—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ঢের আগে থেকেই মেয়ে আবদার জুড়েছিল, জন্মদিনে বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করতে হবে। দিনমজুর বাবা আর গৃহবধূ মা ভেবেও রেখেছিলেন, দু’টো পয়সা বাঁচিয়ে একটু বড় করে করবেন মেয়ের ছ’বছরের জন্মদিন।
শুক্রবারই ছিল সেই দিন। অথচ, খাঁ খাঁ করল হুগলি জেলার ওই বাড়ি। বাবা-মা-ঠাকুমা থেকে পড়শি— সকলেই হত্যে দিলেন আদালতে। কেননা, ৫৫ দিন আগে ধর্ষিত হয়ে খুন হয়ে গিয়েছে ফুটফুটে মেয়েটি। অপরাধী অশোক সিংহকে শুক্রবার মৃত্যুদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে চুঁচুড়া আদালত। জন্মদিনে বিচার পেল মেয়ে। সাজা শুনে এ দিন হাপুস নয়নে কাঁদলেন মা। আর বুক চাপড়ালেন বাবা।
বিকেল ৫টা নাগাদ বিচারক সাজা ঘোষণার পরে আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে শিশুটির মা চিৎকার করে উঠলেন, ‘‘মা, মা রে...। তোকে যে কেড়ে নিয়েছে, তার ফাঁসির সাজা হয়েছে। তুই খুশি তো!’’ পরে তিনি বলেন, ‘‘আমরা গরিব। ইচ্ছে থাকলেও মে্য়ের পাঁচ বছরে ভাল করে জন্মদিন করতে পারিনি। এ বার করব ভেবেছিলাম। কিন্তু, কী করে বুঝব, মেয়ে এ ভাবে চলে যাবে! এ বার জন্মদিনেই বিচার পেল মেয়ে।’’
শিশুটির ঠাকুমা বলছিলেন, নাতনি ছিল তাঁদের বড় আদুরের। ঠাকুমার স্বগতোক্তি, ‘‘পেটে ভাত জুটুক না জুটুক তুই আমাদের সুখ ছিলিস। আমাদের সুখকে ও (দোষী) কত কষ্ট দিয়ে মেরেছে!’’
গত ২৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় ওই ঘটনা ঘটেছিল। ৫৫ দিনের মাথায় সাজা ঘোষণা হল। মামলার তদন্তকারী অফিসার ছিলেন স্থানীয় সার্কেল ইনস্পেক্টর রামগোপাল পাল। এ দিন সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে হুগলি গ্রামীণ পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ‘‘শিশুটির বাবা-মাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পেরেছি। এটা হুগলি গ্রামীণ পুলিশের কাছে একটা প্রাপ্তি।’’
ওই ঘটনার দিন সন্ধ্যায় মেয়ের আবদারেই মাংস কিনে এনেছিলেন বাবা। মা সেই মাংস রাঁধছিলেন। মেয়ের আর তা খাওয়ারসুযোগ হয়নি।