Hanskhali

Hanskhali Gang Rape and Murder Case: বন্দুক ঠেকিয়ে দেহ তুলে নিয়ে গিয়ে পোড়ানো হয়, হাঁসখালি-কাণ্ডে নয়া দাবি ধর্ষিতার পরিবারের

তার পরেই বিজেপির যুবমোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন। সকালে এবিভিপি-র কিছু লোকজন মৃতার বাড়িতে ও শ্মশানে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন।

Advertisement
সুস্মিত হালদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২২ ০৬:০৮
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

যত দিন গড়াচ্ছে, নানা রকম নতুন তথ্য উঠে আসছে নদিয়ায় কিশোরীর ধর্ষণ-মৃত্যুর মামলার তদন্তে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরও চলছে।

মঙ্গলবারই এই মামলার তদন্তভার সিবিআই-কে দিয়েছিল হাই কোর্ট। ইতিমধ্যে জেলা পুলিশ তদন্ত থেকে সরে দাঁড়ানোয় বুধবার নতুন করে আর কেউ গ্রেফতারও হয়নি।

এ দিন কিশোরীর পরিবারের তরফে নতুন কিছু তথ্য সামনে ‌আনা হয়েছে। এ দিন বিকালে মৃতার বাবা অভিযোগ করেন, তাঁর বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে মেয়ের মৃতদেহ তুলে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মৃতার জেঠতুতো দাদার (এলাকায় বিজেপি কর্মী বলে পরিচিত) অভিযোগ, হুমকি চলতে থাকায় ভয়ে দেহটি মাদুরে জড়িয়ে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, এই ‘তথ্য’ তাঁরা আগে জানাননি কেন? কেনই বা এ দিন পর্যন্ত সোহেলের বাবা, স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য সমরেন্দু গয়ালি বা আর কারও নামে হুমকি দেওয়া বা ভয় দেখানোর লিখিত অভিযোগ জানানো হয়নি? কিশোরীর জেঠতুতো দাদা বলেন, “এত দিন খুব ভয়ে ছিলাম আমরা। সিবিআই তদন্ত করবে জেনে এখন সাহস পাচ্ছি।”

এ দিন গ্রামে গিয়ে পরিবারটির সঙ্গে দেখা করেন শান্তনু ঠাকুর-সহ বিজেপির একাধিক নেতা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী দাবি করেন, ‘‘বাংলা যেন ক্রমশ ধর্ষকদের মৃগয়াক্ষেত্র হয়ে উঠেছে! মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনে ধর্ষকেরা আরও উৎসাহিত বোধ করছে।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘গণধর্ষণ, খুন, প্রমাণ লোপাটের জন্য মৃতদেহ পুড়িয়ে দেওয়া— এই যা চলছে, মুখ্যমন্ত্রী তার পাশে দাঁড়াচ্ছেন! নির্যাতিতাদের পাশে তিনি নেই। মেয়েদের নিরাপত্তা দুর্ভাগ্যজনক ও ভয়ঙ্কর অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে।’’ হাজরা মোড়ে বিক্ষোভ-সভা থেকে একই কথা বলেছেন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেতৃত্ব। ‘কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যে’র জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার দাবিও তোলা হয়েছে। ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিয়ে হবে কী, যেখানে লক্ষ্মীরা নিরাপদ নয়’— এই প্ল্যাকার্ড নিয়ে কলকাতা বিমানবন্দরের ১ নম্বর গেটের কাছে বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছে আম আদমি পার্টি (আপ)। তৃণমূলের মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, "ঘটনা সামনে আসার পর পুলিশ পদক্ষেপ করেছে। তারপর সিবিআই তদন্তে রাজ্য সরকার সহযোগিতা করছে। তবে এই ঘটনা যেমন নিন্দনীয় এ নিয়ে রাজনীতি করাও নিন্দনীয়।"

গত ৫ এপ্রিল ভোরে মেয়েটির মৃত্যু হয়েছিল। এর পরে দিন চারেক কেটে গেলেও তার পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ করা হয়নি। শেষে গত ৯ এপ্রিল, শনিবার রাতে ‘চাইল্ড লাইন’-এর সদস্যদের সঙ্গে থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন মৃতার বাবা। ওই রাতেই মূল অভিযুক্ত সোহেল ওরফে ব্রজ গয়ালিকে আটক করে পুলিশ। পরের দিন, রবিবার তাকে গ্রেফতার করে গণধর্ষণের মামলা দিয়ে আদালতে হাজির করানো হয়। মঙ্গলবার রাতে সোহেলের মামাতো ভাই প্রভাকর পোদ্দারকেও একই অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা দু’জনেই বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশের হেফাজতে ছিল। তবে আর এক জন যুবকের উপস্থিতির কথা জানা গেলেও সে গ্রেফতার হয়নি। তবে এ দিন রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার সায়ক দাস এই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই কিশোরীর সঙ্গে গত ছ’মাস যাবৎ সোহেলের সম্পর্ক ছিল। গত ৪ এপ্রিল নিজের জন্মদিনে সোহেল তাকে বাড়িতে ডাকে। প্রভাকর ছাড়াও সোহেলের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুও সেখানে উপস্থিত ছিল। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, সেই ‘বার্থ-ডে পার্টি’-তে চার জনই মদ্যপান করে। তার পর তিন যুবক একে-একে কিশোরীটিকে ধর্ষণ করে। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথেই মেয়েটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এলাকারই দুই যুবক ও এক তরুণী রাস্তা থেকে উদ্ধার করে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেন। কিশোরীর মা আগেই জানিয়েছেন, মাঝরাতে মেয়ের পেটে খুব যন্ত্রণা হওয়ায় তিনি কাছেই এক গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে ওষুধ আনতে যান। ভোর ৪টে নাগাদ ফিরে এসে দেখেন, মেয়ে মারা গিয়েছে। মেয়েটির বাবা তখনও কিছু জানতেন না।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, সকালে গ্রামের শ্মশানে মেয়েটিকে দাহ করা হয়। অনুমোদনহীন ওই শ্মশানে দাহ করতে গেলে ডাক্তারের দেওয়া ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ লাগে না। ওই কিশোরীর ক্ষেত্রেও তা ছিল না, ময়নাতদন্ত করার প্রশ্নও ওঠেনি। তার বাবা জানিয়েছিলেন, কিছু আত্মীয়-পড়শিকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে তাঁরা দেহ দাহ করেন। সে দিন শ্মশানে হাজির থাকা তাঁদের এক প্রতিবেশীও একই কথা জানিয়েছিলেন। স্থানীয় একটি সূত্রের দাবি, আত্মীয়-পড়শি মিলিয়ে ১৯ জন শ্মশানে উপস্থিত ছিলেন। সকালে সাড়ে ৭টা নাগাদ কিশোরীর বাবা তার মুখাগ্নি করেন।

বুধবার রাত থেকেই একটি অডিয়ো ক্লিপ সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাতে এক জনকে ফোনে বলতে শোনা যায় যে ‘দীপঙ্কর’ নামে কেউ একটি মেয়ের সঙ্গে সহবাসের কথা বন্ধুমহলে জানিয়েছিল। তার জেরে ব্রজর বদনাম হয়েছে। তবে ওই ক্লিপের সত্যতা যাচাই করা যায়নি। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, এই নামে কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় বলে এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে।

ধৃত প্রভাকরের বাড়ির লোক এ দিন দাবি করেন, তাঁদেরই পাড়ারই এক যুবক সোহেলের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু। সে ওই জন্মদিনের পার্টিতে উপস্থিত ছিল। এ দিন দুপুরে নিজের বাড়িতে দাঁড়িয়ে প্রভাকরের বাবা দিলীপ পোদ্দার দাবি করেন, “বাড়িতে কাজ করা এক দিনমজুরের জন্য বিড়ি কিনতে গিয়েছিল আমার ছোট ছেলে প্রভাকর। সোহেলদের বাড়ির সামনে দিয়েই দোকানে যেতে হয়। প্রভাকর দেখে, ওদের কলতলায় সোহেলের ওই বন্ধু বমি করছে। সে গিয়ে ছেলেটির চোখে-মুখে জল দিয়ে বিড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। ওদের ঘরের ভিতরেই সে ঢোকেনি।” তবে এলাকায় একটি মারপিটের ঘটনায় মাস কয়েক আগে প্রভাকর গ্রেফতার হয়েছিল বলেও তিনি জানিয়েছেন। এ দিন দুপুরে সোহেলের সেই ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তালা ঝুলছে। প্রতিবেশীরা জানান, সোহেল গ্রেফতার হতেই তারা সকলে বাড়িতে তালা দিয়ে কোথাও চলে গিয়েছে।

সন্ধ্যায় মতুয়া পরিবারটির সঙ্গে দেখা করতে আসেন বিজেপির মতুয়া নেতা তথা সাংসদ শান্তনু ঠাকুর ও বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর। পরে শান্তনু দাবি করেন, “হুমকি দিয়ে রাতেই মেয়েটিকে বাঁশে বেঁধে শ্মশানে নিয়ে গিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে।” মতুয়া সম্প্রদায়ের উপরে নির্যাতন চলছে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগও চান তিনি। বুধবার বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী দেখা করে যাওয়ার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মৃতার মা। এ দিন সকালে স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক আশিস বিশ্বাস মৃতার বাবা-মাকে বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে একপ্রস্ত চিকিৎসার পরে বিকালে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তার পরেই বিজেপির যুবমোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন। সকালে এবিভিপি-র কিছু লোকজন মৃতার বাড়িতে ও শ্মশানে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন।

Advertisement
আরও পড়ুন
Advertisement