Bankim Setu

ফের ভাঙল বঙ্কিম সেতুর চাঙড়, চোট পেলেও অল্পের জন্য রক্ষা বালিকার

এ দিনের বঙ্কিম সেতুর চাঙড় ভেঙে পড়ার পরিণাম যে মারাত্মক হতে পারত, তা মানছেন সেতুর দায়িত্বপ্রাপ্ত কেএমডিএ-র এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:৫৬
An image of Bankim Bridge

বঙ্কিম সেতু, হাওড়া। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

বিপর্যয় যেন পিছু ছাড়ছে না হাওড়ার বঙ্কিম সেতুর। এ বার ওই সেতুর মেরামতি চলাকালীন ভেঙে পড়ল সিমেন্টের চাঙড়। মঙ্গলবার, ভরা মঙ্গলাহাট চলাকালীন এই ঘটনায় আহত হয়েছে ন’বছরের এক বালিকা। রক্তাক্ত অবস্থায় হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে হাওড়া সিটি পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চাঙড়টি সরাসরি মেয়েটির মাথায় না পড়ায় সে প্রাণে বেঁচে গিয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ২১ অগস্ট ঠিক একই ভাবে সেতুর উপর থেকে মহাত্মা গান্ধী রোডের উপরে ভেঙে পড়েছিল চাঙড়। সে বার কেউ হতাহত না হলেও সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা যে তার পরেও সচেতন হয়নি, এ দিনের ঘটনাই তার প্রমাণ।

Advertisement

মাস পেরোলেই দুর্গাপুজো। তাই এ দিন বঙ্কিম সেতুর নীচে বসা মঙ্গলাহাটে সকাল থেকেই ছিল ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। এই হাট থেকেই পাইকারি দরে জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যান গ্রাম বা মফস্‌সলের দোকানিরা। এ দিন এমনই এক দোকানি গোপালচন্দ্র মাঝি পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থেকে স্ত্রী ও ন’বছরের মেয়ে রনিতা মাঝিকে নিয়ে মঙ্গলাহাটে এসেছিলেন। পুলিশ জানায়, ওই পরিবারটি যখন বঙ্কিম সেতুর নীচে রামগোপাল মঞ্চের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল, তখনই সেতুর উপর থেকে কেব্‌ল ডাক্টের একটি স্ল্যাব ভেঙে পড়ে রনিতার উপরে। এই ঘটনায় তার মাথায় চোট লাগলেও চাঙড়টি সরাসরি মাথায় ভেঙে পড়েনি। তবে ঘটনার পরেই দেখা যায়, মেয়েটির মাথা কেটে রক্ত বেরোচ্ছে। রাস্তায় বসেই যন্ত্রণায় কাঁদতে শুরু করে সে। ওই দৃশ্য দেখে তার মা-বাবাও চিৎকার করে ওঠেন। ঘটনাস্থলে থাকা অন্য ক্রেতা-বিক্রেতারা সঙ্গে সঙ্গে সামনের ট্র্যাফিক পুলিশের কিয়স্কে খবর দেন। হাওড়া ট্র্যাফিক গার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক পুলিশকর্তা নিজে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে বালিকাটিকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান।

ট্র্যাফিকের ওই পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘স্ল্যাবের ছুঁচলো অংশটি মেয়েটির মাথায় সোজাসুজি পড়েনি। পাশ ঘেঁষে পড়েছে। তাই সামান্য কেটে রক্ত বেরিয়েছে। তবে ভয়ানক ঘটনা ঘটে যেতে পারত। আমরা কেএমডিএ-কে আগেই পইপই করে বলেছিলাম, সুরক্ষার সব রকম ব্যবস্থা করে মেরামতির কাজ শুরু করতে। বিশেষ করে, সেতুর যে অংশে মেরামতি হচ্ছে, তার নীচে তারের জাল দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তা দেওয়া হয়নি।’’

দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জীর্ণ হয়ে পড়া হাওড়ার এই গুরুত্বপূর্ণ উড়ালপুলটির একটি বড় অংশ দিয়ে গিয়েছে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের লাইন। বাকি অংশ হাওড়া গার্লস কলেজের গা ঘেঁষে রামগোপাল মঞ্চ ও হাওড়া পুরসভার পাশ দিয়ে গিয়েছে বঙ্গবাসী মোড় পর্যন্ত। এই পুরো অংশটির নীচ দিয়ে যেমন যানবাহন চলে, তেমনই প্রতি মঙ্গলবার হাট বসে। হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ অফিসার বলেন, ‘‘সেই কারণেই যে সংস্থাই সেতুর মেরামতি করুক, তাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।’’

এ দিনের চাঙড় ভেঙে পড়ার পরিণাম যে মারাত্মক হতে পারত, তা মানছেন সেতুর দায়িত্বপ্রাপ্ত কেএমডিএ-র এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার। তিনি বলেন, ‘‘আগের ঘটনাটির পরেই সদর দফতর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কাজ করার সময়ে নীচে জাল পেতে নিতে হবে। কিন্তু তা কেন করা হয়নি, তা আমরা তদন্ত করে দেখব। প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement