Durga Puja 2023

নিষেধাজ্ঞা সার, দুর্গার মণ্ডপে ফের থার্মোকলই

থার্মোকল জল বা মাটির সঙ্গে মেশে না। সহজে পচেও না। হুগলি উইমেন্স কলেজের রসায়নের অধ্যাপক অনুপ বিশ্বাস জানান, থার্মোকল বহু বছর ধরে পরিবেশে টিকে থাকে।

Advertisement
সুদীপ দাস
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:২২
Loads of Polysterene despite prohibition

মণ্ডপ তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে থার্মোকল। চুঁচুড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

পরিবেশের স্বার্থে পুজো মণ্ডপে থার্মোকল ব্যবহার নিষিদ্ধ। রাজ্য সরকারের সেই নির্দেশ মেনে গত বছর মণ্ডপ তৈরিতে থার্মোকল ব্যবহার অনেকটাই কমেছিল। কিন্তু এই বছর ফের তার দেদার ব্যবহার শুরু হয়েছে। ছোট থেকে বিগ বাজেটের পুজো— সর্বত্রই এক ছবি।

Advertisement

এ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করছেন পরিবেশকর্মীরা। তবে, প্রশাসনের বিশেষ হেলদোল নেই! চুঁচুড়ার বিভিন্ন ‘বিগ’ বাজেটের পুজোয় মণ্ডপসজ্জায় থার্মোকল ব্যবহার হচ্ছে। চন্দননগরের পরিবেশ অ্যাকাডেমির সভাপতি, পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সর্বত্র পরিবেশবান্ধব পুজো করার জন্য রাজ্য সরকারের পাশাপাশি হুগলির জেলাশাসককে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যার ফলেই থার্মোকলের এত ব্যবহার। প্রশাসন এখনই কড়া মনোভাব না নিলে পুজোর দিনে প্লাস্টিকের ব্যবহারও বাড়বে।’’

জেলা প্রশাসনের এক কর্তার প্রতিক্রিয়া, ‘‘পরিবেশবান্ধব পুজোর কথা প্রত্যেক কমিটিকেই বলা আছে। সকলেরই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’’ এ ক্ষেত্রে প্রশাসন কি হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? সদুত্তর মেলেনি। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগির বক্তব্য, ‘‘দূষণ যাতে না ছড়ায়, সে জন্য প্রত্যেক পুজো কমিটিকে বলা হয়েছে। কোথাও নিয়ম না-মানার খবর এলে, আমরা গিয়ে কথা বলছি। প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।’’

থার্মোকল জল বা মাটির সঙ্গে মেশে না। সহজে পচেও না। হুগলি উইমেন্স কলেজের রসায়নের অধ্যাপক অনুপ বিশ্বাস জানান, থার্মোকল বহু বছর ধরে পরিবেশে টিকে থাকে। জলের মাধ্যমে তা খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে প্রাণীদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। মানুষের চামড়া ও শ্বাসনালির প্রভূত ক্ষতি করে। দৃষ্টিশক্তিতেও প্রভাব ফেলে। থার্মোকলে আগুন ধরালেও মারাত্মক বায়ুদূষণ হয়। ওই কলেজের প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক উত্তরণ মজুমদার বলেন, ‘‘পুজো মণ্ডপে যথেচ্ছ পরিমাণে থার্মোকল ব্যবহার বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে সত্যিই উদ্বেগজনক!’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ব্যবহৃত থার্মোকলের বেশিরভাগই জলে পৌঁছে ভেসে থাকে। নদী বা সমুদ্রের একটি বড় অংশে তেমনটা হলে বাতাসের অক্সিজেন জলে দ্রবীভূত হয় না। সূর্যের আলোও পড়ে না। ফলে সেই অংশের নীচে থাকা জলজ প্রাণীর মৃত্যু হয়।

চুঁচুড়া শহরের একটি সর্বজনীনের সভাপতি কিশোর দত্ত জানান, এ বার তাঁদের পুজোর ৮১তম বর্ষ। মণ্ডপ তৈরি করা হচ্ছে মায়ানমারের একটি প্যাগোডার আদলে। এই থিম ফুটিয়ে তুলতেই থার্মোকল ব্যবহার হচ্ছে। তাঁর যুক্তি, ‘‘থার্মোকলে ভাল রং ধরে, দামেও কম। তাই ব্যবহার করছি।’’ একই দাবি অন্য কয়েকটি কমিটিরও।

বিশ্বজিতের আক্ষেপ, ‘‘পুজো কমিটিগুলিকে প্রচুর টাকা অনুদান দিচ্ছে রাজ্য। অথচ, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করছে তার। পুলিশ-প্রশাসন নির্বিকার!’’

আরও পড়ুন
Advertisement