— প্রতীকী চিত্র।
১১ বছর আগে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ’ (জেএমবি)-এর অস্তিত্ব সামনে এসেছিল। তার পরে পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক রাজ্যে জেএমবি জঙ্গিদের গতিবিধি সামনে এসেছে। কিন্তু গত কয়েক দিনে অসম এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ যে ধরপাকড় করেছে, তার পরে গোয়েন্দা মহলেই প্রশ্ন উঠেছে, জেএমবি-র তৈরি করা ‘জমি দখল করেই’ কি বেড়ে উঠেছে আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি)? জেএমবি-র বদলে এ দেশে এবিটি-র সংগঠন বিস্তারের পিছনে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর হাত থাকতে পারে বলেও দাবি করছেন গোয়েন্দাদের একাংশ।
শুধু বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ তৈরি হবে, নাকি বৃহত্তর পাকিস্তানের আদর্শে এগোনো হবে— তা নিয়েই একদা বিরোধ বেধেছিল জেএমবি-র অন্দরে। যার ফলে পাকপন্থীরা জেএমবি থেকে বেরিয়ে ‘নব্য জেএমবি’ তৈরি করে যার পোশাকি নাম হয় এবিটি। গোয়েন্দা মহলের খবর, সাবেক জেএমবি নেতারা ধীরে ধীরে জমি হারাতে থাকেন এবং ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবিটি। এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, ‘‘সম্প্রতি পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে এবিটি-র সংগঠনের পাশাপাশি পাক গুপ্তচর সংস্থার আইএসআই-এর সক্রিয়তা সামনে এসেছে। তা থেকেই স্পষ্ট, এবিটি-র সাহায্যে পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে জেহাদি কার্যকলাপ শুরু আসতে চাইছেন পাক গোয়েন্দারা।’’
কেন্দ্র এবং রাজ্যের গোয়েন্দা অফিসারেরা বলছেন, শুক্রবার অসম পুলিশ ধুবুড়ি থেকে শাহিনুর ইসলাম নামে এক এবিটি সদস্যকে গ্রেফতার করে। তার ঘরে তল্লাশি চালিয়ে বিভিন্ন নথির সঙ্গে নাজিবুল্লা হাক্কানির লেখা বই মিলেছে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরে বিভিন্ন খারিজি (বেআইনি) মাদ্রাসায় হানা দিয়ে হাক্কানির বই পাওয়া গিয়েছিল। কিশোর এবং তরুণদের মাথায় জঙ্গি মতাদর্শ গেঁথে দেওয়ার জন্য হাক্কানির বই ছিল জেএমবি-র হাতিয়ার। আরবি ভাষায় লেখা বিভিন্ন জেহাদি বই বাংলায় অনুবাদ করত হাক্কানি। ২০২০ সালের অক্টোবরে শেষমেশ কলকাতা পুলিশের এসটিএফের জালে পড়ে সে। আপাতত সে জেলবন্দি। গোয়েন্দা অফিসারদের মতে, শাহিনুর একসময় জেএমবি-র সঙ্গে ছিল। সেই সূত্রেই হাক্কানির বই কাছে রেখেছিল সে। সাবেক জেএমবি নেতারা দুর্বল হয়ে পড়ায় সে এবিটি-তে যোগ দেয়। এক গোয়েন্দা অফিসার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত জুনে চেন্নাই থেকে গ্রেফতার হয়েছিল এবিটি-র শাহাদাত মডিউলের চাঁই আনোয়ার খান। সে-ও এক সময় জেএমবি-র সদস্য ছিল। পরে শিবির বদলে এবিটি-তে যুক্ত হয়। সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া আব্বাস আলিও একই ভাবে জেএমবি থেকে এবিটি-তে গিয়েছে।
ইদানীং যে সব খারিজি মাদ্রাসার কথা সামনে এসেছে, তা জেএমবি-র জমিতে এবিটি-র চাষ করার উদাহরণ বলেও দাবি করছেন গোয়েন্দারা। তাঁরা বলছেন, গ্রামেগঞ্জে বেআইনি মাদ্রাসা খুলে পড়াশোনার আড়ালে জেহাদি প্রশিক্ষণ দেওয়ার ছক ছিল জেএমবি-র। এ বার দেখা যাচ্ছে, সেই সব মাদ্রাসায় এবিটি-র লোকেরা নিজেদের সংগঠন বাড়াতে চাইছে। গোয়েন্দা সূত্রেরবক্তব্য, জেএমবি-র চাঁইরা অনেকেই ধরা পড়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন তল্লাটে যে সব জেএমবি সহমর্মী ছিল, তারা পাততাড়ি গুটিয়ে নেয়। সাময়িক ভাবে মাদ্রাসা শিকেয় উঠলেও সেই লোকজন রয়েই গিয়েছিল। এক গোয়েন্দাকর্তার মন্তব্য, ‘‘দেখা যাচ্ছে, তাদের নিয়েই সংগঠন বাড়াচ্ছে এবিটি। বলা যায়, জেএমবি-র জমিতে বেড়ে উঠেছে এবিটি।’’
জেএমবি এবং এবিটি-র কার্যক লাপে পার্থক্য আছে বলেও জানিয়েছেন শীর্ষ গোয়েন্দাকর্তাদের কয়েক জন। তাঁদের মতে, ভারতে সংগঠন তৈরি করলেও জেএমবি-র মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এবিটি-র লক্ষ্য ভারতে নাশকতা ঘটানো। অসমে যারা ধরা পড়েছে, তাদেরও মূল উদ্দেশ্য ছিল সে রাজ্যে নাশকতামূলক কাজকর্ম করা। অসম পুলিশ ধৃতদের জেরা করে প্রচুর অস্ত্রও উদ্ধার করেছে। ২০১৮ সালে বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণের সঙ্গেও এবিটি (তখনও নব্য জেএমবি নামেই বেশি পরিচিত ছিল) যুক্ত ছিল। তাই এবিটি-কে আরও বেশি করে পাকিস্তান মদত দিচ্ছে বলেও দাবি করছেন গোয়েন্দারা।