Goghat

মিষ্টি খাওয়ায় কিশোরীকে খুন্তির ছেঁকা, ধৃত কাকিমা

কয়েক বছর আগে পথ দুর্ঘটনায় মেয়েটির বাবা মারা যান। তার আগে থেকেই মা নিরুদ্দেশ। মেয়েটি কাকা-কাকিমার কাছে থাকছিল।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
গোঘাট শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৩ ০৭:১৪
খুন্তির ছ্যাঁকায় ঘা হয়ে গিয়েছে পিঠে।

খুন্তির ছ্যাঁকায় ঘা হয়ে গিয়েছে পিঠে। —নিজস্ব চিত্র।

পিঠ জুড়ে দগদগে ঘা দেখে শিউড়ে উঠেছিলেন প্রধান শিক্ষিকা। জিজ্ঞাসা করায় সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীটি জানায়, না বলে দু’টো মিষ্টি খাওয়ায় কাকিমা গরম খুন্তির ছেঁকা দিয়েছেন।

বুধবার দুপুরে ততক্ষণে অন্য সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ এবং ব্লক অফিসের লোকজন স্কুলে হাজির। মেয়েটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করে প্রশাসন। অভিযুক্ত কাকিমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হুগলির গোঘাটের ঘটনা।

Advertisement

কয়েক বছর আগে পথ দুর্ঘটনায় মেয়েটির বাবা মারা যান। তার আগে থেকেই মা নিরুদ্দেশ। মেয়েটি কাকা-কাকিমার কাছে থাকছিল। সে জানিয়েছে, বাসন মাজা, ঘর মোছা, বাজার করা-সহ বাড়ির সব কাজ তাকে করতে হত। স্কুলের মিড-ডে মিলে পেট ভরত। বাড়িতে সকাল-রাতের খাওয়ার নিশ্চয়তা ছিল না।

গোঘাট-১ ব্লকের বিডিও সম্রাট বাগচী জানান, দাদুর আবেদনের প্রেক্ষিতে মেয়েটিকে আপাতত মামাবাড়িতে পাঠানো হয়েছে। বিডিও বলেন, ‘‘মেয়েটির উপরে সত্যিই অত্যাচার হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। পুরো বিষয়টি তদারক করছে শিশুকল্যাণ কমিটি।’’ ধৃত কাকিমাকে বৃহস্পতিবার আরামবাগ আদালতে পেশ করা হলে ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

প্রশাসন ও বিদ্যালয় সূত্রের খবর, পিঠে যন্ত্রণা নিয়েই বুধবার স্কুলে যায় কিশোরী। পঞ্চম পিরিয়ড শেষে প্রধান শিক্ষিকার কাছে গিয়ে ছুটি চায়। কারণ জানতে চাইলে বলে, কাকিমা পিঠে ছেঁকা দিয়েছেন। বাড়ির কাজ সারতে না পারলে, ফের ছেঁকা দেবেন বলেছেন। তখনই ছাত্রীর পিঠ দেখে আঁতকে ওঠেন ওই শিক্ষিকা। মেয়েটির মামাবাড়ি কাছেই একটি গ্রামে। দাদু গোঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতেই কাকিমাকে গ্রেফতার করা হয়।

কিশোরীর দাদু বলেন, ‘‘নাতনির নামে বেশ কয়েক লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজ়িট আছে। ১৮ বছর হলে তা সে পাবে। সেই টাকা আত্মসাতের জন্য কাকা-কাকিমা ওকে আসতে দিচ্ছিল না।’’ পুলিশের কাছে দোষ স্বীকার করে ধৃত মহিলা জানান, জায়ের মেয়ে না বলে খাবার খাওয়ায় রাগে, উত্তেজনার বশে ‘ভুল’ করে ফেলেছেন। পুলিশের দাবি, স্থানীয় ওষুধের দোকান থেকে মলম কিনে এনে মেয়েটির ক্ষতস্থানে লাগিয়েছিলেন কাকা-কাকিমা। পাছে ঘটনা জানাজানি হয়ে যায়, সেই জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাননি। দম্পতির বছর ছয়েকের একটি মেয়ে আছে।

পুলিশ জানায়, কিশোরীর চিকিৎসার খরচ, পোশাক, পড়াশোনার নানা সরঞ্জাম থানার তরফে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও সাহায্য করা হবে বলে জানিয়েছেন ওসি শৈলেন্দ্র উপাধ্যায়। মেয়েটির স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘মেয়েটি ছুটি চাওয়ায় আপত্তি করেছিলাম। তখনই ও সব বলে। ছোটদের উপরে এমন নৃশংস অত্যাচারের কঠিন সাজা হওয়া উচিত।’’ একই দাবি অভিযুক্ত দম্পতির প্রতিবেশীদের অনেকের।

কিশোরী বলে, ‘‘সোমবার স্কুল থেকে ফিরে সব কাজ করার পরে খিদে পেয়েছিল। ফ্রিজ খুলে দু’টো মিষ্টি খেয়েছিলাম। মঙ্গলবার সকালে কাকিমা জানতে পেরে, ‘মিষ্টি খাওয়া ঘুচিয়ে দেব’ বলে রান্নাঘরে হিঁচড়ে নিয়ে যায়। খুন্তি গরম করে পিঠের অনেক জায়গায় ছেঁকা দিয়ে দেয়।’’

আরও পড়ুন
Advertisement