Khanakul Road

বিরোধী হাতে থাকা সমিতিতে কতটা কাজ হবে? শুরু চর্চা

বিজেপি নেতৃত্বের অনুমান, বিশেষত লোকসভা ভোটের আগে রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়নে বা অর্থ সংস্থানের ক্ষেত্রে এই পঞ্চায়েত সমিতিকে বাধার সম্মুখীন হতে পারে।

Advertisement
পীযূষ নন্দী
খানাকুল শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:২২
বেহাল দশা । খানাকুলের চক্রপুর থেকে গনেশপুর যাবার রাস্তা।

বেহাল দশা । খানাকুলের চক্রপুর থেকে গনেশপুর যাবার রাস্তা। —নিজস্ব চিত্র।

হুগলি জেলার ১৮টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে তৃণমূলের দখলে ১৭টি। শুধুমাত্র খানাকুল-২ বিজেপির হাতে। এই ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৭টি পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় গেরুয়া শিবির। জেলায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে শাসক দলের রমরমার মধ্যে বিজেপি পরিচালিত এই পঞ্চায়েত সমিতির উন্নয়ন কোন খাতে বইবে, সে দিকে তাকিয়ে ব্লকের মানুষ। রাজনৈতিক শিবিরের কৌতূহলও কম নয়। সরকারি হিসাবে ‘অতি বন্যাপ্রবণ’ এই ব্লকে উন্নয়নে কী কী সুবিধা-অসুবিধা হতে পারে, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে নতুন বোর্ড গঠনের পর থেকে।

Advertisement

বিজেপি নেতৃত্বের অনুমান, বিশেষত লোকসভা ভোটের আগে রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়নে বা অর্থ সংস্থানের ক্ষেত্রে এই পঞ্চায়েত সমিতিকে বাধার সম্মুখীন হতে পারে। তবে এমন সমস্যা হলে তাঁরা মোকাবিলায় প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রুম্পা মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলেও কিছু হবে না। মানুষের স্বার্থে আমাদের দলের স্থানীয় বিধায়ক তথা জেলা পরিষদের সদস্য সুশান্ত ঘোষের নেতৃত্বে আমরা উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি করছি। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের তহবিলে কল, রাস্তা, বর্জ্য ব্যবস্থপনা পরিকল্পনা চলছে।’’ তাঁর বক্তব্য, এখানে সাধারণ মানুষের প্রাথমিক চাহিদা বন্যার জল দ্রুত নিকাশি, রাস্তার উন্নয়ন এবং সেতু। সেগুলি গত দু’দফায় তৃণমূল মেটাতে পারেনি বলেই মানুষ বিজেপিকে ক্ষমতায় এনেছে। এই কাজগুলি করাই তাঁদের মূল লক্ষ্য। তহবিল পেতে বাধা পেলে তাঁরা আদায় করে নেবেন বলে মন্তব্য করেছেন রুম্পা।

সুশান্তের অভিযোগ, পঞ্চায়েত সমিতিকে না জানিয়ে ব্লক প্রশাসন কিছু কাজ করছে। এর প্রতিবাদ করা হয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে বঞ্চনার চেষ্টা হলে তারও মোকাবিলা করা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা দু’জন জেলা পরিষদে আছি। দাবি-দাওয়ায় নিয়ে লড়াই করে তা আদায় করতে পারব বলেই বিশ্বাস।’’ তিনি জানান, গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে বন্যা মোকাবিলা, সেতু, গ্রীষ্মে চাষের জন্য জলের নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করা হবে। সর্বোপরি, স্বচ্ছ ভাবে বিধায়ক তহবিলে উন্নয়নের কাজের সুযোগ থাকছে।

জেলা পরিষদের সভাধিপতি রঞ্জন ধাড়ার প্রতিক্রিয়া, ‘‘জেলার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা আগামী মঙ্গলবার বৈঠকে বসছি। কোথাও কোনও সমস্যার প্রশ্ন নেই। সর্বত্র উন্নয়ন হবে।’’ খানাকুল-২ ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের বক্তব্য, যা কিছু করা হচ্ছে, নিয়ম মেনেই হচ্ছে। সে ভাবেই কাজ হবে।

ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে সমন্বয় না থাকলে কী কী অসুবিধা হতে পারে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য, বন্যাত্রাণে ত্রিপল বা চাল দেওয়ার ক্ষেত্রে বিরোধী জনপ্রতিনিধিদের এড়িয়ে সরাসরি ব্লক, মহকুমা বা জেলা প্রশাসনকে দিয়ে করানোর নজির রয়েছে। বিজেপির সাংসদ, বিধায়কেরা প্রায়ই অভিযোগ করেন, তাঁদের সুপারিশ নানা অছিলায় আটকানোর চেষ্টা করা হয় প্রশাসনের তরফে। এ ক্ষেত্রে কী হয়, জেলা পরিষদের সাহায্য কতটা মেলে, প্রকল্প রূপায়নে বা তহবিল পেতে সমস্যা হয় কি না, তা সময়ই বলবে। কাজ আটকানোর অভিযোগ প্রশাসনের কর্তারা মানেননি।

বাম আমলে ১৯৯৮ সালে খানাকুল ১ ও ২ পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছিল তৃণমূল। খানাকুল-২ পঞ্চায়েত সমিতির তৎকালীন সভাপতি তথা প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্য অসিত সিংহরায়ের দাবি, সে সময়ে জেলা পরিষদের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজে তাঁদের প্রতি বিমাতৃসূলভ আচরণ করা হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতিকে দিয়ে কোনও কাজই করানো হত না। যা করার, করতেন বিডিও। রাস্তা, সেতুর কাজ করতেন শাসক দলের সাংসদ-বিধায়কেরা। বর্তমানে অবশ্য সরকারি প্রকল্পের তহবিল সরাসরি পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে আসে। আগে জেলাপরিষদ পঞ্চায়েত সমিতিতে পাঠাত। বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা অসিতের দাবি, ‘‘এখন কোনও দ্বিচারিতা হয় না। উন্নয়ন সর্বত্র হবে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement