসে থার্মোকল।

এক পরিচিতের কাছ থেকে থার্মোকল কাটার কাজ শিখে নেন মহেশ। তার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। থার্মোকল কেটে কেটে মণ্ডপ তৈরি করেই এখন দিন কাটিয়ে দেন পোলবার ‘এক হাতের বিশ্বকর্মা’।

হাত না থাকায় মণ্ডপ তৈরিতে কোনও সমস্যা হয় না মহেশের। এক হাতেই তিনি সাবলীল হয়ে উঠেছেন। তাঁর প্রতিভা, কর্মদক্ষতার কথা ছড়িয়ে গিয়েছে রাজ্যের বাইরেও। দিল্লি, মুম্বই থেকেও কাজের জন্য ডাক পেয়েছেন। এ বছর পাণ্ডুয়ায় কালীপুজোর মণ্ডপ তৈরির ভার মহেশের উপর। এক মনে তাই থার্মোকল কেটে চলেছেন তিনি। হাতে সময় আর বেশি নেই। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মহেশ বলেন, ‘‘এক হাতে কাজ করতে প্রথম দিকে বেশ অসুবিধা হত। এখন আর কোনও সমস্যা হয় না। মণ্ডপ তৈরি করে যা রোজগার করি, টালির বাড়িতে স্ত্রী, পুত্র, কন্যাকে নিয়ে তাতেই দিন কেটে যায়। রাজস্থান, গুজরাতে গিয়েও এই কাজ করে এসেছি। এখন বাংলাতে কাজ করছি।’’

পাণ্ডুয়ার পুজো কমিটির সদস্য শিশির দেবনাথ বলেন, ‘‘এ বছর আমাদের কালীপুজোর থিম ‘মিশরের পিরামিড’। সেই মণ্ডপে থার্মোকলের বেশ কিছু কাজ রয়েছে, সেই কাজ করছে মহেশ। একটা দুর্ঘটনায় ওর ডান হাতের কব্জির কাছ থেকে বাদ পড়ে গিয়েছে। এক হাত দিয়েই ও থার্মোকল কেটে মণ্ডপের বিভিন্ন কারুকার্য করছে। আমাদের সকলকেই অবাক করেছে ওর প্রতিভা।’’

আরও পড়ুন
Advertisement