Firhad Hakim Rekha Patra

রেখা পাত্র সম্পর্কে মন্তব্য: বিতর্কের মুখে প্রকাশ্যেই দুঃখপ্রকাশ করতে হল মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে

বসিরহাটের হাড়োয়া কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে আগামী ১৩ নভেম্বর। বুধবার তারই প্রচারে গিয়েছিলেন ফিরহাদ। সেখানে তাঁর একটি মন্তব্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। থানায় অভিযোগ করেন রেখা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:১২
(বাঁ দিকে) সন্দেশখালির বিজেপি নেত্রী রেখা পাত্র। রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) সন্দেশখালির বিজেপি নেত্রী রেখা পাত্র। রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

সন্দেশখালির বিজেপি নেত্রী রেখা পাত্রের উদ্দেশে কুমন্তব্যের অভিযোগ প্রসঙ্গে দুঃখপ্রকাশ করলেন তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার সন্দেশখালি থানায় অভিযোগ করেছিলেন রেখা। সন্দেশখালির রাস্তায় ফিরহাদের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা। তার পর শুক্রবার কলকাতায় নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন মেয়র। জানালেন, কোনও মহিলার উদ্দেশে নয়, ওই মন্তব্য তিনি করেছিলেন বিজেপির হেরে যাওয়া প্রার্থীকে নিয়ে। তবু রেখার তাতে খারাপ লেগে থাকলে তিনি দুঃখিত।

Advertisement

বসিরহাটের হাড়োয়া কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে আগামী ১৩ নভেম্বর। বুধবার তারই প্রচারে গিয়েছিলেন ফিরহাদ। সন্দেশখালির প্রসঙ্গ উঠলে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং লোকসভায় সেখানকার বিজেপি প্রার্থী রেখার উদ্দেশে কিছু মন্তব্য করেন, যা আপত্তিকর বলে দাবি করেছে বিজেপি। ওই মন্তব্যের পর থেকেই শুরু হয় বিতর্ক। অভিযোগ, শুধু রেখা নন, সন্দেশখালির সমস্ত মহিলাকেই অপমান করা হয়েছে ওই মন্তব্যের মাধ্যমে। সেই অভিযোগ উড়িয়ে নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, ‘‘নারীদের আমি মাতৃরূপে দেখি। ‘হেরে ভূত’, ‘হেরো মাল’ ইত্যাদি শব্দবন্ধগুলি ভোটের প্রার্থীদের উদ্দেশে, বিশেষত বিজেপির উদ্দেশে বলা। কোনও মহিলাকে নিয়ে এ সব আমি বলিনি। বরং রেখা পাত্রকে আমি ভদ্রমহিলা বলেই সম্বোধন করেছিলাম।’’

তবে নিজের মন্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন ববি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার কথায় ওঁর (রেখার) যদি খারাপ লেগে থাকে, আমি অত্যন্ত দুঃখিত। কোনও নারীকে অসম্মান করার কথা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারি না। আমার নেত্রী নারী, মা নারী, স্ত্রী, কন্যা, নাতনিরাও নারী। নারীদের সম্মান করি বলেই বাংলায় আমরা দুর্গাপুজো, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো, সরস্বতী পুজো করি। নারীদের অসম্মান করা আমাদের সংস্কৃতিতে নেই।’’

কী বলেছিলেন ফিরহাদ?

হাড়োয়া উপনির্বাচনের প্রচারে গিয়ে সন্দেশখালির প্রসঙ্গ উঠলে তিনি বলেন, ‘‘সন্দেশখালিকে কলঙ্কিত করেছে বিজেপি, সন্দেশখালির মানুষের নামে কুৎসা রটিয়েছে, দেশের কাছে সন্দেশখালি নিয়ে ভুল বার্তা দিয়েছে। এখানকার মেয়েদেরও বদনাম হয়েছে। কিছু দিন আগে আমার সন্দেশখালির এক বন্ধুর মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছিল ক্যানিংয়ে। কিন্তু ছেলের বাড়ি থেকে বিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়। বলে, সন্দেশখালি থেকে মেয়ে আনলে পাড়ার লোকে বলবে, সে মেয়ে পবিত্র নয়।’’ এর পরে রেখার উদ্দেশে একটি শব্দ প্রয়োগ করেন ফিরহাদ, যা আপত্তিকর বলে দাবি বিজেপির। ওই সভা থেকে ফিরহাদ আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রীকেও।

এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রেখার নেতৃত্বে সন্দেশখালিতে বিজেপির মহিলা কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল করেই থানায় যান তাঁরা। রেখা বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যের মন্ত্রী যে ভাষায় দেশের প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন, সন্দেশখালির মা-বোনেদের যে ভাষায় আক্রমণ করেছেন, তার বিরুদ্ধে আমরা থানায় অভিযোগ জমা দিতে এসেছি। মন্ত্রীরাই যদি এই ধরনের ভাষা প্রয়োগ করেন, তা হলে আমরা কোন রাজ্যে বাস করছি? এর জন্য মুখ্যমন্ত্রীই দায়ী। আমাকে উদ্দেশ্য করে নোংরা ভাষা ব্যবহার করেছেন ফিরহাদ। তা আমরা মুখে প্রকাশ করতে পারব না। লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। আমরা ওঁর পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি।’’

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রেখাকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। তৃণমূলের হাজি নুরুল ইসলামের কাছে কয়েক লক্ষ ভোটে হারেন তিনি। কিছু দিন আগে হাজি নুরুলের মৃত্যু হয়েছে। সাংসদ হওয়ার আগে তিনি হাড়োয়ার বিধায়ক ছিলেন। তাঁর শূন্যস্থান পূরণের জন্য সেখানে উপনির্বাচন হচ্ছে। সেখানে প্রচার করতে গিয়েই বিতর্কে জড়িয়েছেন ফিরহাদ, যার জন্য তাঁকে ক্ষমা পর্যন্ত চাইতে হল।

আরও পড়ুন
Advertisement